ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক অবরোধ

রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবি প্রাইমারির দফতরি প্রহরীদের

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ২৫ আগস্ট ২০২০

রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবি প্রাইমারির দফতরি প্রহরীদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘চব্বিশ ঘণ্টা কাজ নয়, রাজস্ব খাতে স্থানান্তর চাই’ এমন দাবি তুলে সোমবার রাজধানীর মিরপুরে টানা সাড়ে ৫ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক হাজার দফতরি কাম নৈশ প্রহরী। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে সকাল ১০টা থেকে সমাবেশ শুরু করেন তারা। তবে মহাপরিচালকের আশ^াসে তারা কর্মসূচী ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি পূরণের আল্টিমেটাম দিয়ে কর্মসূচী স্থগিত করেছেন। একই সঙ্গে ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যনারে কর্মচারীদের সবগুলো সংগঠন একসঙ্গে কর্মসূচী পালন করে। দাবির বিষয়ে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সেলিম পারভেজ এবং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মচারী ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ শামীম রেজা জানান, দফতরি কাম প্রহরী পদটি রাজস্বখাতে স্থানান্তর, কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, বেতন বৈষম্য নিরসন, বোনাস প্রদান এবং কাজের ধরন নির্ধারণসহ হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন চেয়ে আন্দোলন করছি আমরা। সেলিম পারভেজ বলেন, একটানা ২৪ ঘণ্টা কোন মানুষ কাজ করতে পারে না, সব কর্মচারীর মতো আমাদের ডিউটির সময় সুনির্দিষ্ট হতে হবে। আমাদের পদটি রাজস্ব খাতে নিতে হবে। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী আমাদের দাবি মানতে হবে। কর্মসূচীতে আরও ছিলেন মোঃ নাছির উদ্দিন, আরমান হোসেন, সাধন কান্ত বাড়ৈ, মিজানুর রহমান, মজিবুর রহমান, মোহন মিয়া, শফিকুল ইসলাম, মোঃ বাবর, মোঃ মিঠুন, মোঃ রিয়াজ শেখ প্রমুখ। হাইকোর্টের নির্দেশনা বিষয়ে সেলিম রেজা জানান, হাইকোর্ট ৬ মাসের মধ্যে আমাদের রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেয়। আর কোন কর্মচারীর ২০ ঘণ্টা ডিউটি হতে পারে না বিবেচনায় কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করতে নির্দেশ দেয় সরকারকে। কিন্তু আজ অবধি তা মানা হয়নি। জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দফতরি কাম প্রহরীদের পক্ষে হাইকোর্টে রিট পিটিশর করা হয়। ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি রায়ে কর্মঘণ্টা নির্ধারণ ও রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়ে রায় দেয় হাইকোর্ট। দেড় বছরেও রায় বাস্তায়ন না হওয়ায় তরা সোমবার অধিদফতরের সামনে সমাবেশে জড়ো হন। করোনার মধ্যেই প্রথম সমাবেশ আহ্বান করা হয় গত ২০ জুলাই। সমাবেশের ডাক দিলে গত ১৬ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর মিরপুর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দেয় সমাবেশ বন্ধের জন্য। এরপর আবার ২৪ আগস্টে সমাবেশ আহ্বান করেন দফতরি কাম প্রহরীরা। এই সমাবেশ বন্ধ করতেও গত ২০ আগস্ট আবারও মিরপুর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। তবে এই চিঠির পরও সমাবেশ করার প্রস্তুতি নেন তারা। কর্মসূচী অনুযায়ী সোমবার সকাল ১০টায় দফতরি কাম নৈশ প্রহরী জড়ো হন অধিদফতরের সামনে। বন্ধ হয়ে যায় দুই পাশের রাস্তা। পুলিশ রাস্তা অবরোধ না করার অনুরোধ জানালেও তাতে ফল হয়নি। পুলিশের পক্ষ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দফতরি কাম নৈশ প্রহরীদের বুঝিয়ে সমাবেশ শেষ করার অনুরোধ জানানো হয়। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ ফসিউল্লাহ্র পক্ষে উর্ধতন কর্মকর্তা দফতরি কাম প্রহরীদের আগামী ৭ সেপ্টম্বরের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে সমাবেশ শেষ করা হয়। সেলিম পারভেজ বলেন, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর দাবির বিষয়ে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে সমাবেশ শেষ করি। তবে দাবি মেনে নেয়া না হলে আবার আন্দোলন-কর্মসূচী দেয়া হবে। আন্দোলকারী কর্মচারীরা বলছেন, আমাদের দিনে দাফতরিক কাজ ও রাতে পাহারার দায়িত্ব পালন করতে হয়। এতে করে আমরা স্ত্রী-সন্তান ও পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও দফতরিরা নানারকম সমস্যায় জর্জরিত। আমাদের কোন সাপ্তাহিক ছুটি নেই, নানাবিধ সমস্যার কারণ এবং চাকরি জাতীয়করণের জন্য ২০১৭ সালে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করি। চলতি বছরের ৩০ জুলাই আদালতের রায় আমাদের পক্ষে এলেও এ বিষয়ে অধিদফতরে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। সরকারের এক শ্রেণীর সুবিধাভোগী ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ ও প্রধানমন্ত্রীর সুনাম ক্ষুণœ করার জন্য তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে।
×