ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইউনিয়ন পর্যায়ে বাড়বে মাছের উৎপাদন

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ২৫ আগস্ট ২০২০

ইউনিয়ন পর্যায়ে বাড়বে মাছের উৎপাদন

ওয়াজেদ হীরা ॥ দেশের সব ইউনিয়ন মৎস্য চাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণের আওতায় আনতে প্রকল্পের মেয়াদ ও খরচ দু-ই বাড়ছে। প্রথম সংশোধনীতে খরচ বাড়িয়েও নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়নি প্রকল্প। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বাড়ছে ২ বছর, তেমনি আরও ১০৭ কোটি টাকা বাড়তি খরচ প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রকল্পের মূল খরচের ৪৪ ভাগ বাড়ছে দ্বিতীয় সংশোধনীতে। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবটি নিয়ে গত ১০ জুন অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সংশোধনী প্রস্তাবটি উপস্থাপনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, ইউনিয়ন পর্যায়ে টেংরা, গুলশা ও পাবদা জাতীয় মাছের চাষ ছড়িয়ে দিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। পাঁচ বছরের প্রকল্পটি যে খরচে অনুমোদিত হয়েছিল, সেই খরচে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। মেয়াদ ঠিক রেখে ২৪২ কোটি টাকার প্রথম সংশোধনীতে প্রায় ২৮ কোটি টাকা খরচ বাড়ান হয়েছিল। এবারে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ২৪২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ২০১৫ সালের মার্চ থেকে চলতি বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের শুরু থেকে গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ২১৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা, যা প্রকল্পের মোট অনুমোদিত ব্যয়ের ৭৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এ অবস্থায় এখন প্রকল্পে নতুন এলাকা অন্তর্ভুক্ত করায় বিভিন্ন অংশের ব্যয় বেড়েছে। তাছাড়া নানা কারণে গত জুন মাসে মেয়াদ শেষ হলেও এর মধ্যে বাস্তবায়ন শেষ না হওয়ায় ফের মেয়াদ বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পটি সংশোধন করতে হচ্ছে। প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, প্রকল্পের যে কাজ তাতে দেশ ও জাতীর জন্য প্রয়োজন মনে করা হয়েছে। প্রথমে যে পরিমাণ ইউনিয়ন নেয়া হলেও পরবর্তীতে মনে হয়েছে এই প্রশিক্ষণ সব ইউনিয়নের চাষীদের দরকার। এছাড়াও অনেক প্রযুক্তি উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমানে টেংরা, পাবদা চাষ হচ্ছে। ফলে নানা বিবেচনায় সংশোধনীর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কেননা আমার জনবল রেডি আছে নতুন জনবল লাগবে না। এর আগে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় বাড়ান হয় ২৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। তাতে প্রকল্পের ব্যয় ২৭০ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। এরপরও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শেষ না হওয়ায় এখন আরও ১০৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ৩৭৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ মূল প্রকল্প থেকে ব্যয় বাড়ছে প্রায় ৪৪ শতাংশ, প্রথম সংশোধনী থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ। আর মেয়াদ বাড়ছে দুই বছর। এদিকে, এই প্রকল্পের আওতায় মৎস্য চাষ প্রযুক্তি শিখতে ১৪ কর্মকর্তার বিদেশ সফরের সংস্থান রাখা হয়েছে। জনপ্রতি ৪ লাখ টাকা খরচ হিসেবে এই খাতে ব্যয় অর্ধ কোটি টাকারও বেশি ৫৬ লাখ। জানা গেছে, প্রকল্পটিতে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বাবদ আরও অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে পরিকল্পনা কমিশন সে বরাদ্দ প্রস্তাবনায় ভেটো দেয়। তবে ১৪ কর্মকর্তার মাছ চাষ ও প্রযুক্তি শেখার জন্য বিদেশ সফরের অংশটুকু বাদ দেয়া যায়নি। তবে সংশোধনীতে বিদেশ সফরের একটি অংশ পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির মুখে বাদ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৪ কর্মকর্তার বিদেশ সফরের অংশটিও বাদ দেয়া উচিত ছিল একাধিক অর্থনীতিবিদ মনে করেন। কেননা, সরকার অর্থ সঙ্কটের কারণে উন্নয়ন প্রকল্পে কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় প্রতিহত করা উচিত বলেও মত অর্থনীতি সংশ্লিষ্টদের। তবে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, আমাদের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর আগেই হয়ে গেছে। তবে সংশোধনী করতে গেলে সেটি রাখতে হয় তাই রাখা হয়েছে। মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কাজী শাসম আফরোজের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা অনেক আগেই প্রস্তাবটি পাঠিয়েছি। ডিপিপি সামনে না থাকায় প্রকল্পের বিস্তারিত জানাতে পারেননি। তবে অনাকাক্সিক্ষত খরচ ও বিদেশ সফর নিয়ে বলেন, আমাদের সব ধরনের অনাকাক্সিক্ষত খরচে নিরুৎসাহিত করি, বিদেশ সফর টোটালি বন্ধ। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, মৎস্য অধিদফতর গত কয়েকবছর ধরে মাছের উৎপাদন বাড়াতে তৃণমূল পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। এজন্য ‘ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ ও প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৯ সালের জুন থেকে ২০১৪ সালের জুন মেয়াদে এটি বাস্তবায়িত হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) প্রকল্পটি মূল্যায়ন করে দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়নের সুপারিশ করে। সে অনুযায়ী দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়, যা এখনও বাস্তবায়নের কাজ চলছে। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের আওতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে গুলশা, পাবদা ও টেংরা মাছ চাষের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার জনপ্রিয় করা হয়েছে এবং তাতে উৎপাদন বাড়ছে। তিন হাজার ইউনিয়নে প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের মধ্যে এই কার্যক্রম সফলতা পেয়েছে। ফলে দেশের সবগুলো ইউনিয়নে এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন। এ কারণে আট বিভাগের ৪ হাজার ৩০০টি ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে দ্বিতীয় সংশোধনীতে। প্রকল্পের আওতায় ২২ হাজার ৩৯১টি প্রদর্শনী পুকুর ও সিবিজি প্রদর্শনী স্থাপন, প্রকল্প এলাকায় ১ হাজার ১০৯টি সিবিজি গঠন, মৎস্য প্রযুক্তি বিষয়ক যন্ত্রপাতি (৬১৫টি এ্যারোটর ও ১ হাজার ৪২৫টি ডিজিটাল ওয়াটার টেস্টিং কিট) সংগ্রহ ও দফতরের জন্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজনও করা হবে প্রকল্প এলাকায়। পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ সদস্য (সচিব) মোঃ জাকির হোসেন আকন্দ বলেছেন, প্রস্তাবিত সংশোধিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে মাছের উৎপাদন বাড়বে। এতে জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বাড়বে। প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষিত, কারিগরি জনবল তৈরি হবে, যেটি টেকসই মৎস্য উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নকেও ত্বরান্বিত করবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনযোগ্য বলে মত দেয়া হয়েছে।
×