ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট চালু হচ্ছে

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ২৫ আগস্ট ২০২০

পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট চালু হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু করবে আগামী শুক্রবার থেকে। মার্চ থেকে বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে। এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের দুটি সমান ৬৬০ মেগাওয়াটের ইউনিট রয়েছে। তবে সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত না হওয়াতে অর্ধেক ক্ষমতায় চলতে হবে কেন্দ্রকে। কেন্দ্র চালু হলেও গ্রিডে বিদ্যুত সরবরাহ করা সম্ভব হবে না বলে জানা গেছে। পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র পুরো মাত্রায় চালালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যাবে। কিন্তু এই বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে ঢাকায় আনতে হলে যে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা দরকার ছিল তা এখনও শেষ করতে পারেনি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)। ফলে বিদ্যুত কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট অর্ধেক লোডে চলানো হবে। বিদ্যুত কেন্দ্রের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান সূত্র বলছে, আমরা নিজেরা বিদ্যুত কেন্দ্রের মধ্যে একটি সাবস্টেশন নির্মাণ করে পটুয়াখালী, বরগুনা এবং বরিশাল এলাকায় কিছুটা বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করছি। তবে গোপালগঞ্জ সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুত কেন্দ্রের ঢাকা পর্যন্ত লাইন নির্মাণের কাজ চলছে খুব ধীর গতিতে। পিজিসিবি সূত্র বলছে, কোরিয়ান একটি কোম্পানি এই সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ পেয়েছে। তাদের সঙ্গে দেশের কয়েকটি কোম্পানি কাজ করছে। করোনার কারণে লাইন নির্মাণের কাজ রেখে চলে যায় কোরিয়ান কোম্পানির কর্মীরা। এরপর বাংলাদেশের শ্রমিকরা কোন মতে কাজ করলেও উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। আগামী বছরের শেষ নাগাদ এই লাইন চালু হতে পারে। ফলে প্রায় এক বছরের মতো সময় বিদ্যুত কেন্দ্রটিকে অর্ধেক লোডে চলতে হবে। পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা জানান, আমরা প্রতিটি ইউনিট মোট ক্ষমতার অর্ধেক করে চালাব। এটি না হলে আমাদের যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাবে। কেন্দ্রটি পুরো মাত্রায় চালানো সম্ভব না হওয়াতে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এই ক্ষতি বহন করতে হবে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি)। পিজিসিবি গোপালগঞ্জে একটি বিদ্যুত হাব তৈরি করছে। এখানে একটি বড় সাবস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। পায়রা, রামপাল এবং রূপপুর কেন্দ্রের বিদ্যুত এই সাবস্টেশনে আনা হবে। এরপর সেখান থেকে এই বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। গোপালগঞ্জে সাবস্টেশন এবং গোপালগঞ্জ-ঢাকা সঞ্চালন লাইন দুটি নির্মাণেই পিছিয়ে রয়েছে পিজিসিবি। এজন্য পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র চালু হলেও সেই বিদ্যুত আশপাশের জেলাগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু সেখানেও পর্যাপ্ত চাহিদা নেই। একটি কেন্দ্র নির্মাণ হলে আর বিদ্যুত সঞ্চালনের জন্য অবকাঠামো তৈরি করা সম্ভব হলো না। এটি নিয়ে সমালোচনা রয়েছে পিজিসিবির বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে পিজিসিবিতে যারা ঠিকাদার হিসেবে কাজ পায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা নিজেরা কাজ না করে দ্বিতীয় পক্ষের কাছে কাজ বিক্রি করে দেয়। এভাবে সেই দ্বিতীয় পক্ষ আর তৃতীয় পক্ষ চতুর্থ পক্ষের কাছেও কাজ বিক্রি করে। ফলে বেশিরভাগ প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারে না এই কোম্পানি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিজিসিবির বদলে বিদ্যুত কেন্দ্রের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করানো উচিত। এতে কেন্দ্রের উদ্যোক্তার ওপর বাড়তি চাপ থাকে। কোনভাবে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে সঞ্চালন লাইনের কাজ না শেষ করতে পারলে সেই লোকশনে পড়বে। ফলে যে করেই হোক দুটি কাজই সে সমান তালে করবে। যদিও এর মধ্যে কোন কোন জায়গায় ছোট পরিসরের লাইন নির্মাণে এটি করা হচ্ছে। কিন্তু বড় সঞ্চালন লাইন নির্মাণের ক্ষেত্রে পিজিসিবি তাদের ক্ষমতা ছাড়তে চাইছে না। আবার ঠিকমতো কাজও করতে পারছে না। জানতে চাইলে পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শাহ আব্দুল মওলা জানান, আমাদের দ্বিতীয় ইউনিট আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর গ্রিডের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হবে। এতে দুটি ইউনিটই চালু হয়ে যাবে। তবে গ্রিডের সীমাবদ্ধতা থাকায় পুরোদমে কেন্দ্র চালানো সম্ভব হবে না। বিদ্যুত কেন্দ্রের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসিএল) সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের চালু করা এবং গ্রিডের অবস্থা সম্পর্কে বিদ্যুত বিভাগকে গত সপ্তাহে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ এবং চীনের যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুত কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। এর অর্ধেক মালিকানা বাংলদেশ এবং বাকি অর্ধেক মালিকানা চীনের রাষ্ট্রীয় কোম্পানির হাতে রয়েছে। সরকারের বৃহৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে পায়রা সবার আগে চালু হয়েছে। চীনের এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে।
×