ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইনের খসড়া নিয়ে ভিন্নমত ইসিতে

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ২৫ আগস্ট ২০২০

স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইনের খসড়া নিয়ে ভিন্নমত ইসিতে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সবার মতামতের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব মোঃ আলমগীর। সোমবার ইসির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। এদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ সংশোধন করে আইনে রূপান্তর এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিচালনার জন্য আইনের সংস্কারের জন্য ইসির পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার বিরোধিতা করেছেন ইসি মাহবুব তালুকদার। ইসির বৈঠকে তিনি এর বিরোধিতা করে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দেন। সচিব বলেন, নির্বাচন পরিচালনা আইনের খসড়া নিয়ে আলোচনার জন্য কমিশন আবারও আলোচনায় বসবে। কমিশনের বৈঠককে খসড়া চূড়ান্ত করা হলে সবার মতামতের জন্য তা ওয়েবসাইটে দেয়া হবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে কমিশন এটি চূড়ান্ত করলে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। এতে উল্লেখ করেন আরপিওকে একটি ঐতিহাসিক আইনগত দলিল এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার অনন্য স্মারক। এর সংশোধনীতে বিরোধিতা করে বলেন, এতে নির্বাচন কমিশন নখদন্তহীন বাঘ নয় বরং বিড়ালে পরিণত হবে। এর আগে সকাল ১১টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে নির্বাচন কমিশনের বৈঠক শুরু হয়। সেখানে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ আরপিও সংশোধন করে আইনে রূপান্তর এবং স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন আইন সংস্কার নিয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে শেষে ইসি সচিব সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠনের আইন হালনাগাদ করতে সরকারের পক্ষ থেকে একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে। কমিশন গঠন হলে সেখানে এই আইনে সংশোধনী নিয়েও আলোচনা করা হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন পরিচালনা আইনের খসড়া নিয়ে সোমবার কমিশন সভায় আলোচনা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আইনগুলো হালনাগাদে কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানানো হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আইনগুলোকে হালনাগাদ করতে একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব সরকারের উর্ধতন পর্যায়ে রয়েছে। ওই কমিশন গঠন হলে তখন হয়ত সেখানে সংশোধনীর বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর প্রস্তাব আসবে। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন পরিচালনা আইনের খসড়া নিয়ে ফের কমিশন বসবে। আইনের একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছিল। বৈঠকে সেটি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আগামীতে আবার কমিশন সভায় আলোচনার জন্য উত্থাপন করা হবে। আরও মতামত নিয়ে চূড়ান্ত করে ওয়েবসাইটে দেয়া হবে। রাজনৈতিক দলের নেতা ও স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরাও এতে মতামত দেবেন। তারপর সকলের মতামতের ভিত্তিতে কমিশন এটি চূড়ান্ত করলে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও পদবির নাম পরিবর্তন বিষয়ে তিনি জানান, এটা কিন্তু চূড়ান্ত নয়। যারা সংসদে আইন করবেন তারাসহ যেসব জায়গায় যাবে সেখান থেকে যে পরামর্শ আসবে তা অনুসরণ করা হবে। প্রতিশব্দ হিসেবে যেহেতু ইংরেজী শব্দ থাকছে এ কারণে মূল আইন পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই। পরিবর্তন না করলেও কোন সমস্যা হবে না উল্লেখ করেন। আইন সংশোধনে মাহবুব তালুকদারের ভিন্নমত ॥ ইসির কমিশন বৈঠকে আইন দুটি সংশোধনের বিরোধিতা করে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দিয়েছেন মাহবুব তালুকদার। এতে তিনি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নাম-পদবি পরিবর্তন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশকে আইনে প্রতিস্থাপন, প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা থেকে সরে আসার বিষয়ে ভিন্নমত দেন। তিনি বলেন, আমি তিনটি বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ প্রদান করছি। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামো, মেয়াদকাল ইত্যাদি পরিবর্তন নির্বাচন কমিশনের কর্তব্য নয়। বিশেষত স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পদ ও পদবি পরিবর্তন নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার নয়। নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন পরিচালনা আইনের যে সংস্কারের প্রস্তাব করেছে, তার সঙ্গেও একমত নই। কেবল নির্বাচন পরিচালনার জন্য ভিন্ন আইন হতে পারে না, তা সর্বজনীন হতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ রহিতপূর্বক সংশোধনসহ ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আইন, ২০২০’ প্রতিস্থাপনের প্রস্তাবে ভিন্নমত জানিয়ে বলেন, আমি এই উদ্যোগের বিরোধিতা করি। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের তৃতীয় অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’ প্রণয়ন ও জারি করেন। এটি একটি ঐতিহাসিক আইনগত দলিল, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার অনন্য স্মারক। কি কারণে বা কোন যুক্তিতে এই পরিবর্তন প্রয়োজন, তা আমার বোধগম্য নয়। তিনি প্রার্থিতা বাতিলে ইসির সরাসরি ক্ষমতার বিলোপ সাধনের প্রস্তাবের আপত্তি তুলে ধরে বলেন এটা নির্বাচন কমিশনের একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এতে নির্বাচন কমিশন নখদন্তহীন বাঘ নয়, বিড়ালে পরিণত হবে। আমি এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করছি। আমার মতে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা এককভাবে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকা আবশ্যক।
×