ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এন্টিজেন্ট টেস্টের অনুমোদন দেয়া হয়েছে ॥ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

করোনা ভ্যাকসিন আনতে সরকারের সব শাখাই তৎপর

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ২৫ আগস্ট ২০২০

করোনা ভ্যাকসিন আনতে সরকারের সব শাখাই তৎপর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে করোনা ভ্যাকসিন আনতে সরকারের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সব শাখাই তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়ত খোঁজ নিচ্ছেন। বিশ্বে ভ্যাকসিন আবিষ্কার এখন এ্যাডভান্স লেভেলে আছে। যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, আমেরিকা, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চূড়ান্ত পর্যায়ে কাজ করছে। ভ্যাকসিনগুলোর গুণগত মান যাচাই-বাছাই করেই প্রধানমন্ত্রী সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। মন্ত্রী জানান, এছাড়া করোনা শনাক্তে পিসিআর টেস্টের পাশাপাশি এন্টিজেন্ট টেস্টের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আপাতত এই টেস্ট শুধু সরকারী ল্যাবগুলোতেই করা হবে। এন্টিবডি টেস্ট অনুমোদনের এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ওয়ালটনের সহযোগিতায় তাইওয়ান এক্সটার্নাল ট্রেড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার কর্তৃক কোভিড-১৯ মোকাবেলায় মেডিক্যাল সামগ্রী হস্তান্তর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বক্তব্য রাখেন। সভায় বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মোঃ আব্দুল মান্নান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মোঃ নূর-উর-রহমান বক্তব্য রাখেন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক ও কম্পিউটার বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী লিয়াকত আলী, ঢাকার তাইওয়ান এক্সটার্নাল ট্রেড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের পরিচালক তিথমি ডব্লিউ ডি সো এবং ম্যানেজার রঞ্জন চক্রবর্তী। র‌্যাপিড টেস্ট পরীক্ষা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনায় তিন ধরনের পরীক্ষা বর্তমানে হয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছেÑপিসিআর টেস্ট, এন্টিজেন্ট টেস্ট ও র‌্যাপিড এন্টিবডি টেস্ট। এর মধ্যে র‌্যাপিড এন্টিবডি টেস্ট করার ব্যাপারে এই মুহূর্তে কোন পরিকল্পনা নেয়া হয়নি। পিসিআর টেস্টের পাশাপাশি এন্টিজেন্ট টেস্ট শুধু সরকারী ল্যাবগুলোতেই করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কোভিড মোকাবেলায় সরকারের নানা উদ্যোগ তুলে ধরে সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সফলভাবেই কোভিড-১৯ মোকাবেলা করে যাচ্ছে। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হবার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশের বিমান, নৌ এবং স্থল বন্দরগুলোতে সময়মতো স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তখন আমাদের পর্যাপ্ত মেডিক্যাল সামগ্রী ছিল না, যা ছিল তা দিয়েই আমরা পরিকল্পিতভাবে এ মহামারী মোকাবেলা শুরু করি। দেশের কোভিড স্পেশালাইজড হাসপাতাল ঘোষণা করে সুচিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এখন হাসপাতালগুলোতে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা অনেক কম। এ সকল হাসপাতালে ৬০/৭০ ভাগ সিট খালি থাকছে। এখন আমরা কোভিড স্পেশালাইজড হাসপাতালের সংখ্যা কমিয়ে সাধারণ চিকিৎসার জন্য খুলে দেয়ার চিন্তা করছি। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, এমপি বলেন, বাংলাদেশ সীমিত সম্পদ দিয়ে সঠিকভাবেই কোভিড-১৯ মোকাবেলা করছে। এখন প্রয়োজন মানুষের সচেতনতা। এ সচেতনতা সৃষ্টির জন্য দেশের প্রচার মাধ্যমগুলোর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। শুরু থেকেই দেশের প্রচার মাধ্যমগুলো দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখে আসছে। আগামীতেও এ সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে আমরা আশা করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় আমরা সফলভাবে কোভিড-১৯ মোকাবেলা করে যাচ্ছি। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ওয়ালটন স্বাস্থ্য সেবায় সরকারকে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। তাইওয়ানের এ সহযোগিতা আমাদের কাজে লাগবে। পৃথিবীর অনেক দেশ পরস্পরকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত আরও উন্নত হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকলকে চলতে হবে, এতে আমরা সকলেই নিরাপদ থাকব। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, কোভিড-১৯ সারা দুনিয়ার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ এবং সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সাধ্যের সবটুকু দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমরা দেশের ৬৪টি জেলায় বিনা মাশুলে স্বাস্থ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি। কলসেন্টার ও টেলিমেডিসিন ব্যবস্থায় নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করার সুযোগ সৃষ্টি এবং টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট অব্যাহত রাখার মাধ্যমে জীবনযাত্রা গতিশীল করার চেষ্টা করছি। করোনাকালেও গ্রামের মানুষটি পর্যন্ত উপলব্ধি করছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ না থাকলে বৈশ্বিক মহামারীর এই ক্রান্তিলগ্নে মানুষের জীবনযাত্রা বিপন্ন হতো। আজকের বাংলাদেশে প্রাথমিক স্কুলের একজন শিক্ষার্থীও ইন্টারনেট দাবি করছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালেও দেশে আট জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহার হতো এবং ব্যবহারকারী ছিল মাত্র আট লাখ। প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দিকনির্দেশনায় ডিজিটালাইজেশনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচীত হয়েছে। দেশে আজ ২১শ’ জিবিপিএস ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে এবং দেশে ১০ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। তিনি দৃঢ় আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, বাঙালী বীরের জাতি করোনা থেকেও আমরা জয়ী হব। উল্লেখ্য, তাইওয়ান এক্সটার্নাল ট্রেড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ১ লাখ সার্জিক্যাল মাস্ক, ১৬০০ এ-৯৫ মাস্ক, ২০ হাজার কাপড়ের মাস্ক, ১০ হাজার ফেস ফিল্ড, ৫০০ পিপিই, ২০০ গগলস এবং ২ সেট ভেন্টিলেটর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করে।
×