ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত

কওমি মাদ্রাসার ডিগ্রী ও মাস্টার্স পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ২৫ আগস্ট ২০২০

কওমি মাদ্রাসার ডিগ্রী ও মাস্টার্স পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যেই দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ডিগ্রী ও মাস্টার্স পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি দিয়েছে সরকার। এছাড়া এইচএসসি, অষ্টম ও পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি আরও বলেছেন, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ না কমায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সময় এখনও হয়নি। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত জানানোর সময় সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন। স্থগিত থাকা এইচএসসি এবং এবারের জেএসসি-জেডিসি এবং প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে মন্ত্রিসভায় কোন আলোচনা হয়েছে কিনা, সেই প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকরা। জবাবে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এইচএসসি ও অন্যান্য পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আলোচনা করেছে; তারা দেখবে, দেখে দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নেবে। তবে স্কুল, কলেজ এখনও খোলার মতো সময় এসেছে বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে না। পরীক্ষার বিষয়ে মন্ত্রণালয় খুব চিন্তা-ভাবনা করছেন, কীভাবে কী করা যায়। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেনও বলেছেন, সেপ্টেম্বরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার মতো পরিস্থিতি হয়নি। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দফায় দফায় বাড়িয়ে এই ছুটির মেয়াদ আপাতত রাখা হয়েছে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এর পরও স্বাভাবিক ক্লাসে ফেরার পরিবেশ হবে কিনা, সে নিশ্চয়তা নেই। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ডিগ্রী ও মাস্টার্স পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি দিয়েছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে কওমি মাদ্রাসা আপীল করেছিল, তারা উপরের লেভেলের পরীক্ষাগুলো নিয়ে নিতে চায়, এতে সরকার সম্মত হয়েছে। ওদের পরীক্ষাগুলো ডিগ্রী ও মাস্টার্স লেভেলের। জেনারেল মাদ্রাসা খুলবে না। খোলার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুবিধামতো সময়ে কওমি মাদ্রাসাগুলো এসব পরীক্ষা নিতে পারবে বলে জানান সচিব। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ছুটি চলবে বলে আপাতত ঘোষণা দেয়া আছে। তবে এরপরও স্বাভাবিক ক্লাসে ফেরার পরিবেশ হবে কিনা, সে নিশ্চয়তা নেই। এই পরিস্থিতিতে কিতাব বিভাগের কার্যক্রম চালু ও পরীক্ষা নেয়ার সুযোগ করে দিতে গত ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে কওমি মাদ্রাসাগুলো। ওইদিন সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছেও তার অনুলিপি দেয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, কওমি মাদ্রাসাগুলোকে ডিগ্রী ও মাস্টার্স পরীক্ষা নেয়ার অনুমতি দেয়া হলেও কিতাব বিভাগ চালুর অনুমতি সরকার দেয়নি। কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস (তাকমিল) সনদ এখন মাস্টার্স ডিগ্রীর (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবী) সমান মর্যাদা পাচ্ছে। ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহ আহমদ শফী, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন পর্যালোচনা কমিটির আহ্বায়ক মওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদসহ কয়েক শ’ আলেমের উপস্থিতিতে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে কওমির সনদকে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের বছর সেপ্টেম্বরে এ বিষয়ে সংসদে আইন পাস হয়। গত ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও এই মহামারীর কারণে তা আটকে আছে; অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আর পঞ্চমের সমাপনী পরীক্ষা নিজ নিজ বিদ্যালয়ে নিতে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ১৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে প্রস্তাব পাঠিয়েছে, তার কোন অগ্রগতির তথ্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানাতে পারেননি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পাঠদানের ধারাবাহিকতা রাখতে মাধ্যমিকের ক্লাস সংসদ টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছে। আর প্রাথমিকের ক্লাস সংসদ টিভির পাশাপাশি বেতারেও প্রচার করা হচ্ছে। অন্যদিকে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো করে অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছে। এইচএসসি, অষ্টম ও পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এইচএসসি, অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা জেএসসি-জেডিসি এবং পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা পিইসির বিষয়ে বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা ও মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা বিভাগ তারা মোটামুটি আলোচনা করেছে। এইচএসসি বা অন্যান্য পরীক্ষা সেটা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আলোচনা করছে। তারা দেখবে, দেখে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। সচিব (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা) রবিবারও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে স্কুল-কলেজ এখনও খোলার মতো সময় হয়েছে বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে না। কিন্তু পরীক্ষার বিষয়ে ওনারা খুব চিন্তা-ভাবনা করছেন, কীভাবে কী করা যায়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক সমাপনীর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে- সেই বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, না, এটা আমার জানা নেই।
×