ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

আন্দোলন সংগ্রামে আইভি ছিলেন সম্মুখসারির যোদ্ধা

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ২৫ আগস্ট ২০২০

আন্দোলন সংগ্রামে আইভি ছিলেন সম্মুখসারির যোদ্ধা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেছেন, আইভি রহমান দেশের প্রতিটি আন্দোলন ও সংগ্রামে সম্মুখসারির যোদ্ধা ছিলেন। আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশে আমাদের কর্মীদের সঙ্গেই তিনি বসতেন। কোন অহমিকা ছিল না। তার মতো এমন একজন চমৎকার নিরহঙ্কারী সুন্দর মানুষের এরকম মৃত্যু যেটা সত্যিই সহ্য করা যায় না। মেনে নেয়াও খুব কষ্টের। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারী বাসভবন থেকে সোমবার নিয়মিত সাপ্তাহিক মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে শহীদ আইভি রহমানের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। এ দিকে সকালে বনানী করবস্থানে শহীদ আইভি রহমানের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী সভার শুরুতে আইভি রহমানসহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত নেতাকর্মীদের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আজকের এই দিনে আওয়ামী লীগের ওই ২৪ নেতাকর্মী বিশেষত আইভি রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ও তাদের স্মরণ করছি, যারা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত হয়েছেন।’ তিনি বলেন, মহিলা আওয়ামী লীগেরও নেতা ছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান। ছাত্রজীবন থেকেই উনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আমরা দীর্ঘদিন একসঙ্গে রাজনীতি করেছি। গ্রেনেড হামলায় খুব আহত অবস্থায় আইভি রহমানকে সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৪ আগস্ট আইভি রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হচ্ছে, কারণ ২০০৪ সালের এই দিনেই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানতেও পারিনি আমাদের এই নেত্রী (আইভি রহমান) মারা গেছেন। কারণ ২১ আগস্ট ঘৃণ্য ওই গ্রেনেড হামলার পর তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে যাওয়া হয়। ২১ আগস্টের ওই গ্রেনেড হামলায় আমাদের ২৪ নেতাকর্মী প্রাণ হারান। তার মধ্যে চারজন মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী মারা যান।’ ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ওই হামলায় নিহত আরও দুইজন অজ্ঞাতনামা ছিল। তাদের লাশও কেউ নিতে আসেনি। ধারণা করা হয়, এই অজ্ঞাতনামা হয়তো আক্রমণকারী হতে পারে অথবা অন্য কেউ হতে পারে। কিন্তু আমরা এই গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নেতাকর্মীকে হারিয়েছি। এতে আমাদের আরও ৬ থেকে ৭শ’ নেতাকর্মী আহত হয়। অনেকে চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও আবার মারা যান। কারণ তারা দেহে গ্রেনেডের স্পিøন্টার বহন করছিলেন। অনেকে দেহে স্পিøন্টার নিয়ে এখনও ওভাবে বেঁচে আছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইভি রহমান দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে সম্মুখসারির যোদ্ধা ছিলেন। গ্রেনেড হামলায় যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের কথাটা আমি স্মরণ কছি। প্রত্যেক আন্দোলনে মাঠে থাকতেন উনি, একদম মানুষের সঙ্গে এবং মিটিংয়ে কর্মীদের সঙ্গে বসতেন। কোন অহমিকা তার ছিল না। তার মতো এমন একজন চমৎকার নিরহঙ্কারী মানুষের মৃত্যুকে মেনে নেয়া খুবই কষ্টের।’ তিনি নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং শোকাহত পরিবার-পরিজনের প্রতি সহমর্মিতা জানান প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের আমলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ইতিহাসের বর্বরোচিত ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমান গুরুতর আহত হন। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২৪ আগস্ট তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। শেখ হাসিনার কাছ থেকে বিএনপিকে রাজনীতি শেখার আহ্বান মতিয়ার ॥ এদিকে, আইভি রহমানের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী শেখ হাসিনার মানবিক রাজনীতি থেকে বিএনপিকে রাজনীতি শেখার আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার আইভি রহমান মৃত্যুবার্ষিকী পালন কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে মতিয়া চৌধুরী আরও বলেন, শেখ হাসিনা হত্যার রাজনীতি বন্ধ করতে চান। তার ওপর বারবার আঘাত এলেও তিনি (শেখ হাসিনা) কখনও হত্যার রাজনীতি করেননি। সেজন্যই তিনি হত্যার রাজনীতির বিরুদ্ধে অবিচল। বিএনপিকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের এই প্রবীণ নেত্রী আরও বলেন, পাপ কখনও চাপা থাকে না। তাদের (বিএনপি) পাপ বিশ্বব্যাপী প্রচার হয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার দায় বিএনপি কোনভাবেই এড়াতে পারে না। তাই রাজনীতি করতে চাইলে রাজপথে আসুন, রাজনীতি করুন। হত্যার রাজনীতি করবেন না। অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, একুশে আগস্টে যে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল, তা হলো বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও হত্যাকা-। যার কারণে দেশের সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দায় এড়াতে পারেন না। দেশবাসীও চায়, খালেদা জিয়াকেও গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বিচারের আওতায় আনা হোক, আমরাও তাই চাই। ‘একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার সঙ্গে বিএনপি জড়িত ছিল না’- দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিবৃতির নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, গ্রেনেড হামলার পর টিয়ারশেল নিক্ষেপ, আহতদের চিকিৎসা না দেয়া, সিটি করপোরেশনের গাড়ি দিয়ে আলামত ধুলে ফেলা প্রমাণ করে এর সঙ্গে ক্ষমতাসীন বিএনপি জড়িত ছিল। আর এখন মির্জা ফখরুলরা নির্লজ্জ মিথ্যাচার করছেন। এমন মিথ্যাচার বিশ্বের আর কোন রাজনীতিক করেননি। কারণ গ্রেনেড হামলাকারীরাই বলছে, এই হামলার পরিকল্পনা হাওয়া ভবনে হয়েছে। আইভি রহমান মৃত্যুবার্ষিকী পালন কমিটির সভাপতি এম এ করিমের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব লায়ন মশিউর আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডাঃ রোকেয়া সুলতানা, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু, সাংবাদিক মানিক লাল ঘোষ প্রমুখ।
×