ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রভিশন ঘাটতিতে ১১ ব্যাংক

প্রকাশিত: ২১:০৩, ২৫ আগস্ট ২০২০

প্রভিশন ঘাটতিতে ১১ ব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে ১১ ব্যাংক। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ও বেসরকারী সাতটি ব্যাংক রয়েছে। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ১০ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে কিছু ব্যাংকের প্রভিশন উদ্বৃত্ত থাকায় সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৯৯ কোটি ১১ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোন প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকের অশ্রেণীকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাবস্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা ক্যু-ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। যাতে করে খেলাপী ঋণ আদায় না হলেও ব্যাংকগুলো যাতে ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে। প্রভিশন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হলে ব্যাংকগুলো সমপরিমাণ আমানত ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোন লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। এতে ওই ব্যাংকের শেয়ারে নিরুৎসাহিত হন বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়া যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কাও থাকে। প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ঋণ অনিয়মে আলোচিত রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পর্যবেক্ষণে থাকা ব্যাংকটির ঘাটতির পরিমাণ ৩ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের ৮৯৩ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৮৮৬ কোটি টাকা। বেসরকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি ব্যাংকের ১ হাজার ২১৫ কোটি, কমার্স ব্যাংকের ৫৬৬ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১ হাজার ৬৯৭ কোটি, ঢাকা ব্যাংকের ২০৩ কোটি, এমটিবির ২৪৪ কোটি, সোস্যাল ইসলামি ব্যাংকের ১৯৮ কোটি এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৪১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপী ঋণের সর্বশেষ অনুযায়ী, চলতি বছরের (২০২০) জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপীর পরিমাণ ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপীর পরিমাণ ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এ হিসাবে তিন মাসে খেলাপী ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো খেলাপী ঋণ। খেলাপী ঋণের কারণে ব্যাংকিং খাত আগে থেকেই চাপের মুখে ছিল। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে এই চাপের পরিমাণ আরও বাড়বে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঝুঁকি কমানোর জন্য খেলাপী ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। অনেক ব্যাংক তা করতে ব্যর্থ হওয়ায় আমানতকারীদের অর্থ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তাই ব্যাংকগুলোকে খেলাপী ঋণ বৃদ্ধি রোধ করতে হবে। ব্যাংকগুলোকে নিয়ম-নীতির মধ্যে ঋণ বিতরণ করতে হবে। এভাবে খেলাপী ঋণ বাড়তে থাকলে ব্যাংকের আয় ও মুনাফা আরও কমে যাবে।’ উল্লেখ্য, খেলাপী ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন রাখতে হয়। ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা থেকে অর্থ এনে এটি সংরক্ষণ করা হয়। ফলে পরিচালন মুনাফা বেশি হলেও নিট মুনাফা কমে যায় এবং শেয়ারহোল্ডাররা মুনাফা কম পান।
×