ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ সমালোচকের দল বনাম নেতার উদ্ভাস

প্রকাশিত: ২০:৫৩, ২৫ আগস্ট ২০২০

সিডনির মেলব্যাগ ॥ সমালোচকের দল বনাম নেতার উদ্ভাস

আপনি কি জানেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের টাকার মান এখন কত? বাংলাদেশের এক টাকায় এখন পাবেন দুই পাকি রুপি। কি বুঝলেন? তারপরও টক শোর বক্তা আর সমালোচকদের মুখে শুনবেন শেখ হাসিনার সমালোচনা। তিনি না থাকলে এই দেশ ও সমাজের কি হবে ভেবেছেন একবারও? তিনি গত তিন দফায় দেশকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছেন যেখানে পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবীরাও চমকে গিয়ে বলছে তাদের দেশকে দয়া করে বাংলাদেশ বানিয়ে দেখাক ইমরান খান। এই চাওয়া কতটা গভীর দুঃখ থেকে বোঝা কি খুব কঠিন! প্রয়াত লেখক হুমায়ুন আজাদ লিখেছিলেন, পাকিস্তানীরা যদি গোলাপ নিয়েও আসে আমি তাদের বিশ্বাস করি না। সেই পাকিরাও আজ কুপোকাত। শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা ও নেতৃত্ব আমাদের এগিয়ে নিয়ে গেছে অনেক দূর। এটা সমালোচকদের চোখে পড়ে না। সমালোচনা করা বাঙালীর স্বভাব। যে কোন কিছু নিয়ে কথা বলা বা মতামত দেয়াও এখন আমাদের নিত্যদিনের অভ্যাস। সামাজিক মিডিয়া আসার পর এই প্রবণতা বিপজ্জনকভাবে বেড়েছে। দেশের স্পর্শকাতর বিষয়েও দেদার মতামত আর সবজান্তাদের মন্তব্য পড়লে মনে হয় তারা সব জানেন। আমি বলছি এই দেশের সবচেয়ে নারকীয় আক্রমণের অন্যতম একুশে আগস্ট বিষয়ে। শুরুতেই বলে নিতে চাই এই বিষয়ে মতামত দেয়া নিরর্থক। কারণ সবাই জানেন কার নির্দেশে আর কার হাত থাকলে দিনেদুপুরে রাজধানীর বুকে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যার জন্য গ্রেনেডের মতো শক্তিশালী অস্ত্র ব্যবহার করার হিম্মত পায় কেউ। ১৫ আগস্ট থেকে ২১ আগস্ট এর দূরত্ব মাত্র ৬ দিন। খেয়াল করুন সেই আগস্ট মাস। এই মাসে বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়। বাংলাদেশ থেকে নির্মমভাবে বিদায় নেন আমাদের মহানায়ক। বাংলাদেশকে পাকিস্তানে ফিরিয়ে নেয়ার পথ তৈরি করেছিল সে ঘটনা। তারপরও দেশ-জাতি দমেনি। যৌবন থেকে যৌবনের শেষ অবধি আমরা রাজপথে লড়াই করা আওয়ামী লীগকে দেখেছি। সে ইতিহাসের কা-ারী ছিলেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশে ফিরে আসার পর আওয়ামী লীগের পালে নতুন হাওয়া লাগে। নেতৃত্বের সঙ্কট চলে যায়। ধীরে ধীরে তিনি দলকে নিয়ে যান দেশ শাসনে। ’৯৬ সালে একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ দেশ শাসনে এসে প্রমাণ করে এই দেশ পাকিস্তানে পরিণত হয়নি, হবেও না। এই ভয়টাই ২১ আগস্টের হামলার মূল কারণ। বিএনপির তরুণ নেতাসহ যাদের প্রতি আঙ্গুল তোলা হয় তাদের ভূমিকা বা সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কিছু বলার দরকার দেখি না। আমাদের এটা মনে রাখতে হবে সে দিন ই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল দেশ আফগানিস্তান হওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেছে। এটা বুঝিয়ে বলার দরকার পড়ে না যে, সেদিন যদি শেখ হাসিনার কিছু হতো এই দেশ আজ মারামারি বোমা গ্রেনেড আর জঙ্গীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হতো। কারণ হত্যাকারীরা সাকসেসফুল হওয়ার পর নিয়মানুযায়ী তাদের কথা তাদের চাওয়া রাখতে বাধ্য হতো তখনকার সরকার। আর তার মাশুল দিতে দিতে দেশ পরিণত হতো জঙ্গী রাষ্ট্রে। আরও একটি কথা বলা দরকার। সময় সবচেয়ে বড় বিচারক। তার ধারে কাছে নেই কোন বিচার। সে জানত শেখ হাসিনাকে বাঁচতেই হবে। তিনি না বাঁচলে একাত্তরের খুনী দালাল পঁচাত্তরের ঘাতকদের বিচার হবে না। শাস্তিও হবে না। সময় এটাও প্রমাণ করে দিয়েছে অনেক অপরাধের বিচার হয়ত হয় না, কিন্তু পাপের বিচার মুক্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই। সে পাপের কারণেই এরা মরেছে আর পাপীদের মুখে ছাই দিয়ে বেঁচে আছেন শেখ হাসিনা। এদিন যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করি ও পরিবারের প্রতি জানাই সমবেদনা। মনে করিয়ে দিতে চাই আওয়ামী লীগের হাজার ভুল ভ্রান্তি আর আজকের অপশাসন বা ডাকাতির নামে কারও কারও আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হলেও এটি সেই দল যাদের নেতারা নিজেদের জীবন দিয়ে শেখ হাসিনার প্রাণ বাঁচিয়েছেন। এই ভালবাসাকেই তাদের নেতা প্রয়াত সৈয়দ আশরাফ বলেছিলেনÑ আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম। সে অনুভূতিও আজ উটকো মানুষদের জন্য তোপের মুখ। সব পেরিয়ে ভরসা এখনো ওই একজন। এই যে তিনি বার বার বলছেন কথা কি মিথ্য? জেনারেল জিয়া যে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত আর সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারি এটা কি বলার দরকার পড়ে? প্রধানমন্ত্রী যে বলেন একুশে আগস্টের পেছনে ছিল জিয়া পরিবার সেও কি মিথ্যা কিছু? রাজধানীর রাজপথে তাজা গ্রেনেড ছোড়া জজ মিয়ার পক্ষে সম্ভব? সরকার কেন নীরব ছিল তখন? এই হঠকারিতা শেষ হোক। দয়া করে মনে রাখুন শেখ হাসিনা আছেন বলেই দেশ ও সমাজ এ জায়গায় দাঁড়িয়ে। তাঁকে বহুবার চেষ্টা করেও মারতে পারেনি যারা তারা আজও সক্রিয়। তারা জানে পাকিস্তান সবদিক থেকে পিছিয়ে। তারপরও এরা অবোধ অবুঝ। এরা মূলত সুযোগসন্ধানী। এদের মুখোশ খুলে না দিলে দেশের অন্ধকার দূর হবে না। মনে রাখতে হবে এরা শেখ হাসিনা না, মূলত দেশ ও প্রগতির দুশমন। তাই একুশে আগস্ট ঘৃণায় নিমজ্জিত থাক চিরদিন। বেঁচে থাকুন জননেত্রী।
×