ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাস নাড়িয়ে দিলেন ক্রলি

প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ২৪ আগস্ট ২০২০

ইতিহাস নাড়িয়ে দিলেন ক্রলি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ৭৪টি প্রথম শ্রেণীর ইনিংসে ৩০.৮২ গড়ে রান মাত্র ২২৫০। এমন একজন ব্যাটসম্যানকে কেন তিন নম্বরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পজিশনের জন্য বেছে নেয়া হলো? যেখানে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ফার্স্ট ক্লাসে সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরিতে রানের বন্যা বইয়ে দেয়া ক্রিকেটারের অভাব নেই। প্রথম ৭ টেস্টের ১১ ইনিংসে মাত্র ৩টি হাফ সেঞ্চুরির পরও কেন তাকে টেনে নেয়া? জ্যাক ক্রলিকে ঘিরে ক্রমশ জোরালো হচ্ছিল নিন্দুকদের স্লোগান। তখনই গাঝাড়া দিয়ে উঠলেন কেন্ট থেকে উঠে আসা ২২ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান। সাউদাম্পটনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে খেললেন ২৬৭ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস। সঙ্গী জস বাটলারকে (১৫২) নিয়ে গড়লেন পঞ্চম উইকেটে ইংল্যান্ডের ইতিহাসে রেকর্ড ৩৫৯ রানের জুটি। শাহিন শাহ আফ্রিদি, ইয়াসির শাহদের মতো বোলারকে তুলোধুনো করে আউট হলেন অকেশনাল আসাদ শফিকের সাদামাটা এক ডেলিভারিতে। এটাই যে ক্রিকেটের সৌন্দর্য!! নিজের অষ্টম টেস্টে এসে ক্যারিয়ারে পাওয়া প্রথম সেঞ্চুরিটিকে ডাবল সেঞ্চুরিতে রূপ দিয়ে তখন ‘ট্রিপলে’র দিকে ছুটছেন ক্রলি। নিয়মিত বোলারদের তাকে আউট করা দূরে থাক জুটিটাই ভাঙ্গতে পারছিলেন না আজহার আলী। শেষমেশ বল তুলে দিলেন অকেশনাল অফস্পিনার শফিকের হাতে। নিজের তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে সফল। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারার প্রবণতা দেখে বল করেছিলেন লেগস্টাম্পের বাইরে, উইকেটকিপার রিজওয়ান স্টাম্পিং করতে কোন ভুলচুক করেননি। আউট ২৬৭- স্টাম্পিংয়ে থেমে যাওয়া টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ ইনিংসটা এখন ক্রলির। আগের রেকর্ডটি ছিল সিমুর নাসেরের। ১৯৬৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চে ২৫৮ রানে স্টাম্পড হয়েছিলেন এই ক্যারিবিয়ান। আড়াই শ’ পেরিয়ে স্টাম্পড হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে টেস্টে আর কেবল একজনেরই। ২০০৩ সালের বক্সিংডে টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ২৫৭ করে অনীল কুম্বলের বলে স্টাম্পড হয়েছিলেন রিকি পন্টিং। দলের ১২ রানে ওপেনার ররি বার্নস ফিরে গেলে উইকেটে আসেন ক্রলি। আর যখন আউট হন ৩৯৩ বলে ৩৪ চার আর ১ ছক্কায় নামের পাশে ২৬৭ রান, ইংল্যান্ডের দশম সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত টেস্ট স্কোর, তিন নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বর্গীয় ওয়ালি হ্যামন্ডের অপরাজিত ৩৩৬ রানের পর ইংল্যান্ডের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ইংল্যান্ডের তৃতীয় কনিষ্ঠতম টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরিয়ান। ক্রলি ডাবল সেঞ্চুরি করেন ২২ বছর ২০১ দিন বয়সে। তারচেয়ে কম বয়সে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন শুধু দুজন- কিংবদন্তি লেন হাটন (২২ বছর ৫৮ দিন) ও ডেভিড গাওয়ার (২২ বছর ১০২ দিন)। ক্রিকেট রেকর্ডের খেলা। এর বাঁকে বাঁকে ছড়িয়ে থাকে রেকর্ড। টেড ডেক্সটার, এ্যালিস্টার কুক, বর্তমান অধিনায়ক জো রুটের পর চতুর্থ ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি পেলেন ক্রলি। তার আরেকটি কীর্তি ইংল্যান্ডের সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে জীবনের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিকে ডাবল সেঞ্চুরিতে রূপ দিলেন। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটিকে ডাবলের দিকে নিয়ে ছুটে ১৫২ রানে আউট হয়েছেন ক্রলির সঙ্গী বাটলার। নিজের টেস্ট সর্বোচ্চ রান করে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার ফাওয়াদ আলমকে। তার আগেই অবশ্য রেকর্ড হয়ে গেছে। ক্রলি-বাটলার মিলে স্বাগতিকদের স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৩৫৯ রান। দু’জনের হাত ধরে পঞ্চম উইকেটে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম তিন শ’ রানের জুটি পায় ইংল্যান্ড। যেখানে আগের সর্বোচ্চ ছিল ২৫৪ রানের। ১৯৭৩ সালে মুম্বাইয়ে ভারতের বিপক্ষে কিথ ফ্লেচার ও টনি গ্রেগ গড়েছিলেন সেই জুটি। সর্বোপরি টেস্ট ইতিহাসে পঞ্চম উইকেট জুটিতে পঞ্চম স্থানে থেকে ভাগ বসিয়েছেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে। দুই টাইগার তারকা ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে বেসিন রিজার্ভে ঠিক ৩৫৯ রান তুলেছিলেন। ক্রলি ও বাটলার মাত্র ১ রানের জন্য সাকিব-মুশফিককে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি। টেস্ট ইতিহাসে পঞ্চম উইকেটে সর্বোচ্চ তিনটি জুটির রেকর্ড যথাক্রমে সিডনি বার্নস-ডন ব্র্যাডম্যান (৪০৫ রান বনাম ইংল্যান্ড, সিডনি, ১৯৪৬), স্টিভ ওয়াহ-গ্রেগ ব্লুয়েট (৩৮৫ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, জোহানেসবার্গ, ১৯৯৭), ভিভিএস লক্ষ্মণ ও রাহুল দ্রাবিড় (৩৭৬ বনাম অস্ট্রেলিয়া, কলকাতা, ২০০১)।
×