ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সারাদেশে এক লাখ ৩৭ হাজার নলকূপ বসানো হচ্ছে

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ২৪ আগস্ট ২০২০

সারাদেশে এক লাখ ৩৭ হাজার নলকূপ বসানো হচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ সারাদেশে অগ্রাধিকারমূলক গ্রামীণ পানি সরবরাহ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। এই প্রকল্পের আওতায় ৮৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ ৩৭ হাজার টিউবওয়েল (নলকূপ) স্থাপন করা হচ্ছে। গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে এসব টিউবওয়েল বিতরণ করার কথা রয়েছে। তবে অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পের আওতায় বেশির ভাগ টিউবওয়েল জনপ্রতিনিধির কর্মীদের বাড়িতেই স্থাপন হয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী এখান থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছে। কারণ টিউবওয়েলগুলো জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। ৬৪ জেলার ২৭৮টি নির্বাচনী এলাকায় এসব টিউবওয়েল বিতরণের কাজ চলছে। এদিকে প্রকল্পটি নিয়ে গত দুই বছরে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শুরুতেই প্রকল্পের কেনাকাটায় বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে বলে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। প্রকৃত অর্থে যারা টিউবওয়েল পাওয়ার যোগ্য, তারা কেউ পাননি। পেয়েছে ধনীরা। এমনও ঘটনা রয়েছে একজন ব্যক্তি একাধিক নলকূপ হাতিয়ে নিয়েছে। একটি তার বাড়ির ভেতরে স্থাপন করে নিয়েছে। অন্যটি বাড়ির বাইরে স্থাপন করেছেন নিজেদের ব্যবহারের জন্য। এখান থেকে অন্য কোন মানুষ পানি নিতে গেলে তাদের গালমন্দ শুনতে হয়। সরকারী নলকূপ থেকে পানি নিতেও বাধা পেতে হচ্ছে। শুধু তাই না, প্রকল্প থেকে বড় অঙ্কের অর্থ নয়-ছয়ের বিষয়টি মাঠ পর্যায় থেকে শুরু হয়েছে। এই অর্থের একটি অংশ প্রকল্পের কতিপয় কর্মকর্তার পকেট ঢুকে গেছে। যদিও বিষয়টি প্রকল্পের পিডি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, এক একটি নলকূপ নিতে আড়াই হাজার থেকে সাত হাজার টাকা সরকারের ফান্ডে জমা দিতে হচ্ছে। এই টাকা সরকারের কোষাগারে জমা হয়। এখানে অনিয়ম করার কোন সুযোগ নেই। জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের অগ্রাধিকারমূলক গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের পিডি মোহাম্মদ হানিফ জনকণ্ঠকে জানান, ২০১৮ সালে হাতে নেয়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে এক লাখ ৩৭ হাজার অগভীর ও গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ গত জুনে শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু করোনার কারণে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। মেয়াদ বাড়লেও টাকা বাড়েনি। এই প্রকল্পে প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে কতগুলো নলকূপ বসানো হবে তা নির্ধারণ করা আছে। আমরা নির্ধারিত সংখ্যা অনুযায়ী সারাদেশে নলকূপগুলো ভাগ করে দিয়েছি। এখানে মন্ত্রী-এমপি সুপারিশ করলেও একটি নলকূপ বাড়ানো সম্ভব না। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ শতকরা ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। ৬৪ জেলার ২৭৮টি নির্বাচনী এলাকায় প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। ২০২১ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হবে। পিডি বলেন, সারাদেশে গ্রামীণ পানি সরবরাহ ব্যবস্থার সম্প্রসারণের মাধ্যমে পানিবাহিত এবং পানি সংক্রান্ত রোগ হ্রাস করে গ্রামীণ জনগণের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। নিরাপদ পানির উৎস স্থাপনের মাধ্যমে পল্লী এলাকায় পানি সরবরাহের কভারেজ বৃদ্ধিকরণ এবং প্রাকৃতিক ক্ষতি, প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও অন্যান্য সমস্যার সময় পানি সরবরাহের কভারেজ টিকিয়ে রাখা মূল উদ্দেশ্য। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নতকরণ। নিরাপদ পানি সরবরাহ মাধ্যমে ডায়রিয়া ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগ হ্রাসকরণ প্রকল্পের আওতায় অগভীর নলকূপ ও গভীর নলকূপ। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর বলছে, ‘জাতীয় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন নীতিমালা ১৯৯৮’ অনুযায়ী গ্রামাঞ্চলে নলকূপের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি নলকূপের জন্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০৫ থেকে ৫০ জনের মধ্যে নিয়ে আসা। নীতিমালা অনুযায়ী, গ্রামাঞ্চলে নলকূপের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিটি নলকূপের জন্য বর্তমান ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮৭ থেকে ৫০ জনে আনাই হচ্ছে বড় কাজ। কিন্তু বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে নিরাপদ পানি সরবরাহ কভারেজ বৃদ্ধিকরণ অত্যন্ত কঠিন। কারণ বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্যতা (ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠস্থ উভয়ই) দিন দিন কমে আসছে। আর্সেনিক ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি ভূগর্ভস্থ পানিকে দূষিত করছে। এছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলে অগভীর একুইফার (ভূগর্ভস্থ সিক্ত শিলা স্তর) এলাকায় লবণাক্ততা, দুর্গম অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নেমে যাওয়া, কিছু কিছু এলাকায় কোন ধরনের পানির উৎস স্থাপন সম্ভব না হওয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য সমস্যা। এ কারণে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা আদর্শ লক্ষ্যে পৌঁছতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পানির বর্ধিত চাহিদার বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতেই বিপুল পরিমাণ পানি সরবরাহ প্রয়োজন। আর গ্রামীণ জনগণের শহরে অভিবাসন ও দ্রুত নগরায়ণে প্রয়োজনীয়তাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, এ প্রেক্ষাপটে নীতিমালার নির্ধারিত মানদন্ড অর্জন করতে বড় পরিসরে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। ২০১৭ সালে পিএ্যান্ডসি বিভাগ ও ডিপিএইচই’র হিসাব অনুযায়ী সারাদেশে চালু নলকূপের সংখ্যা ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ৪৬০টি। এই অবস্থায় প্রতি ৫০ জনের জন্য একটি নলকূপ ভাগে পড়েনি। পড়েছে দেড় থেকে দুই শ’ মানুষের ভাগে। ফলে গ্রামীণ জনপদের মানুষের পানির অভাব থেকেই যাচ্ছে।
×