ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রামাঞ্চলে সুপেয় পানি

প্রকাশিত: ২২:৪১, ২৪ আগস্ট ২০২০

গ্রামাঞ্চলে সুপেয় পানি

রাজধানী ঢাকাতেই সুপেয় পানির অভাব প্রকট। ঢাকা ওয়াসার পানি মোটেও বিশুদ্ধ ও সুপেয় নয়। পানি ফুটিয়ে অথবা ফিল্টারে ছেঁকে পান করতে হয়। সে অবস্থায় দেশের গ্রাম-গঞ্জের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। বিশেষ করে দক্ষিণ বাংলায় সুপেয় পানির তীব্র অভাব। দেশের প্রায় সব নদ-নদী ভরাটসহ প্রবল দূষণ-দখল কবলিত হওয়ায় বর্তমানে কোন নদীর পানিই সুপেয় নয়। গ্রামাঞ্চলে সুপেয় পানির অন্যতম উৎস গভীর-অগভীর নলকূপ অথবা টিউবওয়েল। বাস্তবে সমস্যা রয়েছে সেখানেও। দক্ষিণ বাংলার উপকূলীয় অঞ্চলের নদ-নদীর পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে দিন দিন। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের নলকূপের পানিতে আর্সেনিক ও আয়রনের পরিমাণ অত্যধিক। দেশের অনেক দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে নলকূপে এমনকি পানিও ওঠে না। পার্বত্য অঞ্চলে ঝোরা বা জলপ্রপাতগুলো গ্রীষ্মকালে শুকিয়ে যায়। খরাপ্রবণ এলাকাগুলোতেও পানির প্রাপ্যতা প্রকট। ফলে বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির সমস্যা প্রায় সারাদেশে বছরব্যাপী লেগেই আছে। ফলে দেশে বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানির সমস্যা এবং সঙ্কট বেড়েই চলেছে। যে জন্য দেশে পানিবাহিত রোগব্যাধি যেমন ডায়রিয়া, কলেরা, চর্মরোগ, আমাশয়, আর্সেনিকদূষণ রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। এহেন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ১৯৯৮ সালে গ্রামাঞ্চলে নলকূপের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তদনুযায়ী গ্রামাঞ্চলে নিরাপদ ও সুপেয় পানির জন্য নলকূপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮৭ থেকে ৫০ জনে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়। সন্দেহ নেই যে, এটি একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ এবং সমস্যাও বহুমুখী। এরই অংশ হিসেবে সর্বশেষ ২০১৮ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ৮৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে পর্যায়ক্রমে এক লাখ ৩৭ হাজার টিউবওয়েল স্থাপন শুরু করে। তবে দুঃখজনক হলো, প্রকল্পের শুরু থেকেই নানা অনিয়ম-দুর্নীতি শুরু হয়। টাকার হিসেবে হয় নয়-ছয়। টিউবওয়েল স্থাপনের দায়িত্ব স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হাতে দেয়ায় ঘটে এই বিপত্তি। ফলে প্রভাবশালী ও ধনী ব্যক্তিদের বাড়িতে সদর-অন্দরে একাধিক টিউবওয়েল স্থাপনের পাশাপাশি দরিদ্র জনগোষ্ঠী সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। করোনার কারণে প্রকল্পটিও শেষ হয়নি যথাসময়ে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত বর্ধিত এই প্রকল্পে বাদবাকি টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ একেবারে দুর্নীতিমুক্ত থাকবে বলেই প্রত্যাশা। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৮ শতাধিক নদ-নদী এবং ৫৭টি আন্তঃদেশীয় সংযোগ নদী রয়েছে। এগুলোর সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান, সিকিম, এমনকি চীনও জড়িত। সুতরাং আন্তঃদেশীয় পানি ব্যবস্থাপনা ও সুষম বণ্টনের ক্ষেত্রেও এসব দেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। পানিসম্পদের সুষ্ঠু ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য উন্নয়ন সহযোগী ১২টি দেশের সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশে ডেল্টা প্ল্যান (বিডিপি) ২১০০’ নামে যুগান্তকারী একটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত এই পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় আগামী এক শ’ বছরে পানির প্রাপ্যতা, এর ব্যবহারসহ প্রতিবেশ ও পরিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রাখা হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশেই পানির পরিকল্পিত ব্যবহারসহ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সমুদ্রের পানির ব্যবহারও সম্ভব হচ্ছে এর জন্য। অথচ অপরিকল্পিত আহরণ ও যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে দেশের পানিসম্পদের অপচয় হচ্ছে। অন্যদিকে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদ-নদীগুলো। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে সৃষ্টি হচ্ছে বন্যা। সুন্দরবনে দেখা দিচ্ছে মিষ্টি পানির সঙ্কট। যে কারণে পশুপাখি, জীববৈচিত্র্য ও গাছপালা প্রায় ধ্বংসের সম্মুখীন। বৃষ্টির পানিরও আদৌ কোন পরিকল্পিত ব্যবহার হচ্ছে না। সুষ্ঠু ও সমন্বিত পানি ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনায় এসবই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে জরুরীভিত্তিতে।
×