ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভাস্কর মৃণাল হক আর নেই

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ২৩ আগস্ট ২০২০

ভাস্কর মৃণাল হক আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর নানা স্থানে দেখা মেলে তার গড়া ভাস্কর্য। মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনসহ নানা বিষয় উপজীব্য করে নির্মিত সেসব ভাস্কর্য। না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন সেই আলোচিত ভাস্কর মৃণাল হক। শুক্রবার রাত দুইটার দিকে গুলশানের বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। রেখে গেছেন স্ত্রী নাসরিন হক এবং ছেলে সৈকত হক ও মেয়ে শ্রাবণী হককে। শনিবার বাদ আছর গুলশানের আজাদ মসজিদে মৃণাল হকের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরেই শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন মৃণাল হক। ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। শুক্রবার রাতে তার সুগার লেভেল কমে যাওয়ার পাশাপাশি অক্সিজেনের মাত্রাও কমে যায়। এরপর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান হাসপাতালে আসার আগেই তিনি বাসাতে মারা গেছেন। মৃণাল হকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শোকবার্তায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, কর্মের মাধ্যমেই বেঁচে থাকবেন খ্যাতিমান ভাস্কর মৃণাল হক। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের ‘বলাকা’ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন মৃণাল হক। ২০০৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নির্মাণ করেন গোল্ডেন জুবিলি টাওয়ার। এছাড়াও এই ভাস্করের উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্যের মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে ‘রতœদ্বীপ’, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে ‘রাজসিক’, পরীবাগ মোড়ে ‘জননী ও গর্বিত বর্ণমালা’, ইস্কাটনে ‘কোতোয়াল’, সাতরাস্তায় ‘ময়ূর’, এয়ারপোর্ট গোল চত্বরের ভাস্কর্য, নৌ সদর দফতরের সামনে ‘অতলান্তিকে বসতি’, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের ভাস্কর্য, বঙ্গবাজারে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন ভাস্কর্য। সর্বশেষ সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে তার গড়া ভাস্কর্যটি নিয়ে আপত্তি তোলে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন। লেডি জাস্টিসের আদলে নির্মিত ভাস্কর্য শেষ পর্যন্ত সুপ্রীমকোর্টের সামনে থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। ১৯৫৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন মৃণাল হক। ১৯৭৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। ১৯৮৪ সালে তিনি মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। ১৯৯৫ সালে মৃণাল হক আমেরিকায় পাড়ি জমান এবং সেখানে তার প্রথম কাজ শুরু করেন। নিউইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে তার প্রথম প্রদর্শনী হয়। তিনি নিউইয়র্কে এত বেশি কাজ করেন যে নিউইয়র্কের সরকারী টিভি চ্যানেলে তার একটি সাক্ষাতকার ২৬ বার এবং সিএনএন চ্যানেলে ১৮ বার প্রচারিত হয়। ২০০২ সালে মৃণাল হক দেশে ফিরে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। একই বছর তিনি নিজ উদ্যোগে নির্মাণ করেন মতিঝিলের বলাকা ভাস্কর্যটি।
×