ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনভিপ্রেত ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ২৩:০১, ২৩ আগস্ট ২০২০

খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অনভিপ্রেত ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যকে ভিত্তিহীন, মনগড়া ও অপরিণামদর্শী বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি এই বক্তব্যকে দায়িত্বহীন, বানোয়াট ও অসত্য উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বেগম খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে যে বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন তা অনভিপ্রেত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিবৃতিতে ফখরুল ইসলাম আরও উল্লেখ করেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলাটি বিশ্লেষণ করলে এটিই সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপিকে ধ্বংস করার একটি সুদূরপ্রসারী নীলনক্সা বাস্তবায়নের জন্যই ২১ আগস্ট সংক্রান্ত মামলায় বিএনপিকে জড়ানো হয়েছে। বর্তমান সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য এখনও চলমান রয়েছে। আইন ও বিচারিক প্রক্রিয়াকে হাতের মুঠোয় নিয়ে তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতৃবৃন্দকে জড়াতে সম্পূরক চার্জশীট করার মাধ্যমে প্রহসনের বিচারিক প্রক্রিয়ায় সাজা দিয়ে এখন খালেদা জিয়াকে টার্গেট করা হয়েছে। ২১ আগস্ট নিয়ে তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এ মামলায় কোনভাবে খালেদা জিয়াকে নিয়ে কেউ কখনই টু শব্দটি করেননি। তিনি বলেন, আকস্মিক ওই হামলার ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া হতবাক ও বিচলিত হয়ে পড়েন। দ্রুত হতাহতদের খবর নিতে থাকেন। আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমান এবং বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল তারেক সিদ্দিকীকে দেখতে সিএমএইচে যান। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার বাসায় গিয়ে সমবেদনা জানাতে চেষ্টা করেন। এজন্য নিরাপত্তা বাহিনী দিনভর চেষ্টা চালায়। কিন্তু ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অসংখ্য নেতাকর্মী সুধাসদনের আশপাশের রাস্তা দিনরাত দখল করে রাখে। এক পর্যায়ে নিরাপত্তার অগ্রিম টিম হিসেবে পাঠানো প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সদস্যকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করে সেখান থেকে বের করে দেয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা। তিনি বলেন, ২১ আগস্ট বোমা হামলার ঘটনা নিঃসন্দেহে ভয়াবহ এবং এতে হতাহতের ঘটনা মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক। এ ভয়াবহ হামলার ঘটনায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার ও কেবিনেট নিন্দা জানান, নিহত ও আহতদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানান এবং দোষীদের বিচারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। শেখ হাসিনার কাছে খালেদা জিয়া নিজ স্বাক্ষরে শোক ও সমবেদনা জানিয়ে চিঠি পাঠান। সেই চিঠি পৌঁছাতে গিয়ে পত্রবাহক নিজেও হামলার শিকার হন। বোমা হামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিশেষজ্ঞ সার্ভিস দিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফবিআই সদস্যরা আসেন। জাতীয় সংসদে উত্থাপিত দাবি অনুযায়ী, সুপ্রীমকোর্টের কর্মরত একজন বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। পরে ১/১১ এর সরকারের সময় গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত শেষে অভিযোগপত্রে (চার্জশীট) বোমা হামলার সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপির অন্য নেতৃবৃন্দের জড়িত থাকার কোন উল্লেখ নেই। খালেদা জিয়ার নাম কেউ কখনই উচ্চারণ করেননি। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের আমলে পুলিশী পুনঃতদন্তের মাধ্যমে রচিত সম্পূরক চার্জশীটে তারেক রহমানসহ বিএনপির অন্যান্য নেতৃবৃন্দের নাম জড়ানো হয়। এতে সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণ হয় যে রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগ করে পুলিশী ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যবহারের মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশে কল্পিত চার্জশীট তৈরি করা হয়েছে। যে পুলিশ কর্মকর্তা কাহার আকন্দকে পুনঃতদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়, তিনি বর্তমান সরকারের অত্যন্ত আপনজন হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ গ্রেনেড হামলার জন্য তারেক রহমানকে দায়ী করে। এ দাবির সমর্থনে তারা হাজির করে মুফতি হান্নানের একটি বানোয়াট জবানবন্দী, যা ভিডিও করে ইউটিউবে ছাড়া হয়েছে। এতে দেখা যায়, মুফতি হান্নানকে পাশ থেকে পুলিশ কর্মকর্তারা শিখিয়ে দিচ্ছেন, কি কি বলতে হবে। মুফতি হান্নানকে দিয়ে যদি বিএনপি সরকার গ্রেনেড হামলা করায়, তাহলে সেই সরকারই ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর কেন তাকে গ্রেফতার করে, প্রশ্ন করেন তিনি?
×