ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোকো ডাস্টের ট্রেতে চারা-অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা বেশি, উৎপাদনও

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ২৩ আগস্ট ২০২০

কোকো ডাস্টের ট্রেতে চারা-অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা বেশি, উৎপাদনও

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ চারা উৎপাদনের সকল কার্যক্রম চলছে পরিবেশবান্ধব পরিমিত সূর্যালোকে বিশেষ নেট হাউসের ভেতরে। মাটির পরিবর্তে চারা তৈরি হচ্ছে কোকো ডাস্টে (নারিকেলের ছোবড়ার ধূলার মধ্যে) ট্রের মধ্যে। কৃষিবিজ্ঞানের উদ্ভাবিত এই লাগসই প্রযুক্তিতে মাটি ও বায়ুবাহিত রোগ বালাই থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকছে চারা। অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বেশি হওয়ায় উৎপাদিত হচ্ছে অধিক সবজি। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামে এমন ট্রে চারা উৎপাদিত হচ্ছে। উপজেলার নতুন পরিচিতি ‘চারা নগর’। বগুড়ার সবজি চাষী ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলোর চাষী ভিড় করছেন চারা নগরে। বিশেষ ব্যবস্থায় কুরিয়ার সার্ভিসে চারা পাঠানো হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ অনেক জেলায়। এমন চারা উৎপাদনের শুরু পেঁপের পরীক্ষামূলক চারা তৈরি করে। শাজাহানপুরের শাহনগর গ্রামের আমজাদ হোসেন বললেন, বছর কয়েক আগে পাবনার ঈশ^রদী উপজেলার এক গ্রামে গিয়ে দেখেন, জমির পর জমিতে লাইন ধরে উন্নত জাতের পেঁপে ফলেছে। প্রতিটি পেঁপের ওজন তিন থেকে চার কেজি। কারণ অনুসন্ধানে জানতে পারেন, কোকো ডাস্টের চারায় অধিক ফলন হয়। তিনি বগুড়ায় নিজ গ্রামে এসে প্রথমে পেঁপে চারা তৈরি করেন। সাফল্য আসে। তারপর অনুভব করেন পেঁপের চারা তৈরি করা গেলে সবজির চারাও তৈরি করা যাবে। তারপর মাদলা গ্রামের রেজাউল করিমসহ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় নেট হাউস বানিয়ে পেঁপের সঙ্গে সকল সবজির চারা তৈরি করেন। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক সাফল্য আসে। শাহনগর, মাদলা হয়ে চারা তৈরি শুরু হয় জোঁকা, দুরুলিয়াসহ আশপাশের দশ গাঁয়ে। শাজাহানপুর উপজেলার বেশিরভাগ গ্রামের কৃষক এখন উন্নত প্রযুক্তির ট্রে পদ্ধতিতে চারা তৈরি করছেন। ২০১৭ সালে মাত্র পাঁচ হাজার চারা উৎপাদনের পর গত তিন বছরে চারা উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়ে অন্তত এক লাখ। চলতি বছরে আরও কয়েকটি গ্রামে কোকো ডাস্ট ট্রে পদ্ধতির চারা উৎপাদন শুরু হয়েছে। এই বিষয়ে শাহনগর গ্রামের আমজাদ হোসেন বললেন, ট্রে নার্সারি বললে মানুষ সহজে বুঝতে পারে এই চারা মাটিতে নয়, নারিকেলের ছোবড়ার ধূলায় ট্রেতে তৈরি হচ্ছে। মাদলা গ্রামের ট্রে নার্সারির মালিক জানালেন, তিনি একটি পেঁপের জাতের নাম দিয়েছেন ‘ফার্স্ট লেডি’। এভাবে অনেকে জাতের নামকরণ করেছেন। নামকরণ যাই হোক ট্রে নার্সারির পেঁপে কপি গাঁজর করলা নানা জাতের শাক সবজির চারা নামেই পরিচিত পাচ্ছে। কেউ বলছেন এগুলো হাইব্রিড। তবে ট্রে নার্সারি কর্তৃপক্ষ তা মানতে রাজি নন। বলেন, মাটির বদলে কোকো ডাস্টের ট্রেতে চারা বেড়ে ওঠায় সুস্থ সবল হয়। অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বাড়ে। উৎপাদনও বাড়ে। যে কারণে অনেকে মনে করে হাইব্রিড। আসলে এগুলো আমাদের নিজস্ব জাত। নেট হাউস সম্পর্কে বলেন, এ ধরনের চারা তৈরিতে সালোক সংশ্লেষণের (ফটোসিনথেসিস) প্রয়োজন। অধিক তাপ নিয়ন্ত্রণে এবং ছায়ায় রাখতে নেট হাউস বানাতে হয়। মশারির কাপড় ও চিকন গুনায় নেট আটকাতে হয় বাঁশের সঙ্গে। এতে কীটপতঙ্গ পোকামাকড়ের হাত থেকে চারা রক্ষা পায়। যেহেতু এই চারা মাটিতে হয় না তাই মাটির অম্ল ক্ষার ও মাটিবাহিত রোগ বালাই ক্ষতি করতে পারে না। নির্দিষ্ট মাত্রায় তাপ ছায়া পানি ও সামান্য জৈব সারেই চারা সুস্থ সবল হয়ে বেড়ে উঠে। কৃষি সেবা ট্রে নার্সাারির মালিক আমজাদ হোসেন জানান, কোকো ডাস্টের সবজি চারা তৈরির আধুনিক এই কৌশল প্রথম প্রয়োগ হয় রংপুরে। তারপরই বগুড়ার শাজাহানপুর। তার আগে বিচ্ছিন্নভাবে চারা তৈরি হয় ঈশ^রদীতে। বগুড়ার শাজাহানপুরের উৎপাদিত চারা সুনাম অর্জন করেছে। ৩০ থেকে ৩৫ দিন বয়সী চারা রোপণের পর ৯০ দিনের মধ্যে ফলন মেলে। শাজাহানপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বলেন অপার সম্ভাবনার এই প্রযুক্তি সকল ধরনের সবজি চাষে অধিক ফলন দেবে। ট্রে নার্সারির মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, এই চারা তৈরিতে আপাত দৃষ্টিতে খরচ কিছুটা বেশি মনে হবে। তবে অধিক উৎপাদনের পর যোগ বিয়োগ করলে দেখা যায় চারার খরচ কমই পড়েছে। যে পেঁপে গাছে সাধারণ চারায় ফলন হয় ২০ থেকে ৩০ কেজি, কোকো ডাস্টের ট্রে চারায় ফলন হয় প্রতিটি গাছে ২ মণেরও বেশি। এভাবে টমেটো, কপি, মুলা, গাঁজর, ঢেঁড়শ,করলা, চিচিঙ্গা,বরবটি,শসাসহ সকল শাক সবজির উৎপাদন বেশি হয়। প্রচুর ভিটামিন মেলে। রোগ ব্যাধি বালাই দূর করে।
×