ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বর্জ্য থেকে বিদ্যুত তৈরি হলে ঢাকা শহর আবর্জনামুক্ত হবে

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ২৩ আগস্ট ২০২০

বর্জ্য থেকে বিদ্যুত তৈরি হলে ঢাকা শহর আবর্জনামুক্ত হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেছেন, রাজধানীর আমিন বাজারে বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদন শুরু হলে ঢাকা শহরের রাস্তাঘাটে বা যত্রতত্র আর ময়লা-আবর্জনা থাকবে না। মন্ত্রী শনিবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন আমিন বাজারে অবস্থিত ডাম্পিং স্টেশন এবং গাবতলীর মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ পরিদর্শনকালে এ কথা বলেন। মন্ত্রী বেলা ১১টায় আমিনবাজারে ডিএনসিসির পাইকারি কাঁচাবাজারে যান্ত্রিক ওয়ার্কশপ পরিদর্শন করেন এবং পরে আমিনবাজার ল্যান্ডফিল পরিদর্শন করেন। এ সময় ডিএনসিসির মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবদুল হাই, সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম সাইদুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী বলেন, নাগরিকদের উচ্ছিষ্ট বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে এই প্রথমবারের মতো ডিএনসিসির আমিন বাজারে বর্জ্য থেকে বিদ্যুত প্লান্ট স্থাপিত হচ্ছে। এটি হলে ঢাকা শহরের রাস্তা-ঘাট এবং খাল-বিলসহ যত্রতত্র ময়লা পড়ে থাকবে না। ঢাকা হবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহর। বিদ্যুত প্লান্ট স্থাপিত হলে সেখানে প্রতিদিন তিন হাজার টন ময়লা-আবর্জনা প্রয়েজন হবে। এত পরিমাণ ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে বিদ্যুত প্লান্টে দিলে ঢাকা শহরে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ আর থাকবে না। বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্পটি তার স্বপ্নের প্রজেক্ট উল্লেখ করে মোঃ তাজুল ইসলাম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এই প্রজেক্টে কোন প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। বিদেশী একটি কোম্পানির সঙ্গে বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য চুক্তি করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, চুক্তি হওয়ার ১৮ মাসের মধ্যেই বিদ্যুত উৎপাদন শুরু হবে। যদিও তারা এর থেকে কিছুটা সময় বেশি চেয়েছেন। চূড়ান্ত চুক্তির সময় এই বিষয়টি ফয়সালা হবে। পরিবেশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। বর্জ্য থেকে বিদ্যুত প্লান্টের পাশে একটি ইকোপার্কও নির্মাণ করা হবে। মন্ত্রী জানান, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ দেশের সকল শহরকে পরিচ্ছন্ন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে এবং খুব শীঘ্রই পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে তোলা সম্ভব হবে। রাজধানীতে অবস্থিত যে সকল হাসপাতাল রয়েছে তাদের বর্জ্য নিঃশেষ করার জন্য নিজস্ব ডিস্পোজাল প্লান্ট নেই কেন এমন প্রশ্ন তুলে মন্ত্রী বলেন, হাসপাতালগুলোর নিজস্ব ডিসপোজাল প্লান্ট থাকলে তাদের যে মেডিক্যাল বর্জ্য রয়েছে সেগুলো নিঃশেষ করা সম্ভব হতো। মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেন, শহরকে পরিচ্ছন্ন করতে বর্তমান যন্ত্রপাতির পাশাপাশি আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হবে। সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন যে সমস্ত জায়গা অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে সেগুলো অতিদ্রুত দখলমুক্ত করা হবে। পরিদর্শন শেষে তাজুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসির বিভিন্ন ধরনের আমদানিকৃত যান ও যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে কিনা, এ বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, স্ট্রাকচারাল ডিজাইন, অরগানোগ্রাম আছে কিনা তা পরিদর্শন করতে আমি এখানে এসেছি। পরিদর্শনকালে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ডিএনসিসির এই পাইকারি কাঁচাবাজারে এবং যাত্রাবাড়ীতে কাওরান বাজারের কাঁচাবাজার স্থানান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু কাজটি আমরা এখনও করতে পারিনি। এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। কাওরান বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে আমরা কথা বলেছি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরা আবারও আলোচনায় বসব। তারা একেক সময় একেক ধরনের দাবি করছে। কিন্তু দাবিগুলো আমরা লিখিত আকারে পাচ্ছি না। কাওরান বাজারের মতো এ রকম একটা বিশৃঙ্খল মার্কেট ঢাকা শহরে হতে দেয়া যায় না। কাওরান বাজারকে সুন্দর ডিজাইন অনুযায়ী সাজানো দরকার। মেয়র আতিক বলেন, আমাদের প্রায় ৪৫০টি বিভিন্ন ধরনের গাড়ি আছে। এর মধ্যে আছে এস্কেভেটর, পানির গাড়ি, ময়লার ডাম্প ট্রাক ইত্যাদি। এগুলো কীভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে। ময়লা ফেলে আসার পরে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে কিনা। আমরা এসফল্ট প্লান্ট করেছি। আমি ঠিকাদারদের বলে দিয়েছি ভবিষ্যতে এই এসফল্ট প্লান্ট থেকে তাদের ম্যাটেরিয়াল কিনতে হবে। নগরে যে কাজ হবে তার কোয়ালিটি নিশ্চিত করার জন্য এই এসফল্ট প্লান্ট করেছি। মেয়র বলেন, কোরবানির ঈদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটি অনুশাসন দিয়েছেন। গরুর হাটের পাশে একটি মডার্ন স্লটারিং হাউস করার জন্য এই অনুশাসনটিকে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দেয়া হচ্ছে। গাবতলী গরুর হাটের পাশে আমরা একটি অত্যাধুনিক স্লটারিং হাউস করব। আতিকুল ইসলাম বলেন, ৫২ একর জমি প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক উদ্ধার করেছিলেন। এটি কোথাও কোথাও আবার দখল হয়ে গিয়েছে। এসব জায়গা পুনরুদ্ধার করে, বাউন্ডারি ওয়াল করে এখানে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা হবে। আমিন বাজার ল্যান্ডফিল পরিদর্শন শেষে মেয়র বলেন, এই ল্যান্ডফিলকে একটি সুন্দর সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসা দরকার। এটির মেয়াদ ২০১৯ সাল পর্যন্ত ছিল। এরপর আমরা এটাকে ভার্টিক্যালি ওপরের দিকে ৬০ ফুট নিয়েছি। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের পরে এখানে আর ময়লা ফেলার জায়গা থাকবে না। ঢাকা শহরের প্রতিদিন যে আবর্জনা তৈরি হয় আমাদের এখনই পরিকল্পনা নিতে হবে ২০২২ সাল থেকে কোথায় ময়লা ফেলা হবে। এখানে জমি অধিগ্রহণ করে একটি ইকোপার্ক তৈরি করা হবে। এখন ময়লা আমরা লিনিয়ার ইকোনমিতে ফেলি, আবর্জনা এনে এখানে ফেলে দেই। তখন হবে সার্কুলার ইকোনমি। সে ক্ষেত্রে বর্জ্য থেকে বিদ্যুত ও বায়োগ্যাস উৎপাদন হবে। আমরা এখানে ৮০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুত, জৈব সার ইত্যাদি উৎপাদনে যাব। বিদ্যুত ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পরিবেশ অধিদফতরের সমন্বয়ে আমরা এক নতুন স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে পাব।
×