ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী রেলওয়ে হাসপাতালে লুটপাটের প্রতিযোগিতা

প্রকাশিত: ২১:২১, ২৩ আগস্ট ২০২০

রাজশাহী রেলওয়ে হাসপাতালে লুটপাটের প্রতিযোগিতা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে পশ্চিম রেলওয়ে হাসপাতালে চলছে সরকারী টাকা লুটের প্রতিযোগিতা। নিয়ম-কানুনের কোন তোয়াক্কা করেন না এখনকার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। হাসপাতালে রীতিমতো দফতর সাজিয়ে কেরানির কাজ করছেন সুইপারদের সর্দার। রোগীশূন্য থাকলেও নানা খাতে খরচ দেখিয়ে লোপাট হচ্ছে টাকা। অসাধু কর্মকর্তাদের অনিয়মের দৌড়ে যেন পিছিয়ে নেই কেউ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভাগীয় এ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ এসএম মারুফুল আলম। পদমর্যাদা অনুযায়ী সরকারী গাড়ি পান না তিনি। তবে দখলে নিয়েছেন হাসপাতালের সরকারী এ্যাম্বুলেন্স। নগরীর উপশহরের বাসা থেকে শুধুমাত্র ডাঃ মারুফুলকে হাসপাতালে আনা নেয়ার জন্যই দিনে অন্তত ঃ চারবার যাতায়াত করে এ্যাম্বুলেন্সটি। আর এই এ্যাম্বুলেন্সের পেছনে প্রতিমাসে কেবল জ্বালানি খরচই দেখানো হচ্ছে গড়ে ৩০ হাজার টাকা করে। ডাঃ মারুফুলের এমন কা- চলছে অন্তত বছর দুয়েক ধরে। এসব বিষয় নিয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি তদন্ত শুরু হয়েছে। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপকের (জিএম) কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা। গত ১২ আগস্ট পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক অজয় কুমার পোদ্দারকে প্রধান করে তিন সদস্যের এ কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। এরইমধ্যে তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কমিটির প্রধান। তবে নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন হবে কিনা তার কোন জবাব নেই কারও মুখে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ জানান, সম্প্রতি হাসপাতালে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সার্বিক বিষয় তদারকির জন্য তদন্ত কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, ডাঃ মারুফুলের অবৈধভাবে নিয়মিত এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের পর অতিরিক্ত খরচও দেখানো হয়। বিষয়টি ধরা পড়েছে অনুসন্ধানেও। এছাড়া, তার অফিস কক্ষে নিয়েছেন এসি এবং ফ্রিজ। কিন্তু হাসপাতালের ফ্রিজটি ব্যবহার হয় না ওষুধ রাখার কাজে। এসব অনিয়মের কথা অবশ্য স্বীকার করেছেন ডাঃ মারুফুল নিজেই। এদিকে রেলস্টেশনের সুইপার পদে নিয়োগ পাওয়া জুয়েল সরকারী পদোন্নতি পেয়ে এখন জমাদার। তবে স্টেশনের কাজ ফেলে হাসপাতালের দো’তলায় চেয়ার টেবিল ও কম্পিউটারে বসে দিব্যি কাজ করছেন কেরানির। দাফতরিক সব কাজই হয় তার হাতে। অভিযোগ আছে, অফিস সহকারী পদে নিয়োগ পাওয়া এক নারীর বদলে কাজ করেন জমাদার জুয়েল। আর এ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত নারী কেবল হাজিরা দেন অফিসে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রকাশ্যে হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে চীফ মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ শামীম আরা কোন যৌক্তিক ব্যাখ্যাও দিতে পারেননি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালের ওয়ার্ডের চেয়ে চারগুণ বড় কক্ষ বরাদ্দ নিয়েছেন চীফ মেডিক্যাল অফিসার। আর ছোট ছোট কক্ষে ঠাসাঠাসি করে বেড পেতে বানানো হয়েছে রোগীদের ওয়ার্ড। ইনডোর প্রায়ই রোগীশূন্য থাকে। তবে আউটডোরে ফ্রি ওষুধ পেতে চাপ সামালানোই দায়। চিকিৎসকদের মতে, হাসপাতালের ওয়ার্ডে এক বেড হতে আরেক বেডের দূরত্ব অন্তত ৫ ফুট রাখা উচিত। অথচ রাজশাহী রেলওয়ে হাসপাতালের এ ছোট্ট কক্ষটিতেই ঠাসাঠাসি করে পাতানো হয়েছে তিনটি বেড। এ রকমই তিনটি কক্ষ নিয়ে পুরুষ ওয়ার্ড। অথচ এ ভবনেরই দ্বিতীয় তলায় বিশাল আয়তনের এই আলিশান কক্ষটি বরাদ্দ সিএমও’র জন্য। খাতা কলমে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল বলা হলেও জরুরী রোগীদের জন্য আছে শুধু ইনডোরে ভর্তির ব্যবস্থা। আর নিয়মিত বিভাগ হিসেবে আউটডোর। দ্বিতীয় তলার অপারেশন থিয়েটারটি কবে থেকে সীলগালা তা বলতেও পারছেন না বর্তমান কর্মকর্তারা। দীর্ঘদিন ধরে তালা ঝুলছে এক্স-রে রুমেও। ফলে কর্মস্থলে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত কর্মচারীরা বিপাকে পড়েছেন বেশি। হাসপাতালের পরিসংখ্যান মতে, গেল ফেব্রুয়ারি মাসে রোগী ভর্তি হয়েছিলেন মাত্র আটজন। অথচ ওই মাসেই আউট ডোর থেকে ফ্রিতে ওষুধ নিয়ে গেছেন এক হাজারেরও বেশি রোগী। অভিযোগ আছে, সরকারী ওষুধের বেশিরভাগ লোপাট হয়ে যায় নানাভাবে। অভিযোগের বিষয়ে জবাব মেলেনি চীফ মেডিক্যাল অফিসারের কাছে। তবে তিনি বলছেন, সকল রোগীর জন্যই খাবারের সুযোগ থাকলে বেড়ে যাবে চিকিৎসা সেবার মান। হাসপাতালটিতে নানা খাতে বছরকে বছর বিপুল টাকা খরচ দেখানো হচ্ছে। কিন্তু নিশ্চিত করা যায়নি স্বাস্থ্যসেবা। অবশ্য পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×