ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিপদ কাটেনি

প্রকাশিত: ২০:০৭, ২২ আগস্ট ২০২০

বিপদ কাটেনি

জনজীবনে সবকিছু স্বাভাবিক বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যে কমেনি সেটি একদম মনেই হচ্ছে না। মানুষের ভেতর এই যে গা সওয়া ভাব সেটি শঙ্কাজনক। কোন রোগের সংক্রমণের সময় শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন। সচেতনতার ওপর জোর দেন তারা। করোনাভাইরাসের মতো ঘাতক ব্যাধির ক্ষেত্রে বারবার একই কথা বলা হয়েছে যে, আতঙ্কিত হবেন না, সতর্ক ও সচেতন থাকুন। সুরক্ষিত থাকুন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে মানুষ আংশিক কিংবা সম্পূর্ণভাবেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে চলেছে। এটি ভয়ঙ্কর। করোনাভীতির কারণে প্রথম দিকে মানুষ দুশ্চিন্তায় গৃহবন্দী হয়ে পড়েছিল। তখন ঘরে থাকাটাই ছিল নিজেকে রক্ষা করার একমাত্র উপায়। কিন্তু এখন জীবিকার প্রয়োজনে মানুষকে ঘরের বাইরে বেরুতে হয়েছে। তার মানে এই নয় যে, আমরা মুক্ত হয়ে গেলাম করোনা থেকে। বহু মানুষ এখন আর মাস্ক পরছেন না। কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্বও বজায় রাখছেন না পরস্পর হতে। এতে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে। আবারও আমরা এই সম্পাদকীয়র মাধ্যমে পাঠক তথা দেশবাসীর কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মেনে চলার। মাস্ক পরা এবং একে অপরের থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে। তাছাড়া ঘন ঘন অন্তত কুড়ি সেকেন্ড ধরে দুই হাত সাবান দিয়ে ভাল করে ধুতে হবে। এর অন্যথা হবে বিপজ্জনক। নিজের ও নিজের পরিবারের কল্যাণ চাইলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালনের কোন বিকল্প নেই। সরকার প্রথম থেকেই দেশের মানুষকে সচেতন করা থেকে শুরু করে আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে করোনাকালকে সহনীয় করার প্রয়াস নিয়েছে। মানুষ যাতে স্বল্পমূল্যে করোনা পরীক্ষা করাতে পারে সেজন্য বুধবার ফি কমানোর ঘোষণা এসেছে। এখন হাসপাতালে গিয়ে মাত্র ১০০ টাকায় করোনা পরীক্ষা করানো যাবে। আর বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ফি ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলমান মহামারীকালে করোনা মোকাবেলার প্রথম শর্তই হচ্ছে নমুনা পরীক্ষা করানো। বেশি বেশি পরীক্ষা করলে রোগ শনাক্তের ক্ষেত্রে অগ্রগতি আসে। আর তাহলেই রোগ প্রতিরোধ ও মোকাবেলা জোরদার করা সম্ভব। পরীক্ষা, শনাক্ত, আক্রান্তের উৎস বের করা এবং আক্রান্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা- এই চার মূল কৌশলের মধ্যে পরীক্ষার হার এখনও দুঃখজনকভাবে সীমিত রয়ে গেছে। আবার যতটুকু পরীক্ষা হচ্ছে তার ভিত্তিতে যারা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছে তাদের প্রায় ৮০ শতাংশই থেকে যাচ্ছে আইসোলেশনের বাইরে। সেইসঙ্গে প্রতিরোধের আরেক অপরিহার্য বিষয় হিসেবে আক্রান্ত হওয়ার উৎস খুঁজে বের করায়ও রয়ে গেছে বড় দুর্বলতা। অন্যদিকে লকডাউন, রেড জোন, কোয়ারেন্টাইন কিংবা আইসোলেশন প্রক্রিয়াগুলো কড়াকড়িভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না। অফিস-আদালত, সরকারী-বেসরকারী সব আর্থ-সামাজিক কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় চলে এসেছে; কিন্তু মানা হচ্ছে না বিধি-বিধান। এমনকি পরীক্ষায় পজিটিভ হয়েও উপসর্গহীন আক্রান্তরা চলাফেরা করছে স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ্যেই। তাদের আইসোলেশনে নেয়ারও এখন আর কোন ব্যবস্থা কার্যকর হচ্ছে না। বিদেশ থেকে মানুষ আসার সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। তাদের ক্ষেত্রে কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা পালন হচ্ছে না যথাযথভাবে। বলাবাহুল্য, এসবই আশঙ্কাজনক। আগস্টের শেষ দিকে এখন সংক্রমণের গতি ধীর হলেও এখনও তা উর্ধমুখীই আছে। ঝুঁকি তো কাটেইনি, বরং আরও বাড়ছে। তাই বেপরোয়া মনোভাব ও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করা হলে সামনে বড় বিপদ আসার আশঙ্কা রয়েছে। সে কারণে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। এদেশকে করোনামুক্ত করতে হলে প্রত্যেককেই সক্রিয় উদ্যোগী নিতে হবে। সরকারকেও কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে।
×