ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেই রাশিয়া

প্রকাশিত: ২১:২৫, ২১ আগস্ট ২০২০

সেই রাশিয়া

পূর্ব প্রকাশের পর মনটাই খারাপ হয়ে গেল। খুবই বিষন্ন সিনেমা। সবাই চুপচাপ বেরিয়ে এলাম। চত্বরে নাচগান থেমে গেছে। চারপাশ নীরব। যদিও রাত বেশি হয়নি। আজকে উইক ডে, কালকে সবারই কাজ আছে, তাই হয়তো তাড়াতাড়ি সুনসান হয়ে গেছে সব। তবে শাসলিক লেখা দোকানটা খোলা আছে এখনো। অস্কার মন খারাপ করে থাকার ছেলে না। ও বললো ‘চলো কিছু খাওয়া যাক। নাইট ইজ স্টিল ইয়াং!’ খিদেও পেয়েছে সবার। অস্কার আমাকে একপাশে ডেকে বললো ‘তোর কাছে কিছু রুবল আছে?’ আমি বললাম আছে। খাবার আর রেড ওয়াইন অর্ডার দিলাম আমরা। একটু একটু ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। এখান থেকে আমাদের চলে যাবার দিনও এসে গেল। আর বড়জোর সাত দিন। শেষ সপ্তাহটা আমরা কাজ করবো সূর্যমুখি ফুলের বাগানে। সেই কথাই হচ্ছিলো খেতে খেতে। নাদিরা কাজ করছে শহরে। ও বললো, ‘তোমাদের কী মজা- মাঠে কাজ করবে। মাঠের কাজই আমার বেশি ভালো লাগে।’ নাদিয়া আর ইলিয়েনা একই স্কুলে পড়ে, একই ক্লাসে। আমি লক্ষ্য করলাম অনেকের মধ্যে থাকলে ইলিয়েনা কথা কম বলে, শোনে বেশি। অস্কার আর নাদিয়ার মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেছে এই ক’দিনে। আসলে অস্কার এরকমই- খুব সহজেই সবার বন্ধু হতে পারে। অস্কার জিজ্ঞেস করলো, ‘স্কুল শেষ করে তুই কী করবি নাদিয়া?’ - আমি প্লেন চালানো শিখবো। নাহলে রোমানিয়ার নাদিয়ার মতো হবো। - রোমানিয়ার নাদিয়া কী করেছে? - জানিস না? এবারের অলিম্পিকে গোল্ড মেডাল পেয়েছে। জিমনাসটিক্সে। - ওরে বাবা, তাই নাকি! তুই জিমনাস্ট হবি? - হ্যাঁ। রেড ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে নাদিয়া। ইলিয়েনা এতক্ষণে কথা বললো, ‘নাদিয়া কিন্তু আমাদের স্কুলের সেরা জিমনাস্ট, জানো তো!’ - বাহ্ দারুণ! কিন্তু শোন্ নাদিয়া তুই বরং জিওফিজিক্স পড়তে আয় লেনিনগ্রাদে। - অংক পারি না রে। - আমি শিখিয়ে দেবো। অস্কারের কথায় সবাই হেসে উঠলো। অস্কার আবার বললো, ‘নাহলে তোর সঙ্গে যে আমার আর দেখাই হবে না!’ কথাটা বললো অস্কার খুব হালকাভাবে। কিন্তু এটা আসলে আমাদের সবারই মনের কথা। এর ভিতরে কোথায় যেন একটা হারানোর সুর আছে। সবার মনের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে কথাটা- বিশেষ করে যখন জানা গেল মাত্র এক সপ্তাহ বাকি, আর মাত্র এক সপ্তাহ পরেই এখান থেকে চলে যাবো আমরা। আমি এসব ভাবছি, অস্কার আলাপচারিতা চালিয়ে যাচ্ছে। জানা গেল ইলিয়েনার ইচ্ছা সে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে ইতিহাস কিংবা রাশান লিটারেচার পড়বে। তার মা স্কুলে লিটারেচার পড়াতেন। আরও কিছুক্ষণ এটা-ওটা আলাপ হলো। তারপর গ্লাসে শেষ চুমুক দিয়ে আমরা উঠে পড়লাম। একই দিকে পথ আমাদের, এক সঙ্গে ফিরে চললাম সবাই। গ্রামের নির্জন রাস্তা, মানুষজন নাই। সামনে অস্কার আর নাদিয়া হাত ধরাধরি করে যাচ্ছে, পিছনে আমরা দু’জন। রাশিয়ায় শরৎকাল চলছে। বাংলার হেমন্ত ঋতুর মতো কিছুটা, একটু হিম হিম, একটু কুয়াশা চারপাশে। কুয়াশার ভিতরে দেখা যায় গলে যাওয়া বরফের মতো ঘোলা এক টুকরো চাঁদ, যাচ্ছে আমাদের সাথে। বেশ রাত হয়েছে, কালকে কাজও আছে, তবু তেমন তাড়া নেই যেন আমাদের কারও। ধীরে সুস্থে হাঁটছি আমরা। গরম দেশে জন্ম, গরমে অভ্যস্ত আমি, রাশিয়ার শরতেই আমার শীত শীত লাগে। জ্যাকেটের চেন লাগাই, কলার তুলে দিই, পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাঁটি। ইলিয়েনা তা লক্ষ্য করে। একটু ঘন হয়ে আসে ও। আমার বাঁ হাতের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিতে নিতে নরম গলায় জিজ্ঞেস করে, ‘তোমার ঠান্ডা লাগছে?’ আমি বলি হ্যাঁ, একটু একটু। তোমার লাগছে না? না তো। আমারও এখন আর লাগছে না। আমি হাসতে হাসতে বলি। ইলিয়েনাও হাসে আমার কথা শুনে। নীল রঙের একটা পাতলা জ্যাকেট ওর গায়ে। আমার বাহু ইলিয়েনার পাঁজর ছুঁয়ে আছে। ঘন হয়ে থাকায় ওর শরীরের কোমলতা টের পাই আমি। নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবান মনে হয় আমার। মনে হয় ভাগ্যিস স্টুডেন্ট ব্রিগেডে নাম লিখিয়েছিলাম! নাহলে গোলাপের মতো সুন্দর এই মেয়ের সঙ্গে আমার দেখেই হতো না। আবার মনে হয় এর এতটা কাছাকাছি থাকার, এতটা ঘনিষ্ঠতা পাওয়ার কী এমন যোগ্যতা আছে আমার! বুঝতে পারি যোগ্যতা নয়, এই রুশ মেয়ের মনের উদারতা আর নিষ্পাপ কৌতূহলই এত সুন্দর একটা সন্ধ্যা আর রাত এনে দিয়েছে আমাকে- নেশা ধরানো এই রাত। সামনে ওরা দুজনও খুব উচ্ছ্বল হয়ে উঠেছে। জোরে জোরে কথা বলছে অস্কার আর নাদিয়া। অস্কার চাচ্ছিলো সবাই গিয়ে খোলা মাঠে কিছুক্ষণ বসি, গল্প করি, ও গিটার বাজাবে। কিন্তু মেয়েরা রাজি হলো না, সত্যিই অনেক রাত হয়ে গেছে, কাল থেকে সূর্যমুখির ক্ষেতে নতুন কাজে যেতে হবে আমাদের। একটু জোরে পা চালালো সবাই। প্রস্তাব বাতিল হলেও অস্কারের উচ্ছ্বাস কমলো না। ও উঁচু স্বরে কথা বলেই যাচ্ছে, চলতে চলতেই মাঝে মাঝে গিটারে টুংটাং শব্দ করছে। আবেগ-উচ্ছ্বাস জিনিসটা বোধহয় ছোঁয়াচে, পিছনে ইলিয়েনাও গান গাইতে শুরু করলো, তবে গুণগুণ করে। একসময় ও কবিতা বলতে লাগলো- ‘এই দুঃখ, এই তৃষ্ণা, এই সন্তাপ / সবই মিলায়ে যাবে আপেল বাগানের কুয়াশার মতো / আমিও ঝরাবো হলুদ পাতা / যেমন ঝরায় বৃক্ষ, হবো যৌবনহীন...।’ আমি জানি রুশ কবি সের্গেই ইয়েসেনিনের কবিতা এটা। থামলো ইলিয়েনা, বললো তুমি একটা কবিতা বল। আমি বললাম আমাদের আছে যৌবনের কবিতা। ইয়েসেনিনের মতো দুঃখের না, হতাশার না, আশার কবিতা। বলো তো শুনি। আমি হেলাল হাফিজের কবিতাটাকে ইচ্ছেমতো বদলে নিয়ে বলতে থাকলাম- এখন যৌবন যার / ভালোবাসার তার শ্রেষ্ঠ সময় / এখন যৌবন যার / চুমু খাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময়... কবিতা শুনতে শুনতে হাসতে শুরু করেছিল ইলিয়েনা। একসময় জিজ্ঞেস করলো সত্যি এরকম কথা লিখেছেন তোমাদের কবি? আমি বললাম ঠিক এরকম না, অনেকটা এরকম। তার মানে তুমি বানিয়ে বানিয়ে বলছো, পাজি কোথাকার! সূর্যমুখির বাগানে কাজ করার সময় ঘটলো একটা দুর্ঘটনা। বাগানটা গ্রাম থেকে বেশ খানিকটা দূরে, নদীর গা ঘেঁষেÑ নদীর নাম মিনতি। গাছ কাটা, ফুল আলাদা করা, বিজের খোসা ছাড়ানো, এরকম নানা ধরণের কাজ এখানে। তৃতীয় কি চতুর্থ দিনে শুরু হলো পরাগায়নের কাজ। সারি দিয়ে বোনা গাছে ফুটে আছে সূর্যমুখি ফুল। দুই সারি গাছের মাঝ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি আমরা। যেতে যেতে দুই হাতে দুপাশের গাছ টেনে এনে ফুল দুটোকে মুখোমুখি ছুঁইয়ে দিচ্ছি, এই আমাদের কাজ। এভাবেই পরাগায়ন ঘটানো হয় সূর্যমুখি ফুলের। কাজটা মজার। কিন্তু এখানেই ঘটলো দুর্ঘটনাটা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাজ করছিলাম আমরা। আশেপাশে ভিওস্কি গ্রামের অনেক ছেলেমেয়ে আছে, তাদের সঙ্গেই কোথাও আছে ইলিয়েনা। ক্যাস্প থেকে আমি আর অস্কার সহ আরও দু’তিনজন এসেছি। অস্কারকে দেখতে পাচ্ছি কয়েক সারি পরে। ইলিয়েনাকে খুঁজছে আমার চোখ, কিন্তু আশেপাশে কোথাও তাকে দেখতে পাচ্ছি না। হয়তো বাগানের অন্য কোনো দিকে কাজ করছে সে। শত শত একর নিয়ে বিশাল মাঠের বাগান এটা। সকালের উজ্জ্বল রোদে ঝলমল করছে সূর্যমুখির হলুদ হলুদ ফুল। হাসছে যেন দিগন্ত জোড়া মাঠ। সকাল এগারোটার মতো বাজে। আর কিছু পরে লাঞ্চের সময় হবে। তখন হয়তো আন্দ্রুশা, নাতাশার দেখা পাবো। ক’দিন ধরে তারাও এদিকে আসছে গ্রামের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে। লাঞ্চের আগে শেষ একটা ব্রেক পেলাম আমরা। আমি আর অস্কার গেলাম কাছেই নদীর ধারে। সিগারেট ধরালো অস্কার, আমাকেও একটা দিলো। কেবল দু’একটা টান দিয়েছি। হঠাৎ দূর থেকে দৌড়ে আসতে দেখলাম আন্দ্রুশাকে। নদীর পাড় ধরে ছুটে আসছে সে, আর কী যেন বলছে চিৎকার করে হাত নেড়ে নেড়ে। মনে হলো হাত দিয়ে সে নদীর দিকে ইশারা করছে। অস্কার প্রথমে বুঝতে পারলো ঘটনা। নদীর দিকে ঢাল বেয়ে কিছুটা গিয়েই ও চিৎকার করে বললো, ‘বুবকা! বুবকা পড়ে গেছে নদীতে।’ বলেই হাতের সিগারেট ছুঁড়ে ফেলে কিছুমাত্র দ্বিধা না করেই ও ঝাঁপিয়ে নামলো নদীতে। ভাবাভাবির সময় নাই। আমিও লাফিয়ে নামলাম। নেমেই টের পেলাম ভীষণ ঠান্ডা নদীর পানি। স্রোতের টানে ভেসে আসছে বুবকা এদিকে। এই ঠান্ডায় ও যদি বেশিক্ষণ থাকে, তাহলে ঠান্ডায় জমেই মরে যাবে। ওকে তুলতে হবে তাড়াতাড়ি, যে করেই হোক। অস্কার কিছুটা সাঁতরে নদীর গভীরে যেতে যেতে আমাকে বললো তুই ওদিকটাতে থাক। স্রোতও বেশ জোরালো। বুবকা অনেকটা এগিয়ে এসেছে। বেচারা ছোট ছোট পা দিয়ে সাঁতরে পাড়ের দিকে যেতে চেষ্টা করছে। দেখলাম পাড়ের কাছে গিয়ে স্রোতের ধাক্কায় আবার তাকে কিছুটা সরে যেতে হচ্ছে দূরে। এভাবে বারবার চেষ্টা করছে বুবকা। কাছাকাছি এসে পড়েছে ও। আমার আর অস্কারের মাঝ দিয়ে ভেসে যেতে দেব না আমরা বুবকাকে। দু’জনে মিলে ধরে ফেলবো ওকে। সেই মতো রেডি হচ্ছি আমরা। কিন্তু কাজটাকে কঠিন করে তুলেছে নদীর স্রোত। স্রোতের টানে এক জায়গায় স্থির থাকা যাচ্ছে না, কিছুটা নিচের দিকে সরে সরে যাচ্ছি আমরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও। এমন সময় তীর থেকে কে যেন চেঁচিয়ে উঠলো। তাকিয়ে দেখি ইলিয়েনা। ওর হাতে টেনিস র‌্যাকেটের মতো কী যেন একটা। ডান হাতে র‌্যাকেটটা মাথার উপরে ধরে তরতর করে ও নেমে এলো নদীর কিনারে। বুবকাও এদিকে এসে গেছে। আমার আর অস্কারের মাঝ বরাবর একটু সামনে সে। তখন আমি বুঝলাম ইলিয়েনার হাতে ওটা র‌্যাকেট না, মাছ রাখার ছোট জাল। বুঝতে না বুঝতেই জালটা ছুঁড়ে দিয়েছে ইলিয়েনা আমার দিকে। ধরে ফেললাম আমি ওটাকে। ইলিয়েনার দু’পাশে দাঁড়িয়ে আকুল হয়ে কাঁদছে আন্দ্রুশা আর নাতাশা। দৃশ্যটা মাথা থেকে সরিয়ে সামনের দিকে তাকালাম আমি। এসে গেছে বুবকা। আমার বাঁ হাতে জাল, ডান হাত দিয়ে স্রোত কেটে স্থির থাকতে চেষ্টা করছি। এমন সময় তীরের দিকে আবার সাঁতরাতে শুরু করলো বুবকা। একসময় সে আমার ডান দিকে এসে গেল। ভালোই হলো, আমি ডানহাতি মানুষ, জালটা ডান হাতে নিয়ে ভেসে আসা বুবকার দিকে তাক করে রাখলাম। কিছুতেই ওকে মিস করা যাবে না, কিছুতেই না...আমার চোখ বুবকার উপরে... ভাসতে ভাসতে ঠিক জালের মধ্যে এসে আটকে গেল বুবকা। এখন আমার কাজ ওকে উঁচু করে ধরে তীরে চলে আসা। ভিজে ভীষণ ভারি হয়ে গেছে বুবকার শরীর। উঁচু করে রাখতে কষ্ট হচ্ছে। ওদিকে কোমর পানি ছাড়িয়ে আরও এগিয়ে এসেছে ইলিয়েনা। একটু পরেই ও দু’হাতে উঁচু করে ধরলো জালে আটকে পড়া ভীত, দুর্বল, মৃতপ্রায় বুবকাকে। তীরে দাঁড়ানো অনেকগুলো মানুষ রুদ্ধশ্বাসে দেখছিল বুবকা উদ্ধার অভিযান। এবার সবাই এক সঙ্গে আনন্দের চিৎকার দিল। কিন্তু উদ্ধার কাজ এখনো শেষ হয়নি। বুবকা নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। ওকে তাড়াতাড়ি পশু হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। লাঞ্চ নামিয়ে দিয়ে রেডি হয়ে ছিল লাঞ্চের গাড়ি। বুবকাকে কম্বল পেঁচিয়ে ওখানে তুলে নিলো ইলিয়েনা, তারপর আন্দ্রুশা আর নাতাশাকে নিয়ে রওনা দিল হাসপাতালের দিকে। অস্কার আর আমিও যেতে চাচ্ছিলাম। আমাদের গা থেকে তখনো টপটপ করে পানি পড়ছে। সেদিকে একনজর দেখে ইলিয়েনা বললো ‘তোমরা দু’জন ভেজা কাপড় পাল্টে নাও, এখানেই থাক, বাকি কাজ আমরা পারবো।’ নদীর ধারে অনেক গাছ, সেখান থেকে ডালপালা এনে ছোট্ট একটা আগুণ জ্বালানো হলো। সেখানে কিছুক্ষণ হাত-পা সেঁকে নিলাম আমি, অস্কার এবং আরও দু’তিনজন যারা নদীতে নেমেছিল। পরে গরম স্যুপ খেয়ে চাঙ্গা হয়ে গেলাম সবাই। সেদিন সন্ধ্যায় ক্যাম্পে ফিরতেই দৌড়ে এলো আন্দ্রুশা আর নাতাশা। আমাকে আর অস্কারকে জড়িয়ে ধরলো। টানতে টানতে নিয়ে চললো পশু হাসপাতালের দিকে। গ্রামের একধারে সমবায়ের অফিস, পাশে ফার্মেসি, একটু দূরে পশু হাসপাতাল। সেখানে ডাক্তার শেভচেঙ্কো চিকিৎসা করছেন বুবকার। বেশ বয়স্ক একজন পশুচিকিৎসক তিনি। আন্দ্রুশা উচ্ছ্বসিত হয়ে তাকে বললো, এই যে অস্কার কাকা আর অপু কাকা। এরাই বুবকাকে তুলেছে নদী থেকে। শেভচেঙ্কো বুবকার কাছে নিয়ে গেলেন আমাদের। ঘুমাচ্ছে বুবকা। শেভচেঙ্কো বললেন ওর পেটে কিছু পানি ঢুকেছিল, বের করে ফেলেছি আমরা। আগামিকালই ওকে ছেড়ে দেবো। তোমরা খুব সাহসের কাজ করেছো। গ্রামের লোকেরা প্রথম থেকেই ছাত্র ব্রিগেডের ছেলেদের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করেছে। এখন বুবকা উদ্ধারের পর থেকে আমরা যেন তাদের আপনজন হয়ে গেলাম। এরপর যে ক’টা দিন আমরা ছিলাম ওখানে, গ্রামের দিকে ছাত্রদের কেউ গেলেই এবাড়ি-ওবাড়ি থেকে গল্প করার জন্য লোকে বেরিয়ে আসতো, কিংবা বাড়ির ভিতরে ডেকে নিয়ে যেত। একটা ছোট্ট কুকুরছানার নদীতে পড়ে যাওয়ার যে দুর্ঘটনা, তাই যেন ভিওস্কি গ্রামের মানুষের হৃদয়ের দরজা খুলে দিল আমাদের জন্য। (চলবে)
×