ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ২১ আগস্ট ২০২০

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার দু’দিনের আকস্মিক ঢাকা সফর নানাদিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্ববহ। উল্লেখ্য, হর্ষবর্ধন শ্রিংলা পদায়নের পূর্বে বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। তদুপরি পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে এটি তার দ্বিতীয় সফর। হর্ষবর্ধন শ্রিংলা সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ বার্তা নিয়ে এসেছেন এবং সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অন্যত্র অবস্থান করায় তার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক না হলেও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সাক্ষাত করেছেন পররাষ্ট্র সচিবসহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে। সত্য বটে, বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বৈশ্বিক নেতাদের পারস্পরিক যোগাযোগসহ দেখা-সাক্ষাত প্রায় বন্ধ। যাও বা হয় প্রধানত ভার্চুয়াল মাধ্যমে। তবু ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সেই সময়ে এলেন যখন লাদাখ সীমান্তে চীন-ভারত চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। একই সঙ্গে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত বাণিজ্যসহ পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ছে। অন্যদিকে রয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে হঠাৎ করে ফোনের মাধ্যমে করোনা মোকাবেলায় করণীয় সম্পর্কে জানতে চাওয়ার বিষয়টি। এ দুটো বিষয় নিয়েই বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যমে নানা বিচার-বিশ্লেষণসহ কূটাভাষ চলছে। তবে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিছুদিন আগে খোলাখুলিই বলেছিলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক রক্তের, যা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গভীরভাবে গ্রোথিত। অন্যদিকে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক। সেদিক থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের গভীর সখ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তাই বলে সমস্যাও কিছু কম নেই, যেগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তি, সীমান্ত হত্যা, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা বৃদ্ধি, বাণিজ্য ব্যবধান হ্রাস, সর্বোপরি ভারতীয় আট বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ঋণ দ্রুত ছাড়ের ব্যবস্থা অন্যতম। মনে রাখতে হবে, ভারত মনু নদীর পানি নিলেও ২০১৫ সালে প্রতিশ্রুত তিস্তা চুক্তি ঝুলিয়ে রেখেছে অদ্যাবধি। যে কারণে বাংলাদেশ তিস্তা নদী প্রকল্পে চীন থেকে ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ঋণ নিতে যাচ্ছে। অতঃপর এসব সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে ভারতকেই। চীন সম্প্রতি বাংলাদেশী বেশ কিছু পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে সেদেশে। ভারতের উদ্বেগ, চীনের বাণিজ্যিক সুবিধা দানের ফলে আমদানি-রফতানিতে ঘাটতিসহ ঋণের ফাঁদে পড়তে পারে বাংলাদেশ। সে অবস্থায় ভারত বাংলাদেশে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগসহ বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে সবিশেষ আগ্রহী। এখানে বলা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, দু’দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের রয়েছে উষ্ণ ও বন্ধুপ্রতিম সম্পর্ক। বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক তো আছেই। দুটো দেশই বাংলাদেশে নানাবিধ অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধাসহ সক্রিয় সহযোগিতা করছে। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আন্তঃবাণিজ্য ও কানেকটিভি স্বভাবতই বেশি। তদুপরি দু’দেশের মধ্যে রয়েছে সমুদ্রবন্দর, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন, রেল ও মহাসড়ক যোগাযোগ, যা ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও সম্প্রসারিত করছে বাণিজ্যিক সুবিধা। বাংলাদেশী পণ্যের অবাধ প্রবেশের নিশ্চয়তা উত্তর-পূর্বের ৭টি রাজ্যসহ অন্যান্য অংশে। পারস্পরিক প্রতিবেশী দেশগুলোর বাণিজ্য আরও সহজীকরণে স্থলবন্দর, রেলপথ, সড়কপথসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। বাণিজ্য কার্যক্রমের জন্য এক স্থানে সব সুবিধা (সিঙ্গেল উইনডো ফ্যাসিলিটিজ) দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে দু’দেশের পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা বৃদ্ধির আরও অবকাশ রয়েছে নিঃসন্দেহে। ভারতে তৈরি অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিন বাংলাদেশকে দেয়ার ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ অবশ্য বলেছে বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর ও সাশ্রয়ী টিকাটিই সংগ্রহ করবে, যেটি সঠিক সিদ্ধান্ত।
×