পণ্ডিত যশরাজ ছিলেন, সুর দরিয়ার উল্লেখ যোগ্য পণ্ডিত। হিন্দুস্তানি ক্ল্যাসিক্যাল সঙ্গীতের পাশাপাশি সেমি-ক্ল্যাসিক্যাল সঙ্গীতেও রয়েছে তাঁর স্মরণীয় অবদান। একাধিক চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালকের ভূমিকাতেও পাওয়া গিয়েছে তাঁকে। বাংলার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ছিল যশরাজের। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র তো বটেই, এ ছাড়াও নিয়মিত অংশ নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের নানা সঙ্গীত সমারোহে। গত শীতের কলকাতার ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্সেও মঞ্চ মাতিয়েছিলেন অশীতিপর এই শিল্পী। ১৯৩০ সালের ২৮ জানুয়ারি হরিয়ানার ফতেয়াবাদের পিল মান্দোরি গ্রামে সাঙ্গীতিক পরিবারে জন্ম যশরাজের। বাবা মতিরাম ছিলেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী। গানবাজনার সঙ্গে যশরাজের পরিচয় বাল্যেই। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত এবং তবলার তালিম। পরে তবলা ছেড়ে পুরোপুরি কণ্ঠসঙ্গীতে মনোনিবেশ এবং একাধিক প্রথিতযশা শিল্পীর কাছে তালিম নেওয়া। মেবাতী ঘরানা ছাড়াও বেশ কিছু অন্য ঘরানার পাঠও নেন তিনি। ১৯৪৬ সালে যশরাজ কলকাতায় চলে আসেন আকাশবাণীতে গান গাওয়ার জন্য। দীর্ঘদিন রেডিওয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর ১৯৫২ সালে তাঁর প্রথম মঞ্চারোহণ ২২ বছর বয়সে নেপালে। এর বছর দশেক পরে তাঁর বিবাহ হয় চলচ্চিত্রকার ভি শান্তারামের কন্যা মধুরা শান্তারামের সঙ্গে। মধুরা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে রামপুর ঘরানার শিল্পী।
তাঁর সম্পর্কে ওস্তাদ রশিদ খান স্মৃতি চারণ করে বলেন, ‘ পণ্ডিতজির কত আসরে যে বুঁদ হয়ে শুধু শুনে গিয়েছি, তার হিসেব নেই! তাঁর সঙ্গে অনুষ্ঠান করার সৌভাগ্যও হয়েছে আমার বহুবার। এমনও হয়েছে যে, সকালে গাইবেন পণ্ডিতজি। আমি তো যাবই শুনতে। উনি বারণ করছেন। বলছেন আরাম করতে। কারণ, সন্ধ্যায় ওই একই মঞ্চে আমার অনুষ্ঠান। আমি মোটেই শুনতাম না বারণ। ওঁর গান শুনব না, হতে পারে না! আবার এমনও হয়েছে, আমি গাইছি আর শ্রোতার আসনে পণ্ডিত যশরাজ! এ সৌভাগ্যও হয়েছে আমার! জীবনে ভুলব না জয়পুরের আসরের কথা। পণ্ডিতজি মিয়াঁ-কি টোড়ি গাইছেন। ললিতও হতে পারে। ঠিক মনে নেই। কিন্তু সেই আসরে শ্রোতাদের অবস্থা মনে আছে! যে শ্রোতাদের মধ্যে ছিলাম আমিও। কণ্ঠমাধুর্য যে চারপাশ কী ভাবে বদলে দিতে পারে, তার পরিচয় পেয়েছিলাম!
আট দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতীয় মার্গ সঙ্গীতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল প্রবীণ এই শিল্পীর। ‘পদ্মবিভূষণ’, ‘সঙ্গীত-নাটক অকাদেমি’সহ সরকারী-বেসরকারী বহু সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন যশরাজ। সঙ্গীত পরিবেশনার পাশাপাশি দীর্ঘদিন নিযুক্ত থেকেছেন সঙ্গীত প্রশিক্ষণের সঙ্গেও। গত ১৭ আগস্ট ৯০ বছর বয়সে পণ্ডিত যশরাজ পৃথিবী ছেড়ে অনন্তলোকে যাত্রা করেন।
আনন্দকণ্ঠ ডেস্ক
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: