ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবারও শিক্ষার্থীদের হাতে উৎসব করে বই তুলে দেয়া হবে ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ২০ আগস্ট ২০২০

এবারও শিক্ষার্থীদের হাতে উৎসব করে বই তুলে দেয়া হবে ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রতিবছরের মতো এবারও উৎসব করে বছরের প্রথম দিন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি আশা রেখে বলেন, ওই সময়ের মধ্যে দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আর এ কারণে বই উৎসবের প্রস্তুতি হিসেবে সোয়া ৭ কোটির বেশি বই মুদ্রণ বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ১৩৩ কোটি টাকা। এছাড়া জি-টু-জি প্রক্রিয়ায় দেড় লাখ টন জাহাজের জ্বালানি তেল আমদানি করবে সরকার। মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণসহ তিন প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বুধবার সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির র্ভাচুয়াল সভা শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন। ভার্চুয়াল সভায় দুটি প্রস্তাবসহ মোট তিনটি প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় ৭ কোটি ২০ লাখ ৯ হাজার ৩৭৩টি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। ১৩২ কোটি ৪১ লাখ ৫১ হাজার ৭৪৬ টাকা ব্যয়ে এসব বই সরবরাহের কাজ পেয়েছে দেশীয় ৯৮টি প্রতিষ্ঠান। অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর আমরা একটা উৎসবমুখর পরিবেশে বই বিতরণ করে থাকি। এ বছরও আমরা সেটি করব ইনশাল্লাহ। তিনি বলেন, এ কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ১ হাজার ২২টি প্রতিষ্ঠান তাতে অংশ নেয়। এরমধ্যে যাচাই-বাছাই করে ৯৮ জনকে এসব বই সরবরাহের কাজ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে যাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং দরপত্রে কম দাম উল্লেখ করেছে তাদেরই কাজ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সময়মতো বই সরবরাহ ও সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করতে যারা বই সরবরাহের কাজ পেয়েছে তাদের কাছ থেকে সিকিউরিটি মানি নেয়া হবে ১০ শতাংশ। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সিকিউরিটি মানি আরও বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল কিন্তু সবকিছু বিবেচনা করে সেটি কার্যকর করা হয়নি। আগেরটাই রাখা হয়েছে। আমরা আশাকরি সরবরাহকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো বই সরবরাহ করবে। প্রসঙ্গত, গত ১৭ মার্চ থেকে করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। কবে খুলবে সে ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম ও পাঠদান শুরু করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে করোনার প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমে আসায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ইতোমধ্যে দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালত খুলে দেয়া হয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। তবে আশা করা হচ্ছে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতি হয়তো স্বাভাবিক হয়ে আসবে। নতুন বছরের প্রথমদিন ১ জানুয়ারি সব কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে। ওইদিন উৎসব করে বিতরণ করা হবে। দেড় লাখ টন জাহাজের তেল আমদানি করা হবে ॥ জাহাজের জ্বালানি তেল আমদানি করবে সরকার। জি-টু-জি প্রক্রিয়ায় এসব তেল আমদানিতে সরকারের খরচ হবে প্রায় ৪৩৮ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেন, জি-টু-জি ভিত্তিতে যে ৭৫ হাজার টন মেরিন ওয়েল আমদানির একটি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে এর জন্য ব্যয় হবে ২১৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। জি-টু-জি সরবরাহকারী সংস্থা সিঙ্গাপুরভিত্তিক পিটিটি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং লিমিটেড। এছাড়া ৭৫ হাজার টন মেরিন ওয়েল জি-টু-জি ভিত্তিতে সংগ্রহের জন্য ছয়টি জি-টু-জি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে কোটেশন চেয়ে গত ২৫ জুন বিপিসি চিঠি দেয়। এর জবাবে চারটি প্রতিষ্ঠানের সাড়া পাওয়া যায়। এদের মধ্যে পিটিটি ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড সর্বনিম্ন কোটেশন দাতা হয়। তারাই ৭৫ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল সরবরাহ করবে। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, সরকার চলতি বছরের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে আরও ৭৫ হাজার টন মেরিন ফুয়েল (০.৫ শতাংশ সালফার) আমদানির প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম কম হওয়ায় জি-টু-জি ভিত্তিতে এসব তেল আমদানি করলে সুবিধা হবে। তাই ৭৫ হাজার টন মেরিন ফুয়েলও জি-টু-জি ভিত্তিতে আমদানির জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ জন্য ব্যয় হবে ২২২ কোটি টাকা। মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ ॥ পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) ‘ভুলতা আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর সড়কে মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প নীতিগত অনুমোদনসহ মোট তিনটি প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। অর্থমন্ত্রী বলেন, ঢাকা থেকে আড়াইহাজার- বাঞ্ছারামপুর হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ভারতের আগরতলার সঙ্গে দ্রুত সময়ে যোগাযোগের জন্য ‘ভুলতা-আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর সড়কের মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পটি প্রকিউরমেন্ট গাইডলাইনস পর পিপিপি প্রজেক্ট ২০১৮ এর ধারা অনুযায়ী পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়নে অনুমোদনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হলে তাতে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি আমরা শুধু নীতিগত অনুমোদন দিয়েছি। সরকার টু সরকার (জি টু জি) বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপেও (পিপিপি) যদি হয় তাতে কোন আপত্তি নেই। এটার বিস্তারিত কিছু নেই। ব্রিজটি হওয়া দরকার এজন্য নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘৩৫টি ড্রেজার ও সহায়ক জলযানসহ আনুষাঙ্গিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের প্যাকেজ-০২ (লট-১ ও লট-২) এর আওতায় ১৭টি টাগবোট সংগ্রহের লক্ষ্যে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুকরণের প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া নীলফামারী জেলার সাবেক জুট ট্রেডিং কর্পোরেশন (জেটিসি) বর্তমান বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশন (বিজেসি) এর মেসার্স হৃদকরণ নামীয় অঙ্গনের ০.০৯ একর সম্পত্তি ক্রেতা বরাবর রেজিস্ট্রি দলিল প্রদানের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
×