ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যায় ফসলের ক্ষতি এক হাজার ৩২৩ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ২২:৪১, ২০ আগস্ট ২০২০

বন্যায় ফসলের ক্ষতি এক হাজার ৩২৩ কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশের গত কয়েক মাসের তিনদফায় বন্যায় ৩৭ জেলায় মোট ১ হাজার ৩২৩ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া ফসলি জমির পরিমাণ ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৪৮ হেক্টর, যার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮১৪ হেক্টর। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১২ লাখ ৭২ হাজার ১৫১ জন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঘুরে দঁাঁড়াতে কয়েক কোটি টাকার প্রণোদনাও দিচ্ছে সরকার। বুধবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে বন্যায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ও তা মোকাবেলায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী। এ সময় কৃষিসচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মোঃ আরিফুর রহমান অপু, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবদুল মুঈদ উপস্থিত ছিলেন। কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বন্যায় ক্ষতি হওয়া ফসলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩২ হাজার ২১৩ হেক্টর জমির আউশ ধান, ৭০ হাজার ৮২০ হেক্টর জমির আমন ধান এবং ৭ হাজার ৯১৮ হেক্টর জমির আমন বীজতলা। টাকার হিসাবে আউশ ধান ৩৩৪ কোটি, আমন ধান ৩৮০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও সবজির ক্ষতি হয়েছে ২৩৫ কোটি টাকা এবং পাট ২১১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ বছর বন্যার পূর্বাভাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাসহ সকলেই ছিলেন সতর্ক। ফসলের ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য কৃষককে দেয়া হয়েছিল প্রয়োজনীয় পরামর্শ। প্রথম দফায় ২৫ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত ১৪ জেলায় বন্যায় ৪১ হাজার ৯১৮ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রথম দফার বন্যায় ৩৩৯ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি এবং তিন লাখ ৪৩ হাজার ৭৫৭ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় ১১ জুলাই থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত ৩৭টি জেলায় ৩৪টি ফসলের এক লাখ ১৬ হাজার ৮৯৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতির পরিমাণ ৯৭৪ কোটি টাকা, আর নয় লাখ ২৯ হাজার ১৩৯ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা ক্ষতি পুষিয়ে যেন আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য বিভিন্ন প্রণোদনার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে ১৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকার কৃষি উপকরণ ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৩১ জন ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এর আওতায় স্বল্পমেয়াদী ও মধ্যমেয়াদী বিভিন্ন শাকসবজি চাষের জন্য প্রায় ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫২ হাজার কৃষককে লালশাক, ডাটাশাক, পালং শাক, বরবটি, শিম,শশা, লাউবীজ ইত্যাদি বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। কমিউনিটি ভিত্তিক বীজতলার মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা, প্রায় ৭০ লাখ টাকার ভাসমান বেডে এবং ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে রোপণের জন্য আমন ধানের চারা উৎপাদন/বীজতলা তৈরি ও বিনামূল্যে বিতরণ কাজ চলছে। সেই বীজতলা থেকে চারা নিয়ে কৃষকেরা আমন রোপণ করছেন। কৃষিমন্ত্রী বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আমন চাষ সম্ভব না হলে মাসকালাই বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এর আওতায় ৩৫ জেলায় ৫০ হাজার কৃষককে তিন কোটি ৮২ লাখ টাকার মাসকালাই বীজ, ডিএপি, এমওপি সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। আব্দুর রাজ্জাক আরও জানান, প্রায় ৭৫ কোটি টাকার প্রণোদনা কর্মসূচী প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ অর্থ দিয়ে ৯ লাখ ২৯ হাজার ১৯৪ জন ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক কৃষককে গম, সরিষা, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী, খেসারি, পেঁয়াজ, মরিচ, টমেটো ইত্যাদি ফসল আবাদের জন্য বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ সরবরাহ করা হবে। মন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারিবারিক কৃষির আওতায় সবজি-পুষ্টি বাগান স্থাপন কর্মসূচীর আওতায় ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ ২২ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬৪ জেলায় মোট ১ লাখ ৪১ হাজার ৭৯২ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ/ চারা ও সার সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এর বাইরে ২০২০-২১ অর্থবছরে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন কর্মসূচী প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে রাজ্জাক বলেন, এর আওতায় ১৫২ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬৪ জেলায় ৪৯১টি উপজেলার চার হাজার ৫৯৭টি ইউনিয়ন ও ১৪০টি পৌরসভার চার লাখ ৭৩ হাজার ৭০০ কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়া হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় বীজ, সারসহ বিভিন্ন প্রণোদনামূলক কার্যক্রম বেগবান, তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত ও যুগ্ম-সচিবদের নেতৃত্বে ১৪টি কমিটিতে ৭০ জন কর্মকর্তা কাজ করছেন বলে জানান মন্ত্রী। কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ এর অধীন সকল দফতরসমূহ করোনা ঝুঁকির মধ্যেও অত্যন্ত সজাগ, সক্রিয় রয়েছে। যে কোন পরিস্থিতিতে আমরা কৃষকের পাশে থেকে বাংলাদেশের কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর। আমরা বন্যার ক্ষতি মোকাবেলায় যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, আবার বন্যা না হলে, ক্ষতি বহুলাংশে কাটিয়ে উঠা যাবে এবং এই ক্ষতি আমাদের খাদ্য উৎপাদনে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে আশা করেন। আবারও বন্যার পানি বাড়ায় একটু চিন্তা থাকলেও কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক বলেন, আমি মনে করি এটা (বন্যা) খুব একটা বেশি দিন থাকবে না, তাড়াতাড়ি পানি নেমে যাবে। প্রকৃতি সব সময়ই আমাদের একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখে। প্রকৃতির ঝুঁকিকে আমরা ইচ্ছে করলেই এড়াতে পারি না। এটা বিবেচনায় রেখেই আমরা আশা করছি (এই বন্যার ফলে) সার্বিকভাবে দেশে খাদ্য উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না এবং আমরা বড় কোন সঙ্কটে পড়ব না। মন্ত্রী বলেন, বাংলার কৃষকসহ এ দেশের মানুষ আজীবন সংগ্রামী, অপরাজেয়। যেকোন বিপদ মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস ও মনোবল তাদের আছে। সরকারের সহযোগিতায় মহামারী করোনা, সুপার সাইক্লোন আমফান, চলমান দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় সৃষ্ট ক্ষতি ও চ্যালেঞ্চ মোকাবেলা করে আবার তারা ঘুরে দাঁড়াবে, সামনে এগিয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কৃষিবান্ধব সরকার সরবসয় কৃষকদের পাশে আছে অতীতেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সব দুর্যোগ মোকাবেলা করে খাদ্য উৎপাদন ধারা অব্যাহত শুধু নয় বরং তা আরও বৃদ্ধি করার প্রত্যাশা করেন কৃষিমন্ত্রী।
×