ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উন্নয়ন-বিনিয়োগে বন্ড

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ২০ আগস্ট ২০২০

উন্নয়ন-বিনিয়োগে বন্ড

বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারিত হলেও ভয়াবহ করোনাভাইরাসের কারণে বাস্তবে অর্জিত হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। সিপিডির মতো দু’একটি সংস্থা এ নিয়ে প্রশ্ন তুললেও বাংলাদেশের প্রবাসী আয়, কৃষি, শিল্প, সেবা, রফতানি, বিনিয়োগ- প্রায় সব খাতেই প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক ধারা পরিলক্ষিত হয়েছে। যে কারণে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ, এডিবি পর্যন্ত বলেছে, করোনায় প্রায় সমগ্র বিশ্ব ভয়াবহ মন্দাবস্থায় নিপতিত হলেও বাংলাদেশ আর্থিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। সরকারও দীর্ঘ লকডাউনজনিত আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উদাহরণত বলা যায়, পোশাকশিল্পসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়ানোর নিমিত্ত এক লাখ কোটি টাকার বেশি আর্থিক প্রণোদনাসহ স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ প্রদানের ঘোষণা। দ্বিতীয়ত, এ সময়ে প্রবাসী আয়ে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি এবং বোরোর বাম্পার ফলনে খাদ্য বিপর্যয়ের সমূহ সম্ভাবনা এড়ানো গেছে। সরকার মেগা প্রকল্পগুলো চালিয়ে নিতে সদিচ্ছুক। যে কারণে বিপুল অর্থ সংস্থান ও বিনিয়োগ প্রয়োজন। সদ্য ঘোষিত জাতীয় বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সরকারের ৮৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা ঋণ প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সরকারের প্রধান ভরসা সঞ্চয়পত্র ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। তবে দুঃখজনক হলো, মূলত সুদের হার কমে যাওয়ায় গত কয়েক বছরে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে ৭১ শতাংশ। গত অর্থবছর শেষে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে দেশে বিশেষ করে বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার ব্যাংকগুলো থেকেও ঋণ নিতে বিশেষ আগ্রহী নয়। সে অবস্থায় পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ অন্তত ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ সংস্থানের বিকল্প উৎস হিসেবে বিভিন্ন ধরনের ‘বন্ড’ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ট্রেজারি বিল এবং ওভার ড্রাফট ইস্যু করে অর্থ সংগ্রহ করা। এ জন্য ব্যাংকগুলোতে খোলা হবে আলাদা কাউন্টারও। অন্যদিকে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্যও ব্যাংকগুলোতে খোলা হয়েছে তিন ধরনের সঞ্চয় স্কিম, যাতে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। উল্লেখ্য, একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে চলমান মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা যায় কিনা, তা নিয়ে ভাবতে বলেছিলেন সংশ্লিষ্টদের। বলতেই হয়, এটি একটি নতুন চিন্তা, নতুন ভাবনা। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বর্তমানে বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ উন্নয়নশীল দেশ হলেও বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজনে ঋণ নিতে হয় বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক, জাপান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত ও অন্যান্য দেশ থেকে। তবে পদ্মা সেতুতে তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক প্রতিশ্রুত ঋণ প্রত্যাহার করে নেয়ার পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে বাংলাদেশ বিদেশী ঋণনির্ভরতা কমাতে অনেকাংশে উদ্যোগী হয়ে ওঠে। নিজস্ব অর্থায়নে স্বউদ্যোগে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে আশাব্যঞ্জক সাফল্য অর্জনের পর আস্তে-ধীরে হলেও প্রতিবছর জাতীয় বাজেট ঘোষণাসহ প্রকল্প বাস্তবায়নেও কমিয়ে আনা হচ্ছে বিদেশী ঋণনির্ভরতা। বিদেশ থেকে প্রাপ্ত ঋণের সুদহার কম হলেও শেষ পর্যন্ত তা বিদেশী ঋণই এবং নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ সাপেক্ষ। অন্যদিকে দেশীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে তা সরকারের পরিচালন ব্যয়সহ প্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থ মেটানো হলে একদিকে যেমন দেশের টাকা দেশেই থেকে যায়, অন্যদিকে লভ্যাংশও থাকে। অনেকটা এই চিন্তা থেকেই প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাব, আর এই প্রেক্ষাপটেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে সভেরন ওয়েলথ ফান্ড বা সার্বভৌম সম্পদ তহবিল গঠনের উদ্যোগ।
×