ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডাঃ শাহজাদা সেলিম

ডায়াবেটিসে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন

প্রকাশিত: ০০:৪৭, ১৮ আগস্ট ২০২০

ডায়াবেটিসে বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন

সারা পৃথিবী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মহামারীতে আক্তান্ত যা সার্স কোভ২ ভাইরাস দ্বারা সংঘটিত মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ। সোমবার বিকেলে জেনেভায় সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্বের ১৫৩টি দেশ বা অঞ্চলে মোট ১ লাখ ৭০ হাজার ১২৭ জন মানুষ এ ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মোট মৃত মানুষের সংখ্যা ৬ হাজার ৫২৬। বাংলাদেশে মোট আটজন এ ভাইরাসে আক্রান্ত বলে নিশ্চিত করেছে সরকার, যাদের মধ্যে প্রথম দফায় আক্রান্ত তিনজন ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন; হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২ জন শিশুসহ ৫ জন। করোনাভাইরাসের শিকার যে কোন মানুষই হতে পারেন; তবে ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা লোকদের এ ঝুঁকি অনেক গুণ বেশি। হার্ট ফেইলর, কিডনি ফেইলর, হাঁপানি ইত্যাদিতে যারা ভুগছেন তারাও অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে চলছেন। ডায়াবেটিসের রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, রোগ হলে তার সঙ্গে লডাই করার সক্ষতা হ্রাস পায়। ফলশ্রুতিতে, একই সঙ্গে বসবাস করা অন্যান্য মানুষের তুলনায় ডায়াবেটিস থাকলে আপনি চট করেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন। যাঁদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি তারা করোনাভাইরাসের সহজ শিকার। ভাবতে চেষ্টা করা হচ্ছিল শিশু-কিশোররা মনে হয় করোনায় খুব একটা আক্রান্ত হবে না; কিন্তু তাও আর বলা যাচ্ছে না। অন্য দেশে তো বটেই, বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৮ জনের মধ্যে ২ জনই শিশু। ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণের মাত্রা (এইচবিএওয়ানসি) সঠিক ভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বোঝাতে সহায়তা করতে পারে। অর্থাৎ যার ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ যত খারাপ (এইচবিএওয়ানসি যত বেশি) তার রোগে ভোগার সম্ভাবনা তত বেশি। বাংলাদেশের প্রায় ৮০% ডায়াবেটিসের রোগীর রক্তের গ্লুকোজ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি (তাদের সবাই ভাইরাস সংক্রমণের বাড়তি ঝুঁকিতে)। আবার যারা অনেক বছর ধরে ডায়াবেটিস নিয়েই বেঁচে আছেন, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও পর্যুদস্ত। সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছেন যে সব ডায়াবেটিসের রোগীর কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে, একই সঙ্গে হৃদযন্ত্রও যথেষ্ট রক্ত পরিসঞ্চালনে ব্যর্থ এবং রক্তের গ্লুকোজ বেশি। বরাবরের মতোই, সকল ডায়াবেটিসের রোগীর রক্তের গ্লুকোজের মাত্রায় নিয়ে আসা অতীব জরুরী এবং যারা মুখে সেবনের ওষুধ নির্ভরতা কমিয়ে ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করতে থাকবেন, তার বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীতে ডায়াবেটিস রোগীর আশু করণীয় : * করোনাভাইরাস সংক্রমণের সামান্যতম লক্ষণ দেখা দিলেও সরকার নির্দেশিত কেন্দ্রগুলোতে রোগ শনাক্তকরণ ও পরবর্তী সেবার জন্য দ্রুত চলে যাওয়া। * কাল ক্ষেপণ না করে অতি সত্তর রক্তের গ্লুকোজ লক্ষ্য মাত্রায় নিয়ে (এইচবিএওয়ানসি <৭%) যাবার উদ্যোগ নেয়া। * যদি সিমটম হয়ে থাকে (জ্বর, কাশি) তা হলে নিজেকে নিজে আলাদা করাই শ্রেষ্ট। শরীর বেশি খারাপ না হলে হাসপাতালে না যাওয়াই ভাল। ৮০% মানুষ কোন হাসপাতালে ভর্তি ছাড়াই ভাল হয়ে যাবে। ১৪ দিন নিজেকে আইসোলেট করে থাকবেন। * বয়স্ক লোকজনের মধ্যে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। বয়স্ক কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে ভর্তি করার কারণ আছে। কারণ তাদের অনেকেরই আইসিইউ সাপোর্ট লাগবে। * এবারের সবচেয়ে সমস্যা হলো লক্ষণহীন রোগীরা। জার্মানিতে অনেকে আছে যাদের পাওয়া গেছে কোন কাশি নেই, কোন জ্বর নেই, কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা যায় তাদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে। ইতালিতেও এমন অনেক পাওয়া গিয়েছে, এমনকি যুক্তরাজ্যেও। এ নিয়ে সব চেয়ে বড় ভয় এটাই যে একদম নর্মাল, ফিট মানুষজন করোনাভাইরাস নিয়ে ঘুরছে। এখন বলা যাচ্ছে না তাদের থেকে অন্যদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু। * স্যানিটাইজার ভাল হলেও, মার্কেটের অধিকাংশ স্যানিটাইজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ এ্যালকোহল নেই (যেটা পান করে ওই এ্যালকোহল না)। সাবান দিয়ে হাত ধোন, বেশি বেশি ধোন। অতিরিক্ত করতে চাইলে বরং হেক্সাসল টাইপের কিছু ব্যবহার করুন। ঘরের বাইরে স্যানিটাইজার ব্যবহার করলেও মুখে হাত দেবেন না যতক্ষণ না কোথাও গিয়ে হাত ধুতে পারবেন। * বিদেশ ফেরত বন্ধু বা আত্মীয়কে এক সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইন করে দিন। ভাল হলে ভাল। কোন কাটি বা জ্বর হলে আরও এক সপ্তাহ আইসোলেট করবেন। * বড় সমাবেশ/ লোক সমাগম থেকে দূরে থাকাই ভাল। কোন কনফারেন্স বা পার্টিতে যাবেন না। * সব কিছু এত তাড়াতাড়ি হচ্ছে যে আমরা সব এখনো জানি না। নতুন তথ্য অনেক আসছে। বিশেষজ্ঞ দের যাচাই করতে দেন। লেখক : সহযোগী অধ্যাপক এন্ডক্রাইনোলজি বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়য়, ঢাকা
×