ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ১৮ আগস্ট ২০২০

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তখনও নামেনি সন্ধ্যা। জ্বলে ওঠে মঞ্চের আলো। ভেসে বেড়ায় সুরের ¯্রােতধারা। সেই সুরেলা শব্দধ্বনিকে সঙ্গী করে শুরু হয় পরিবেশনা। আলোকিত মঞ্চে মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সম্মিলনে উপস্থাপিত হয় সুন্দরতম দৃশ্যকল্প। ইতিহাসকে আশ্রয় করে এগিয়ে চলে নৃত্যালেখ্যর ঘটনাপ্রবাহ। ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা/কারো দানে পাওয়া নয়’ শিরোনামের মাধ্যমে নৃত্যশিল্পীরা ফুটিয়ে তোলেন ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট। এরপর নাচের মাধ্যমে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় উঠে আসে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। এ সময় নেপথ্যে গীত হয় ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি। যুদ্ধদিনের বীরত্বগাথার সঙ্গে পাকবাহিনীর ঘটানো গণহত্যার পর্বটিও মেলে ধরেন নৃত্যশিল্পীরা। এরপর দেখানো হয় বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন দেশের যাত্রাপর্ব। ঘটনাক্রমে উঠে আসে পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট। বিশ্বঘাতকদের ষড়যন্ত্রে সপরিবারে জাতির পিতার খুন হওয়ার বেদনার্ত অধ্যায়টিও বর্ণিত হয় নাচের আশ্রয়ে। এ সময় বেজে ওঠে ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি’ শীর্ষক সঙ্গীত। পরের ধাপে সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’ কবিতার ‘আমি জন্মেছি বাংলায়/আমি বাংলায় কথা বলি’ পঙ্ক্তিমালার মাধ্যমে উঠে আসে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথরেখায় এগিয়ে চলা সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীদের পরিবেশিত নৃত্যালেখ্যটির শিরোনাম ছিল ‘গঙ্গাঋদ্ধি থেকে বাংলাদেশ’। সোমবার বিকেলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে পরিবেশনাটি উপস্থাপিত হয়। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কবি কামাল চৌধুরী রচিত ‘টুঙ্গীপাড়া গ্রাম থেকে’ শিরোনামের আবৃত্তি করেন সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার সঙ্গে বিশিষ্টজনদের আলোচনায় সজ্জিত ছিল স্বাধীনতার মহান স্থপতিকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের আয়োজনটি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি হিসেবে অনলাইনে আলোচনায় অংশ নেন আসাদুজ্জামান নূর। একইভাবে প্রধান আলোচক হিসেবে অনলাইনে বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয় কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। এছাড়া সরাসরি আলোচনায় অংশ নেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী এবং শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। স্মারক বক্তৃতা করেন সংস্কৃতি সচিব মোঃ বদরুল আরেফীন। সভাপতির বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- শুধুমাত্র কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্যদের দ্বারা হযনি। এটি পরিকল্পিত হত্যাকা- ছিল। পাকিস্তানীরা ২৩ বছরে যা করতে পারেনি, স্বাধীন বাংলাদেশে ঘাতকরা সেই জঘন্য কাজটি করেছে। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি লজ্জিত। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ একটি মহাকাব্য। যার রূপকার ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তাই তাকে হত্যা করা হলেও তার সেই আদর্শের মৃত্যু হয়নি। তার কাক্সিক্ষত সোনার বাংলা অর্জনের পথে এগিয়ে চলেছে দেশ। আলোচনায় জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দিয়ে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, একাত্তরের শুরুতে তিনি পাকিস্তানীদের পক্ষে কাজ করেছেন। এর প্রমাণ পাওয়া যায়, চট্টগ্রামে জাহাজে আসা পাকিস্তানী অস্ত্র তিনি খালাস করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রতিরোধের মুখে তখন পিছিয়ে আসতে বাধ্য হন। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারি জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের তিনি নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমকে নাগরিকত্বও তিনিই দিয়েছেন। প্রসঙ্গক্রমে নূর বলেন, কয়েকজন বিপথগামী সেনা সদস্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিলÑএটি একটি ভুল তথ্য। আমাদের বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের মূল জায়গায় যাওয়া প্রয়োজন। ওই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যের কুশীলবদের ভূমিকাকে সবার কাছে তুলে ধরতে হবে। তা না হলে বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ আমরা শোধ করতে পারব না।
×