ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুপ্রীমকোর্টের এফিডেভিট সেকশনে অভিযান

প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ১৮ আগস্ট ২০২০

প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুনীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টের এফিডেভিট সেকশনের অভিযান বিষয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। সুপ্রীমকোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানিয়েছেন, অভিযানের নেতৃত্বদানকারী আপীল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী সেকশনের কার্যক্রম নিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের কাছে লিখিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন। এদিকে রবিবারের অভিযানের পর এফিডেভিট সেকশনের পরিস্থিতি এখন অনেকটাই পাল্টে গেছে। সোমবার সেকশনে দেখা গেছে, সবাই সামাজিক- শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করছেন। এছাড়া সবাইকে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে, যাতে সবাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন। অর্থাৎ রবিবার যে পরিস্থিতি ছিল তার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। প্রধান বিচারপতি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারই অংশ হিসেবে রবিবার সুপ্রীমকোর্টের ২ নম্বর প্রশাসনিক ভবনে ঝটিকা অভিযান পরিচালিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে সুপ্রীমকোর্টের একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ চলে আসছিল। রবিবার সুপ্রীমকোর্টের ২ নম্বর প্রশাসনিক ভবনে ঝটিকা অভিযান পরিচালিত হয় এবং প্রাথমিকভাবে সেখানে ৪৩ জনকে আটক করা হয়। অবশেষে সুপ্রীমকোর্ট বার সমিতির সম্পাদকের মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। অভিযানটি পরিচালনা করেন আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানিয়েছেন, এই পরিদর্শন কার্যক্রম বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী একটি লিখিত প্রতিবেদন তৈরি করবেন এবং তা প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের কাছে উপস্থাপন করবেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির আনা বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নির্দেশে আপীল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী সুপ্রীমকোর্টের এ্যাভিডেভিট শাখা পরিদর্শন করেন। বিচারপতির সঙ্গে রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শনকালে এ্যাভিডেভিট শাখায় অধিক জনসমাগম দেখতে পান। এ সময় সেখান থেকে ৪৩ ব্যক্তিকে শনাক্ত করেন। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসা করে জানা যায়, তাদের মধ্যে ৩৫ জন আইনজীবীর ক্লার্ক এবং আটজন বহিরাগত। বহিরাগতরা আইনজীবী ক্লার্কদের সহায়তায় এ্যাফিডেভিট শাখায় প্রবেশ করে। বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী এই ৪৩ জনকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন। এই মুহূর্তে ক্লাকদের হৈচৈ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ঘটনাস্থলে আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল আসেন। পরে তিনি তাদের নাম-ঠিকানা নিয়ে সতর্ক করে মুচলেকার মাধ্যমে ছেড়ে দেন। এ্যাফিডেভিট শাখায় এ ঘটনায় বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী একটি লিখিত প্রতিবেদন প্রধান বিচারপতির নিকট উপস্থাপন করবেন। যাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে তাদের মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এবং এই মর্মে মুচলেকা দিয়েছেন, এ্যাফিডেভিট শাখায় ভবিষ্যতে কোন শৃঙ্খলাভঙ্গ করবেন না। এছাডা এ্যাফিডেভিট শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও সতর্ক করা হয়েছে। সুপ্রীমকোর্টের এ্যাফিডেভিট শাখাসহ বিভিন্নœ শাখায় দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ প্রধান বিচারপতির কাছেও দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতি সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেবেন। গত ৮ আগস্ট আইনজীবী সমিতি এ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে আশ্বাস দেয়, সুপ্রীমকোর্টের বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইনজীবীদের আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ঢালাওভাবে নয়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে কোন ছাড় দেয়া হবে না। অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন, তারই অংশ হিসেবে রবিবার এ্যাফিডেভিট শাখায় অভিযান চালানো হয়।
×