ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

২৭ জন পুলিশ ক্যাম্পে আটক

ভিয়েতনামে বাংলাদেশী কর্মীদের এখনও ফেরানো যায়নি

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ১৮ আগস্ট ২০২০

ভিয়েতনামে বাংলাদেশী কর্মীদের এখনও ফেরানো যায়নি

ফিরোজ মান্না ॥ দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে ভিয়েতনামে প্রতারণার শিকার বাংলাদেশী কর্মীদের দেশে ফেরানো এখনও সম্ভব হয়নি। ২৭ কর্মী পুলিশ ক্যাম্পে আটক রয়েছেন। দেশে ফেরত আনার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখছে। এখানে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বেশি কিছু করার নেই। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই কর্মীদের দেশে ফেরত আনার পরিবর্তে ভিয়েতনাম পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। পরে যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্মীদের দেশে ফেরত আনার কথা বলেছে। কিন্তু কোন উদ্যোগ এখনও নেয়া হয়নি। এদিকে প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করে এমন আটটি সংগঠন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ভিয়েতনামে আটক কর্মীদের দেশে ফেরত আনার। একই সঙ্গে তারা দালাল চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিও করেছেন। সূত্র জানিয়েছে, দালাল চক্র জনপ্রতি সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা করে নিয়ে বিএমইটি (জনশক্তি প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর ছাড়পত্র) থেকে তাদের কর্মী হিসেবে কার্ড সংগ্রহ করেছে। এরপর সহজেই তাদের ভিয়েতনাম নিয়ে গেছে। কাউকে আবার পাঠানো হয় পর্যটক ভিসায়। প্রতারক চক্র তাদের মোটা বেতনের চাকরির লোভ দেখিয়ে দেড় হাজারের বেশি কর্মীকে দেশটিতে পাঠায়। ভিয়েতনামে নিয়ে তাদের বাংলাদেশী দালাল চক্রের হাতে তুলে দেয়। সেখানে তারা কোন কাজ না পেয়ে ২৭ কর্মী ভিয়েতনামে বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে দেশে ফেরার জন্য সহযোগিতা চান। কিন্ত সহযোগিতা পাননি। এখন তারা ভিয়েতনাম পুলিশের হাতে আটক রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে বিএমইটি কিভাবে ভিয়েতনামে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন কার্ড দিল। দেশটিতে বাংলাদেশের কোন শ্রমের বাজার নেই। আর এই কর্মীদের গার্মেন্টস মালিকরাই অনুমতি নিয়ে ভিয়েতনাম নিয়েছেন। এখানে কোন রিক্রুটিং এজেন্সির প্রয়োজন হয়নি। ভিয়েতনামে ১০ দালালের সিন্ডিকেট ও ছয়টি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতারণা করে যাচ্ছে। দালাল চক্রের ১০ সদস্যই ভিয়েতনামে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তারা দেশে এজেন্ট নিয়োগ করে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কর্মীদের উচ্চ বেতনে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ভিয়েতনাম নিচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থা দু’টি ইতোমধ্যে ময়মনসিংহের এক দালালের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলাও করেছে। ২৭ বাংলাদেশী ভিয়েতনামের বিভিন্ন ক্যাম্পে দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে বিভিন্ন ক্যাম্পে আটক রেখেছে। দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস, পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় তাদের দেশে ফেরানোর কোন দায়িত্ব নিচ্ছে না। যদিও তারা বিএমইটির সব নিয়ম মেনে স্মার্ট কার্ডসহ ভিয়েতনামে কাজের অনুমতি নিয়েই গেছেন। কিন্ত সেখানে গিয়ে তারা প্রতারণার শিকার হন। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের সব নিয়ম মেনে বিদেশে কোন নাগরিক গিয়ে যদি কাজ না পান তাহলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আইনেই আছে তাদের রিক্রুটিং এজেন্সি ফেরত নিয়ে আসবে। তারা যদি কোন কারণে না আনতে পারে সেক্ষেত্রে সরকার উদ্যোগ নিয়ে নাগরিকদের দেশে ফেরত আনতে বাধ্য। কিন্ত এই ২৭ বাংলাদেশীর ক্ষেত্রে দূতাবাস, পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কেউ দায়িত্ব নিচ্ছে না। তারা একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। এ অবস্থায় ২৭ বাংলাদেশীর দেশে ফেরার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত ৩ জুলাই ভিয়েতনাম থেকে ১১ বাংলাদেশী শূন্য হাতে দেশে ফিরে এসেছেন। তাদেরই একজন লালমনিরহাটের মোঃ কামাল। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে ভিয়েতনামে গিয়েছিলেন তিনি। তবে ভাগ্য বদল তো হয়নি, উল্টো বিপদ নেমে এসেছে তার জীবনে। ধার করে ৪ লাখ টাকা দিয়ে ভিয়েতনামে যাওয়ার সাত মাস পরই ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
×