ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ১৮ আগস্ট ২০২০

করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই

রশিদ মামুন ॥ মহামারী প্রতিরোধী ভ্যাকসিন হয়ে উঠেছে বিশ্ব রাজনীতির অংশ। প্রথমদিকে ক্ষমতাধর দেশগুলো করোনা মোকাবেলার ওষুধ নিয়ে স্থায়ুযুদ্ধে জড়িয়েছিল। এখন রাজনীতির বড় অংশজুড়েই রয়েছে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তার চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণের লড়াইয়ে নেমেছে দেশগুলো। এতে ভ্যাকসিনের প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। ভ্যাকসিন ছাড়া বৈশ্বিক মহামারী প্রতিরোধে আর কোন বিকল্প নেই। মুখে খাওয়ার ওষুধ আবিষ্কারে ১০ থেকে ১৫ বছর সময় প্রয়োজন। এজন্য বিকল্প হিসেবে দ্রুততম সময়ে ভ্যাকসিন আবিষ্কারে মনযোগী বিশ্বের বিজ্ঞানীরা। বিশ্বে অনেক ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর ভ্যাকসিন এখনও আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কয়েক মাসের মধ্যেই ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে। কিন্তু এই ভ্যাকসিন মানবদেহের জন্য নিরাপদ কিনা তা ঘোষণা দিতে কয়েক ধাপের পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন হয়। যদিও এসব পরীক্ষার আগেই ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিচ্ছে দেশগুলো। রাশিয়া গত শনিবার কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনের প্রথম ব্যাচের উৎপাদনের ঘোষণা দিয়েছে। এর ঠিক দুদিন পর সোমবার চীন তাদের প্রতিষ্ঠান ‘ক্যানসিনো বায়োলজিকসকে’ ভ্যাকসিনের পেটেন্ট অনুমোদন দিয়েছে। চীনের বার্তা সংস্থা এ খবর নিশ্চিত করেছে। রাশিয়া এবং চীনের মধ্যে এই ¯œায়ু যুদ্ধই বলে দিচ্ছে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড়ে প্রথম হওয়ার জোর প্রচেষ্টা চলছে। গত ২৬ জুন চীন তাদের আবিষ্কৃত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়। তখন চীনের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয় সারা বিশে^ তারাই প্রথম করোনা ভ্যাকসিন বাজারে আনতে যাচ্ছে। এর দু’মাসের কিছুটা কম সময় আগে গত ১১ আগস্ট রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন তাদের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনের অনুমোদনের কথা ঘোষণা করে বলেন, আমরাই সারা বিশে^ প্রথম কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছি। ভ্যাকসিন নিয়ে মস্কো এবং বেজিং পরস্পর পরস্পরকে টপকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বিশে^র অন্য আবিষ্কারকরা এদের মতো সরব না হলেও ভেতরে ভেতরে ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের ট্রায়েল শেষ করে দ্রুত ঘোষণা দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। বৈশি^ক মহামারী প্রতিরোধে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ের সারা গিলবার্টের দলের আবিষ্কার করা ভ্যাকসিনটির দিকে সকলের নজর ছিল। এছাড়া মার্কিন কোম্পানি মর্ডানা এবং ফাইজার এবং জার্মানির এনবায়োটেক নিয়েও আলোচনা ছিল। কিন্তু এদের পেছনে ফেলতেই দ্রুত বেজিং এবং মস্কো এই তৎপরতা শুরু করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স চীনের পিপলস ডেইলির এক খবর উল্লেখ করে বলছে চীনের ন্যাশনাল ইনটেলেকচুয়াল প্রোপার্টি এ্যাডমিনিস্ট্রেশন গত ১১ আগস্ট টিকার পেটেন্ট অনুমোদন দিয়েছে। টিকা বাজারজাত করার আগেই এর মেধাস্বত্ব অনুমোদন নিতে হয়। যাতে অন্য কেউ এটিকে নিজের বলে দাবি করতে না পারে। তবে পেটেন্ট অনুমোদনের আগে তা কতটা নিরাপদ তা যাচাই করা উচিত বলে মনে করা হয়। খবরে চীন বছরের শেষ নাগাদ কোভিড-১৯ এর এই ভ্যাকসিন বাজারে আনার বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছে। কিন্তু ভ্যাকসিনটি আদৌ নিরাপদ কিনা তা জানতে তৃতীয় ধাপের ট্রায়েল চালানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। চলতি মাস থেকে সৌদি আরবে শুরু হচ্ছে এটির তৃতীয় ধাপের ট্রায়েল আর চীনের ক্যানসিনো বলছে, রাশিয়া, ব্রাজিল এবং চিলির সঙ্গে ভ্যাকসিনটির তৃতীয় ধাপের ট্রায়েল শুরুর বিষয়ে তাদের আলোচনা চলছে। মস্কো এবং বেজিং-এর এই তৎপরতার মধ্যে অন্য আবিষ্কারকরাও ভ্যাকসিন উৎপাদন এবং বাজারজাত করার সময় এগিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। অবশ্য আগে থেকেই বলা হচ্ছে প্রতিদিন যেভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে আর আক্রান্ত হচ্ছে তাতে দেড় বছরের জায়গায় এক বছর সময় নিয়ে টিকা বাজারে ছাড়া হবে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়েলের ক্ষেত্রে প্রথম ধাপে ২০ থেকে ২৫ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৫০০ জন আর তৃতীয় ধাপে তিন থেকে পাঁচ হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। বেশি সংখ্যক মানুষের ওপর প্রভাব বিবেচনা করতে অন্তত তিন মাস সময় প্রয়োজন হয়। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়েল শেষেই বলে দেয়া হচ্ছে টিকাটি করোনা প্রতিরোধী এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়। দ্রুত ক্লিনিক্যাল ট্রায়েল চালানো হলেও বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, চলতি বছরের মধ্যে ভ্যাকসিন বাজারে আসা সম্ভব নয়। তবে উৎপাদকরা বলছে, দ্বিতীয় ধাপের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই তারা ভ্যাকসিন উৎপাদন করছে। তৃতীয় ধাপের ট্রায়েল শেষ হলেই ভ্যাকসিন বাজারজাত করা হবে। এক্ষেত্রে তৃতীয় ট্রায়েল সফল না হলে এই ভ্যাকসিন ধ্বংস করে ফেলারও ঘোষণা দিয়েছে কেউ কেউ। বিশে^ এখন ১৭৪টি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ হচ্ছে। এর মধ্যে চীন এবং রাশিয়া দুটি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছে। আর তৃতীয় ধাপের ট্রায়েলে রয়েছে আরও আটটি ভ্যাকসিন। এই আটটি ভ্যাকসিন আবিষ্কারকরাই তৃতীয় ধাপের ট্রায়েল শেষে প্রথম হওয়ার লড়াইয়ে নেমেছে। এছাড়া ফেইজ-১ এ ২০টি এবং ফেইজ-২ এ ১১টি ভ্যাকসিন রয়েছে। আর প্রিক্লিনিক্যাল পর্যায়ে রয়েছে ১৩৫টি ভ্যাকসিন।
×