ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ১৮ আগস্ট ২০২০

ঢাকার দিনরাত

সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রবিবার এ কলাম লেখার দিন জনকণ্ঠ ভবনে আসার পথে সড়কে যে অভিজ্ঞতা হলো তা কিছুটা দুশ্চিন্তার। মার্চে দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার আগে শুক্র-শনি দুদিন ছুটিশেষে রবিবারে ঢাকা জেগে উঠলে যেমন দেখতাম সেরকমই। সব গণপরিবহন আর প্রাইভেটকার যেভাবে রাজধানীর প্রধান সড়কে নেমে পড়ল, পরিস্থিতি সে সময়ের চাইতে এতটুকু কম নয়। বনানী ওভারপাসে যানজটে আটকা থাকলাম কুড়ি মিনিট। তেজগাঁওয়ের রাস্তার পুরোটাই গাড়ির আধিক্য, তাই মন্থর গতিতে এগুতে হলো সেই বনানী চেয়ারম্যানবাড়ী-মহাখালী থেকে শুরু করে একেবারে হাতিরঝিলের উড়াল সড়কের কাছাকাছি পর্যন্ত। করোনাভাইরাস প্রতিদিনই মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে তার যেন তোয়াক্কাই নেই! বাধ্য হয়েই বলতে হচ্ছে যে, করোনাভাইরাস বিদায় নেয়নি। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং নিজের সুরক্ষা বজায়ে করণীয় কড়াকড়িভাবে পালনের আবশ্যকতা শেষ হয়ে যায়নি। এখানে বিন্দুমাত্র শিথিলতা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। অফিস আদালতে যথাযথভাবে স্বাস্থ্য বিধিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা সেটি তদারকিতে যদি কোথাও শিথিলতা এসে থাকে তবে আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ, জুন মাসে সুদীর্ঘ ছুটিশেষে যে কড়াকড়িভাবে ভাইরাসের মোকাবেলা করেছেন সবাই, তেমনটাই সদাসতর্ক ও সিরিয়াস হোন। কার্যালয়ে আগত প্রতিটি কর্মী ও দর্শনার্থীদের পরিহিত জুতা থেকেও সংক্রমণ হতে পারে। তাই ভাইরাসমুক্ত করার সুবন্দোবস্ত থাকা চাই। প্রবেশদ্বারে শুধু দুই হাত ধোয়ার বা স্যানিটাইজার ব্যবহারের ব্যবস্থা থাকাটাই সব নয়। যিনি প্রবেশ করছেন তিনি মাস্ক পরিহিত কিনা, তার দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক কিনা সেসব নিরীক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতিটি কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তথা প্রশাসনকেও সার্বক্ষণিকভাবে সতর্কতার সঙ্গে ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করায় ভূমিকা রাখতে হবে। করোনাভাইরাস অদৃশ্য, তাই বলে এটির অস্তিত্ব অস্বীকার করা মানে ভয়ঙ্কর নির্বুদ্ধিতা। গত কয়েকদিন ক্রমাগতভাবে সংক্রমণ এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। তাই বেপরোয়া চলাফেরা সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে, এমনটি ভেবে প্রতিটি নাগরিককে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। পথেঘাটে হাটেবাজারে প্রচুর মানুষের আনাগোনা এবং আগের মতোই যানজট শুরু হওয়ায় অনেকেই ভাবতে পারেন যে এই তো আমরা স্বাভাবিক জীবনে প্রবেশ করলাম। কিছুদিনের মধ্যে প্রতিষেধক টিকাও চলে আসবে। তাই আর সাবধানতার দরকার নেই। মাস্ক পরলে গরম লাগে, তাই ওসব বাদ। বার বার হাত ধোয়া এখন অপ্রয়োজনীয়।Ñ যদি সত্যিই এমনটাই কেউ ভেবে থাকেন তাহলে বিরাট ভুল করবেন। স্বাস্থ্যবিধি কেউ না মানলে তাকে সতর্ক করার দায়িত্ব নিকটজনের এবং কাছে চলাচলকারী অপরিচিত মানুষেরও। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনা বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেয়ার পথে। আক্রান্ত বিবেচনায় করোনায় মৃত্যুহার দেশে অনেক কম। ভ্যাকসিন ছাড়াই দেশ এখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার পথে। তার কথা তিনি বলেছেন। আপনার কাজ আপনি করুন। আপনি নিজে সাবধান থাকুন, প্রিয় পাঠক। মাস্ক পরুন, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোন। অন্য ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন। সাবধানের মার নেই। ফলোআপ গণপরিবহন গত সপ্তাহে ঢাকার গণপরিবহনের অনিয়ম, স্বাস্থ্যবিধি ও শর্তভঙ্গ করে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানো এবং প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় নিয়ে লিখেছিলাম। বলেছিলাম, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই কঠোর হয়ে যাত্রীদের বাঁচাতে হবে। যেহেতু এখনও পর্যন্ত দেশে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি রয়ে গেছে ব্যাপকভাবে, তাই গণপরিবহনে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করতে হবে। অতিরিক্ত যাত্রী বহন করলেই মোটা অঙ্কের জরিমানা করা চাই। এটাই হবে নিয়ম ভাঙ্গা পরিবহন কর্তৃপক্ষের শাস্তি। সরকারের বেঁধে দেয়া অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাত্রীরা যখন গণপরিবহনে উঠছে তখন তাদের অধিকার রয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কথিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে গন্তব্যে যাওয়ার। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য বিরাট কোন কাজ করতে হবে না। ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে অতিরিক্ত টহলদার পুলিশ দেয়া। প্রতিটি বাস কোম্পানির দু-চারটি বাস তদারকি করে দেখা। অনিয়ম পেলেই মোটা অঙ্কের জরিমানা করা। মাত্র কয়েকটি দিন এমন অভিযান পরিচালনা করলেই অবস্থার বিপুল উন্নতি দেখা যাবে বলে আমার বিশ্বাস। সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকা করার পরামর্শ তো দিয়েই রেখেছেন আমাদের মুরব্বিরা। অনিয়মকারীদের শাস্তি দেয়া হলে তারা তো অখুশি হবেই। কিন্তু সন্তুষ্ট হবেন ঢাকার হাজার হাজার যাত্রী। তারা সরকারকে ধন্যবাদই দেবেন তাদের সুরক্ষার দিকে সুনজর আছে দেখে। এতে শেষ পর্যন্ত সরকারেরই লাভ। লাভক্ষতির কথা না হয় বাদ দিলাম। মানুষ বাঁচাতে হবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছে গণপরিবহন। তাই এর একটা বিহিত অবশ্যই করা চাই। বুধবারে পুলিশকে তৎপর দেখলাম সড়কে। জাহাঙ্গীর গেটের সামনে বাঁয়ে মোড় ঘুরতেই আমাদের বাস আটকাল একজন পুলিশ। ফুটপাথ ঘেঁষেই চেকপোস্ট। পুলিশ উঠে এলেন বাসের ভেতর। আগেই লক্ষ্য করেছিলাম আমাদের বাসটিতে অতিরিক্ত যাত্রী নেই। দুইজনের সিটে দুজন নয়, একজনই বসেছেন। তাই বাস ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু দেখা গেল একজন যাত্রীর মুখে মাস্ক নেই। পুলিশ নেমে তার অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে উঠলেন। ওই যাত্রীকে নামিয়ে দেয়া হলো বাস থেকে। কাগজপত্র নিয়ে বাসচালককেও নেমে যেতে হলো ওই চেকপোস্টের ভেতর। তার আগে পুলিশ সদস্য ভিডিও করলেন। এ সময়েই লক্ষ্য করে দেখলাম আমাদের বাসের পাশ দিয়ে একই কোম্পানির আরেকটি বাস সামনে চলে যেতে। প্রায় প্রতিটি দুই সিটে দুজন করেই যাত্রী বসা। তার মানে হলো স্বাস্থ্যবিধি ও শর্ত ভঙ্গ করে যে বাসটি চলছে সেটি বাধার মুখে পড়ল না। পেছনের কোন চেকপোস্টে বাধার মুখে পড়লে ওই বাসের ভেতর অতিরিক্ত যাত্রী থাকতে পারত না। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে দায়সারাভাবে ঢাকায় গণপরিবহন চেক হচ্ছে, তবে সেটি যে প্রয়োজনের তুলনায় অতিনগণ্য, তা বলাই বাহুল্য। অথচ দরকার ছিল বিশেষ এ্যাকশন। কেননা কোভিড হাসপাতালের পরে গণপরিবহনেই করোনার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। করোনা কেড়ে নিল দেশের খ্যাতিমান শিল্পীকে স্ত্রীর মৃত্যুর পর নিজেও ছিলেন অসুস্থ। নাকে অক্সিজেন পাইপ লাগানো ছবিটাই এখন শুধু চোখে ভাসছে। বলছি অনেক ঘটনার জন্ম দেয়া প্রাণবন্ত এক চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীরের কথা। মহাবিখ্যাত পিতা ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহের পুত্র পরিচয়ে খ্যাতিমান হতে চাননি যিনি। নিজের কর্ম দিয়েই বিশিষ্ট হতে চেয়েছিলেন। তবে মুডি ও অঘটনপটিয়সী হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছিলেন তারুণ্যে। অনেকেই হয়ত জানেন না যে মুর্তজা বশীর সাহিত্যচর্চাও করেছেন। লিখেছেন কবিতা-গল্প-উপন্যাস। সাহিত্যিক হবেন, নাকি শিল্পী, যুবাবয়সে দোটানায় ছিলেন। বিশেষ ঝোঁক ছিল প্রাচীন মুদ্রা সংগ্রহে। শেষ পর্যন্ত করোনাই তাঁকে কেড়ে নিল। দুদিন বেঁচে থাকলে আটাশিতম জন্মদিন পালন করতেন ভক্তেরা তাঁকে সঙ্গে নিয়েই। কন্যার নিজ হাতে তৈরি কেক কাটতেন। এখন কেবল বেদনাগাথা। তাঁর উল্লেখযোগ্য সিরিজের ভেতর রয়েছে দেয়াল, এপিটাফ ফর দ্য মার্টায়ার্স, পাখা, কালেমা তৈয়েবা প্রভৃতি। পনেরো আগস্ট প্রয়াত হন শিল্পী মুর্তজা বশীর। শোককে সাময়িক চাপা দিয়ে তাঁর অন্তিম বিদায়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি লিখতে কলম তুলে নেন বেশ ক’জন খ্যাতিমান শিল্পী। এদের ভেতর আছেন মুস্তাফা মনোয়ার, হাশেম খান, রফিকুন নবী, আবুল মনসুর, আফজাল হোসেন, গৌতম চক্রবর্তী। এমনটাই তো প্রাপ্য তাঁর। বছর পনেরো আগে মুর্তজা বশীরের জীবনী লেখার কাজে বহুবার গেছি তাঁর ঢাকার মনিপুরিপাড়ার বাসায়। মুর্তজা বশীরের জীবনী লেখার উদ্দেশ্যে প্রথম যেদিন তাঁর বাসায় যাই সেদিন আমাকে তিনি অবাক করে দিয়েছিলেন সেই নব্বুই দশকে যোজন গ্যালারিতে তাঁর একক আত্মপ্রতিকৃতি প্রদর্শনী নিয়ে আমারই লেখার কপি ফাইল থেকে বের করে। আত্মপ্রেমিক ও আত্মসচেতনই বলা যায় তাঁকে। তাই নিজেকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কপি তিনি সংরক্ষণ করতেন। ইতালি ও লাহোরে দুই নারীর সঙ্গে তার সম্পর্কের গল্প রাখঢাক না করেই তিনি আমার কাছে প্রকাশ করেন যা ‘শিল্পী মুর্তজা বশীরের জীবন’ বইটিতে লিপিবদ্ধ করেছি। অবশ্য এসব বলার আগে আমার সামনেই বড় কন্যাকে ফোন করে তার মত জানতে চান। কন্যার কাছে এমনভাবে বিষয়টি তিনি উপস্থাপন করেছিলেন যে আমার ধারণা কন্যাটির পক্ষে অসম্মতি জ্ঞাপনের কোনো সুযোগই ছিল না। যাহোক, ঢাকার চারুকলার প্রথম দিককার শিক্ষার্থী মুর্তজা বশীর কলকাতায় গেলেন নন্দনতত্ত্ব পড়তে। আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার আগেই যোগ দেন কমিউনিস্ট পার্টিতে। হাইস্কুলের ড্রইং শিক্ষকের চাকরি পেয়েছিলেন ঢাকায় ফিরে। বয়স মাত্র বাইশ। এরপর ইতালিতে যান শিল্পকলায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্যে। ইতালি যাত্রার টিকেট কিনেছিলেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রতিনিধির কাছে ছবি বিক্রি করে। লন্ডন ও প্যারিসÑ শিল্পীদের আরাধ্য এই দুই মহানগরীতে শিল্পী হিসেবে অসামান্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন। বিদেশে শিল্পশিক্ষা শেষে ঢাকায় ফিরে কর্মসুযোগ পাননি। সে সময়ে ঢাকায় ছবির বাজার গড়ে ওঠা তো দূরের কথা, প্রাসঙ্গিক কোনো একটা কাজ করে যে শিল্পী গ্রাসাচ্ছাদন করবেন, সেই পরিবেশও তৈরি হয়নি। ফলে একান্ত বাধ্য হয়েই পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে লাহোর আর্ট কাউন্সিলে শিল্পকলার শিক্ষকের চাকরি পান কবি ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের উদ্যোগে। ধীরে ধীরে শিল্পী হিসেবে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হন। পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে যোগ দেন। তৎকালীন বাঙালির একরৈখিক লাইফস্টাইলের ভেতর জীবন ছিল তাঁর ব্যতিক্রমী, ঘটনাবহুল, উপন্যাসোপম। সমাজসজ্ঞান ছিলেন তিনি। স্পষ্টভাষী এই শিল্পী লুকোছাপা না করে নিজ জীবনের অগ্রহণযোগ্য প্রসঙ্গও তুলে ধরেছিলেন আমার কাছে। তাঁর অনুরাগী বা পাঠকের কাছে অকপট পরিচয়ই প্রকাশ করা তার অভিপ্রায় ছিল। তাঁর জীবনী লেখার জন্যে সর্বশেষ অধিবেশনে রেকর্ডার চালু করে প্রশ্ন করবো, ঠিক সে সময়েই তিনি স্বগতোক্তির মতোই বলেছিলেন, এত যশ খ্যাতি পাওয়ার পরেও এই তেয়াত্তর বছর বয়সে এসেও অন্নচিন্তা দূর হয় না। জাঁ ককতোর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছিলেন, বুর্জোয়া সমাজব্যবস্থা প্রতিভাবানকে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু কেড়ে নেয় তাঁর বাঁচার অধিকার। তবে তিনি দীর্ঘজীবনই পেয়েছেন, তেমন অর্থাভাবও ছিল না। দেশের আরো একজন মাস্টার পেইন্টারের মৃত্যু শিল্পভুবনকে বিষণœ করলো। বঙ্গবন্ধু স্মরণ পনেরো আগস্ট জাতির পিতার মৃত্যুবার্ষিকী। সাড়ে চার দশক অতিক্রান্ত হলেও সেই শোক ও ক্ষোভ যেন প্রশমিত হচ্ছে না। হবার নয়ও। তবে একটি বিষয় লক্ষণীয়Ñ এখন বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করা হচ্ছে আরও নিবিড় ও বুদ্ধিদীপ্তভাবে। এখানে আবেগের বাড়াবাড়ি নেই। তরুণ প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের মহানায়ককে তাৎপর্যপূর্ণভাবে তুলে ধরার প্রয়াস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে শিল্পসম্মতভাবে। পনেরো আগস্টে অফিসে আসার পথে দেখলাম সড়কে সড়কে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সংবলিত পোস্টার। বহু স্থানেই তাঁর ভাষণ বাজানো হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বলা মোটেই সহজ কাজ নয়। তাঁর প্রতিটি উচ্চারণ মহাকাব্যিক। কোন সাধারণ আলোচনায় বঙ্গবন্ধুকে পূর্ণাঙ্গভাবে উপস্থাপন করা যাবে না। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বলতে গেলে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেনÑ ‘ঐ মহামানব আসে/দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে/মর্তধূলির ঘাসে ঘাসে।...’ কবিগুরুর এ মহামানব যেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একজন বরেণ্য কবি আমাদের মনে করিয়ে দেনÑ হাজার বছরের পরাধীন বাঙালী জাতিকে তিনি দিয়েছেন স্বাধীনতা, দিয়েছেন মুক্তির স্বাদ। বঙ্গবন্ধু তাঁর সৃষ্ট দেশের জাতীয় সঙ্গীত করেছেন কবিগুরুর গানকে; কাজী নজরুল ইসলাম থেকে নিয়েছেন ‘জয় বাংলা’। জনকণ্ঠ পত্রিকায় জাতীয় শোক দিবসের আয়োজনে জাতির পিতার পূর্ণাঙ্গ জীবনী লেখার তাগিদ বিষয়ে যে নিবন্ধটি লিখেছি তার একটি স্তবক এ কলামের পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। লিখেছিÑ স্বদেশ, স্বকাল, সংগ্রাম ও নেতৃত্বÑ এ চারটি বিষয়কে সার্বিকভাবে শিল্প-সাহিত্যে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে জীবনী ও উপন্যাসই হতে পারে সর্বোৎকৃষ্ট আঁধার। এ ব্যাপক গভীর কাজের জন্য প্রয়োজন অফুরান উপাদান। বঙ্গবন্ধু স্বয়ং তাঁর তিনটি রচনায় তার সঙ্কেত রেখে গেছেন। তাঁকে আবিষ্কার এখনও চলমান। অনাবিষ্কারের সীমাবদ্ধ ভূমিতে দাঁড়িয়ে চিরকালীন পূর্ণাঙ্গ প্রকাশনা অসম্ভব। আব্রাহাম লিংকনের জন্য কলম তুলে নেন স্বদেশী কালজয়ী কবি কার্ল স্যান্ডবার্গ, নেলসন ম্যান্ডেলার জন্য ব্রতী হন বিশিষ্ট ব্রিটিশ লেখক-সাংবাদিক এন্থনি স্যাম্পসন। তাই বিশ্ব পেয়েছে ইতিহাসের দুই মহানায়কের দুটি তাৎপর্যপূর্ণ সম্পূর্ণ জীবনীগ্রন্থ। আমাদেরর চাই তেমন সুযোগ্য, পরিশ্রমী, নিবেদিতপ্রাণ সাহিত্যবোদ্ধা জীবনী লেখক। তবেই বাংলা মায়ের নাড়ির ধন গভীর গহন পূর্ণপ্রাণ বঙ্গবন্ধুর পূর্ণাঙ্গ জীবনী পাবে বাংলাদেশ, পরে অনুবাদকর্মে গোটা বিশ্ববাসী। প্রতীক্ষায় রয়েছে মহাকাল। ১৬ আগস্ট ২০২০ [email protected]
×