ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিএডিসি

৩ জেলার সেচ উন্নয়নে ২৩১ কোটি টাকা ব্যয় করবে সরকার

প্রকাশিত: ২১:৫৯, ১৭ আগস্ট ২০২০

৩ জেলার সেচ উন্নয়নে ২৩১ কোটি টাকা ব্যয় করবে সরকার

ওয়াজেদ হীরা ॥ খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার ১৩টি উপজেলার সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে ২৩১ কোটি টাকা ব্যয় করবে সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন’ নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। খাল পুনর্খনন ও প্রয়োজনীয় সেচ অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে ২৭ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে ভূ-উপরিস্থ পানির সাহায্যে প্রতিবছর অতিরিক্ত প্রায় ৬৫ হাজার ৬২০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন সম্ভব হবে। এছাড়াও প্রকল্প এলাকা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করা হবে। সম্প্রতি এই প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়। খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার সদর, কুমারখালী, খোকসা, ভেড়ামারা, মিরপুর, দৌলতপুর, চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর, আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা, জীবননগর এবং মেহেরপুর জেলার সদর, গাংনী ও মুজিবনগরে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, প্রবীণদের অনেকেই জানেন কুষ্টিয়ায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পের কথা। বিশাল সেচ প্রকল্প এখানে ছিল। পাকিস্তানের সময় করা হয়েছিল এ প্রকল্প। এখনও অনেক জমি ওই প্রকল্পের বাইরে আছে। সেখানে আরও ভাল করার প্রয়োজন আছে। এ জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প নিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, গভীর নলকূপের যে চাষাবাদ করছি আমরা, সেটা পরিবেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যায়। ফলে আমাদের ওপরের মাটিও দেবে যায়। ক্ষতি হয়। আমরা চাচ্ছি, গভীর নলকূপ থেকে ধীরে ধীরে সরে আসতে। এ জন্য আমরা চাচ্ছি মাটির ওপরের পানি হিসেবে নদী, নালা, পুকুর, বিল, জলাশয়, প্রাকৃতিক পানি প্রথমে যেখানে ধারণ হয়, এসব পানি আমরা বেশি ব্যবহার করতে চাই। তার মানে গভীর নলকূপের জায়গায় আমরা লো লেফট পাম্প ব্যবহার করব। এটা হলো একটা আইডিয়া এই প্রকল্পের। আরেকটি বিষয় হলো, লো লেফট পাম্প চালানো হয় বিদ্যুত দিয়ে। আমরা চাই এখানে সৌরবিদ্যুত ব্যবহার করতে। তাই এই প্রকল্পের একটা উপাদান হলো সৌরবিদ্যুত। আমরা অনেক পাম্প বসাব, তার অনেকগুলো চলবে সৌরবিদ্যুতে। প্রকল্পের উদ্দেশ্যগুলো হলো-২২০ কিলোমিটার খাল পুনর্খনন করা। ১৩০টি বিদ্যুত/সৌরশক্তি চালিত লো-লিফট পাম্প (এলএলপি) স্থাপন ও প্রয়োজনীয় সেচ অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে ২৭ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে ভূ-উপরিস্থ পানির সাহায্যে সেচ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে প্রতিবছর অতিরিক্ত প্রায় ৬৫ হাজার ৬২০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ত্বরান্বিতকরণ। সেচ কাজে নবায়নযোগ্য সৌরশক্তির ব্যবহার করা। আধুনিক সেচ প্রযুক্তি প্রয়োগ ও কৃষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেচ দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ভূ-উপরিস্থ পানি নির্ভর সেচ কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধি করা। প্রকল্প এলাকায় আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচন করা। কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মোঃ সায়েদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের কৃষির অনেক কাজ হবে। কৃষকদের অনেক সুবিধা হবে। গ্রেটার কুষ্টিয়া অঞ্চলটা বীজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সবচেয়ে বড় বীজের খামারও এই অঞ্চলে। এখানে সবজিসহ ‘হাইভেল্যু’ ফসল কৃষকরা উৎপন্ন করে। দেশে এভারেজ শস্যের নিবিড়তা দুয়ের কাছাকাছি আমরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে এই অঞ্চলে গড়ে সেটি তিনের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চাই, সেটি আমাদের একটি লক্ষ্য থাকবে। বিএডিসি’র চেয়ারম্যান সায়েদুল ইসলাম আরও বলেন, এই অঞ্চলে যে নদী আছে পানি উন্নয়ন বোর্ডও অনেকগুলো সংস্কার করেছে আমরা পানির উৎসগুলো ব্যবহার করব ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করে। যে সব জায়গায় একেবারেই পানি নেই সেখানে একটা ব্যবস্থা নেব যাতে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার না করতে হয় আবার বৃষ্টির পানিও পাওয়া যায়। সেচের মাধ্যমে যেন কৃষক সবজি বা অন্যান্য ফসল ফলাতে পারে। ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহারের পরিবেশ সুবিধা আছে, শস্যের নিবিড়তা বাড়বে, অনেক ফসল উৎপাদন করতে পারব। কৃষকদের সেচের খরচ কমে আসবে এতে কৃষি কৃষকদের জন্য অনেকলাভজনক হবে বলেন বিএডিসি চেয়ারম্যান। প্রকল্পের প্রধান কাজগুলো হলো- ৫১টি খাল ২২০ কিলোমিটার পুনর্খনন করা। বিদ্যুত/সৌরশক্তি চালিত লো-লিফ্ট পাম্প (এলএলপি) স্থাপন করা ১৩০টি (৫ কিউসেক ২৫টি, ২ কিউসেক ৫০টি, ১ কিউসেক-৩০টি, ০.৫ কিউসেক ২৫টি)। পুরাতন গভীর নলকূপ মেরামত/সংস্কার-৪৮টি। এলএলপি/গভীর নলকূপের ভূ-গর্ভস্থ সেচ নালা নির্মাণ ১৭৮টি (১ হাজার ৫০০ মিটারের ৭৩টি, ১ হাজার ২০০ মিটারের ৫০টি, ১ হাজার মিটারের ৩০টি, ৮০০ মিটারের ২৫টি)। ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা বর্ধিতকরণ ২২৫টি (প্রতিটি ৬০০ মিটার)। সৌরশক্তি চালিত পাতকূয়া নির্মাণ করা ১৩০টি। ছোট/মাঝারি/বড় আকারের সেচ অবকাঠামো নির্মাণ ৪৩৫টি (ক্রস ড্যাম/ফুট ব্রিজ, ক্যাটল ক্রসিং) (বড় আকারের-১৫ টি, মাঝারি আকারের ১২০টি, ছোট আকারের ৩০০টি)। প্রি-পেইড মিটার ক্রয় ৫০টি, পাম্প টেস্টিং ল্যাবরেটরি স্থাপন একটি এবং অফিস ভবন নির্মাণ দুইটি (প্রতিটি ৪ হাজার বর্গফুট)।
×