ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাশিয়া ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ উৎপাদন করেছে

প্রকাশিত: ২১:৫৮, ১৭ আগস্ট ২০২০

রাশিয়া ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ উৎপাদন করেছে

রশিদ মামুন ॥ রাশিয়া কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের প্রথম ব্যাচ উৎপাদন করেছে। রাশিয়ার গামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ উৎপাদন করেছে। রাশিয়ার তরফ থেকে বলা হয়েছে গণহারে এই ভ্যাকসিন উৎপাদন শুরু হবে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে। বছরের শেষ নাগাদ ২০০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন বাজারে ছাড়তে চায় রাশিয়া। দেশটির বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স এবং ভ্যাকসিনটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট স্পুটনিক ডট কম সূত্রে এ খবর জানা গেছে। বৈশ্বিক মহামারী প্রতিরোধে রাশিয়া সম্প্রতি স্পুটনিক ভি নামে ভ্যাকসিনটির অনুমোদন দেয়। ভ্যাকসিনের অনুমোদনের সঙ্গে এর তৃতীয় ধাপের ট্রায়েল শুরুর ঘোষণা দেয় দেশটি। স্পুটনিক ডট কম বলছে, রাশিয়া এই ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্বের প্রবল আগ্রহ পর্যালোচনা করছে। মূলত এই আগ্রহের ভিত্তিতেই রাশিয়ার ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (আরডিআইএফ) ভ্যাকসিন উৎপাদনে অর্থায়ন করছে। আরডিআইএফের তরফ থেকে বলা হচ্ছে এই ভ্যাকসিন আবিষ্কারে নিরাপদ এবং কার্যকর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এর আগেও অন্য ভ্যাকসিন তৈরিতে একই প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছে। ফলে ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা নিয়ে রাশিয়া কোনভাবে সন্দিহান নয়। প্রথম উৎপাদিত ভ্যাকসিনগুলো চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের দেয়া হবে। এরপর সাধারণ মানুষ এই ভ্যাকসিন পাবে। চলতি মাসের শেষ নাগাদ প্রাণী এবং মানুষের ওপর চালানো ভ্যাকসিনটির ফলাফল জানাবে রাশিয়া। ভ্যাকসিনটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বলছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রাজিল এবং ফিলিপিন্সে তৃতীয় ধাপের ট্রায়েল হচ্ছে। এছাড়া নিজস্ব অর্থায়নে ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল, তুর্কমিনিস্থান এবং কুবা ভ্যাকসিনটি উৎপাদন করবে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে এই উৎপাদন শুরু হবে। বছরের শেষ নাগাদ ২০০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদন করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে রাশিয়াতে ৩০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে। ইন্টারফ্যাক্স তাদের খবরে বলছে, আগস্টের শেষ নাগাদ এই ভ্যাকসিন সরবরাহ শুরু করতে চায় রাশিয়া। ভ্যাকসিনের প্রস্তুতকারক গামেলিয়া ইনস্টিটিউট বলছে আগামী জানুয়ারি নাগাদ তারা পাঁচ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে। গামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সঙ্গে রাশিয়ার আরও দুটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ভ্যাকসিন উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে। রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে ইন্টারফ্যাক্স এই খবর প্রকাশ করেছে। গামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আলেকজেন্ডার গিনটসবার্গ বলেছেন, তাদের ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ গ্রহণ হবে। প্রথম ডোজ গ্রহণের দ্বিতীয় সপ্তাহে অন্যডোজটি গ্রহণ করতে হবে। তাদের তৈরি করা ভ্যাকসিনটির নাম হবে গাম কোভিড ভ্যাক। কেন দুই ডোজ গ্রহণ করতে হবে সে বিষয়ে গিনটসবার্গ বলেছেন, সর্বোচ্চ কার্যকরিতা পেতেই ভ্যাকসিনের দুই ডোজ গ্রহণ করতে হবে। কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বলছে তাদের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনটির একক ডোজ গ্রহণ করতে হবে। তবে অনেক উদ্ভাবকই বলছে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নিতে হবে। তবে রাশিয়ার আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না করায় সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। ভ্যাকসিনটি প্রাণীর ওপর পরীক্ষা ছাড়াও প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়েল হয়েছে। তবে ঠিক কত মানুষের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে। কবে থেকে কবে ট্রায়েল চালানো হয়েছে। এর ফলাফলই বা কেমন সে সম্পর্কে রাশিয়া কোন তথ্য প্রকাশ করেনি। ভ্যাকসিনের ট্রায়েলের প্রতিটি স্তরের বিষয়ে প্রসিদ্ধ কোন মেডিক্যাল জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশ করতে হয়। রাশিয়া ক্লিনিক্যাল ট্রায়েলের কোন তথ্যই এখন পর্যন্ত প্রকাশ করেনি। রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যেসব দেশ আগ্রহী মস্কো তাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। তাদের দেশে গিয়ে নিরাপত্তার বিষয় দেখার জন্য। ইতোমধ্যে সৌদি আরবের প্রতিনিধি দলকে তারা ভ্যাকসিনের কার্যকরিতা দেখার জন্য মস্কোতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। রাশিয়ান ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের প্রধান নির্বাহী কিরিল দিমিত্রিয়েভ বলেছেন, ভ্যাকসিনের তথ্য প্রকাশ না করায় অনেকের মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। চলতি মাসের শেষ নাগাদ ল্যাবরেটরিতে প্রাণীর ওপর এবং প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপে মানুষের ওপর প্রয়োগে কি ফলাফল হয়েছে তা প্রকাশ করবে আরডিআইএফ। দিমিত্রিয়েভ বলেছেন, তারা কাউকে ভ্যাকসিন গ্রহণে বাধ্য করছেন না। যারাই ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করতে চাইছে কেবলমাত্র তাদেরই এটি দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে মানুষ মারা যাচ্ছে। এখন মানুষকে রক্ষা করাই আমাদের প্রধানতম লক্ষ্য হওয়া উচিত।
×