ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার অঙ্গীকার

জিয়ার মদদ ছিল ॥ ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ১৭ আগস্ট ২০২০

জিয়ার মদদ ছিল ॥ ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা রক্তাক্ত-শোকাবহ ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত থাকার কথা পুনরুল্লেখ করে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত খুনীদের সব ধরনের মদদ দিয়েছিল এই জিয়াউর রহমান। খুনীরা নিজেরাই সাক্ষাতকার দিয়ে বলেছে যে, জিয়াউর রহমানের মদদেই তারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। শুধু জিয়াই নয়, তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও খুনীদের মদদ দেয়াসহ একই কাজ করেছে। তার স্বামী (জিয়াউর রহমান) দিয়ে গেছেন জাতির পিতার হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি, আর তিনি (খালেদা জিয়া) এসে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে তাদের ইনডেমনিটি দিয়ে গেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় (ভার্চুয়াল) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশে শপথ নিয়ে বলেন, ‘মুজিববর্ষে পিতা তোমায় কথা দিলাম, তোমার বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে আমরা হাসি ফোটাবই। এই বাংলা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলবে। এই বাংলার মানুষ উন্নত জীবন পাবে- এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা, এটাই আমাদের শপথ। প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাব, উন্নত জীবন দিতে যা করার তাই করে যাব। দেশের একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের এই আলোচনা সভায় দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্ত থেকে আলোচনায় অংশ নেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, ’৭৫-এর দুঃসময়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফি ও উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপের সভাপতিত্বে আলোচনা সভার শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্ট শহীদ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল সদস্যের রুহের মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট নীরাবতা পালন করা হয়। ১৫ আগস্টের ভয়ার হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নস্যাত করে দিতেই বঙ্গবন্ধুসহ আমাদের পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়। খুনী রশিদ, ফারুক, হুদা, ডালিম, নূর, শাহরিয়ার, মাজেদ এরা সবাই সেনাবাহিনীর সদস্য ছিল। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করতে কে তাদের মদদ দিয়েছিল? উৎসাহিত করেছিল? বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিল তার নানা তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুরই ক্যাবিনেটের মন্ত্রী বেইমান মোশতাক ও জিয়াউর রহমানরা জড়িত ছিল। অথচ এই জিয়াউর রহমানকে মেজর থেকে মেজর জেনারেল পর্যন্ত পদোন্নতি দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুই। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বিবিসিতে সাক্ষাতকার দিয়ে খুনী কর্নেল রশিদ ও ফারুক নিজেরাই বলেছে যে, জিয়াউর রহমানের মদদেই এই হত্যাকাণ্ড (বঙ্গবন্ধু) ঘটাতে তারা সক্ষম হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নিয়ম ভেঙ্গে বেইমান মোশতাককে রাষ্ট্রপতি করা হয়। আর রাষ্ট্রপতি হয়েই মোশতাক জিয়াউর রহমানকে সেনা প্রধান বানায়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গের সঙ্গে জড়িত থাকলে কেন জিয়াউর রহমানকে সেনা প্রধান হিসেবে মোশতাক বেছে নেবে? বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সব ধরনের মদদ দিয়েছিল এই জিয়াই। তিনি বলেন, বেইমান-মীরজাফররা বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারে না। মীরজাফরও তিন মাসের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেনি, খুনী মোশতাকও পারেনি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খুনীদের মদদ দেয়া, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা, বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি জারিসহ জিয়াউর রহমানের বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডের উদাহরণ তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্ট ও ৩ নবেম্বর জেল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত খুনীদের বিদেশে পাঠানো, বিদেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল এই জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের যাতে বিচার না হয় সেজন্য ইনডেমনিটি জারি করা হয়েছিল। আমাদের বিচার চাওয়ার কোন অধিকার ছিল না, সেটি পর্যন্ত কেড়ে নেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই শেষ হয়নি, বঙ্গবন্ধু পরিবারের আর কে কে বেঁচে আছে তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা কর হয়। ভয়ে আমাদের পরিবারের যারা বেঁচে ছিলেন তারা অনেকেই ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ নিষিদ্ধ করা হয়, কেউ নাম নিলে তাকে খুঁজে পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। রাষ্ট্রপতির মেয়ে হয়েও তাঁদের (শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা) নাম পরিচয় গোপন করে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছে। আর খুনীরা বিভিন্ন দূতাবাসে আরাম-আয়েশে জীবন কাটিয়েছে। সেই দৃশ্যগুলোও আমাদের দেখতে হয়েছে। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল বলেই ব্রিটিশ এমপি টমাস উইলিয়ামের নেতৃত্বে গঠিত আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটিকে বাংলাদেশে আসতে ভিসা দেয়া হয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৮০ সালের ১৬ আগস্ট লন্ডনে আমরা শোক সভা করি। সেখানে ব্রিটিশ এমপি টমাস উইলিয়ামকে প্রধান করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের জন্য একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন করা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, টমাস উইলিয়ামকে তদন্তের জন্য ঢাকায় পাঠানোর। কিন্তু তখন রাষ্ট্রপতি পদে থাকা জিয়াউর রহমান টমাস উইলিয়ামকে ঢাকায় আসতে ভিসা দেয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল বলেই ভীত হয়ে ওই তদন্ত কমিশনকে ঢাকায় আসার ভিসা দেয়নি এই জিয়া। দীর্ঘ ছয় বছর রিফিউজি হিসেবে দেশের বাইরে থাকার পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরলে তাঁকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে জিয়াউর রহমান ঢুকতে দেয়নি উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করার পর যখন দেশে ফিরে আসি, তখন আমাকে ৩২ নম্বরের বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয়নি। রাস্তায় বসে বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া-মোনাজাত করেছি। ওই সময়ের পরিস্থিতির বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়। স্বাধীনতাবিরোধী, একাত্তরের গণহত্যাকারীদের মদদদানকারী, রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের জিয়াউর রহমান প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, উপদেষ্টা বানায়, রাজনীতি করার সুযোগ দেয় এবং নিষিদ্ধ থাকা ভোটের অধিকারও তাদের ফিরিয়ে দিয়েছিল এই জিয়াউর রহমান। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলে। উচ্চ আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সেনাবাহিনীর রুলস এ্যান্ড রেগুলেশন ভঙ্গ করে একাধারে সেনা প্রধান ও রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হয়ে এই জিয়া সঙ্গীনের খোঁচায় সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে। উচ্চ আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা যে, তারা পরবর্তীতে একটা রায় দিয়ে বলেছে- ’৭৫ পরবর্তী সকল ক্ষমতা দখল অবৈধ এবং ওই সময়ে জারিকৃত অর্ডিন্যান্সগুলোও বাতিল করার আদেশ দেয়া হয়। এই রায়ের মাধ্যমে পুরো জাতিকে এক অশুভ অভিশাপ থেকে মুক্ত করেছে আমাদের উচ্চ আদালত। স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার স্ত্রী খালেদা জিয়ারও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পুরস্কৃত করার ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সারাটা জীবন এদেশের মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন। মানুষকে শোষণের হাত রক্ষা করে তাদের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য। মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কর্নেল পরবর্তী দেশটির সেনা প্রধান কর্নেল বেগের জিয়াকে লেখা একটা চিঠির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে কর্নেল বেগ ওই চিঠিতে লিখেছিল- ‘তোমার কাজের জন্য ধন্যবাদ, তোমার স্ত্রী-ছেলেরা আমাদের কাছে ভালই আছে।’ চিঠিতে জিয়াকে নতুন কাজ দেয়ার কথা বলেছিল। এর অর্থ কী? জিয়া কী ওই সময় স্বাধীনতাকে নস্যাত এবং দেশ স্বাধীন হলে ১৫ আগস্ট ঘটানোর দায়িত্ব পেয়েছিল? তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী রশিদ-ফারুককে এমপি বানিয়েছিল এবং খুনী রশিদকে বিরোধী দলের নেতা পর্যন্ত বানিয়েছিলেন। খুনীদের প্রতি খালেদা জিয়ার এত বেশি দরদ কেন? শুধু তাই নয়, পলাতক খুনী পাশাকে পদোন্নতি দিয়ে সমস্ত টাকা তার স্ত্রীকে দিয়েছিল, আরেক খুনী খায়রুজ্জামানকে অবসর থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এনে পদোন্নতি দিয়েছিল- ঠিক যখন বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের রায় বের হবে তার আগে। এসব কাজও করেছে খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রী বলেন, হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চালু করেছিল জিয়া-খালেদা জিয়ারা। ১৯টা ক্যুর মাধ্যমে নির্বিচারে হাজার হাজার সেনাবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ও সদস্যকে হত্যা করেছিল এই জিয়া। দুই থেকে আড়াই হাজার সেনা সদস্যকে ওই সময় হত্যা করা হয়, একের পর এক ক্যুর ঘটনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের সেনাবাহিনীই। সেনাবাহিনীর অনেক মায়ের কোল তারা খালি করেছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তার লাশ পর্যন্ত তখন পাওয়া যেত না। আর তখন নির্বাচনের নামেও চলেছে প্রহসন। ১০ হুন্ডা, ২০টা গুণ্ডা, নির্বাচন ঠাণ্ডা- এটাই ছিল ওই সময়ের নির্বাচন। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন। কিন্তু সবাই ভুলে গেছে যে, ২০০১ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া দেশে একের পর এক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে শত শত মানুষকে নির্বিচারে ওই সময় হত্যা করা হয়েছে। আমাদের গবেষণা কেন্দ্র (সিআরআই) কেন্দ্রে হামলা করে লুটপাট এবং তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল। তার স্বামী (জিয়াউর রহমান) দিয়ে গেছেন জাতির পিতার হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি, আর তিনি (খালেদা জিয়া) এসে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে তাদের ইনডেমনিটি দিয়ে গেছেন। সারাদেশে খুনের রাজত্ব তৈরি করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেছি, খুনীদের বিচার করেছি, রায়ও কার্যকর হয়েছে। আমরা জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। এই করোনার মধ্যেও সরকারের পাশাপাশি আমাদের নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পর্যন্ত অসহায় মানুষের পাশে ছুটে গিয়েছে, মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক আমাদের সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মানুষকে সাহায্য করতে গিয়ে কত শত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মী মৃত্যুবরণও করেছে। এর একটি সঠিক তালিকা তৈরি করা উচিত। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আর কোন রাজনৈতিক দল বা সংস্থাকে তো দেখিনি, আওয়ামী লীগের মতো করোনার এই দুঃসময়ে মানুষকে সহযোগিতা করতে গিয়ে এমনভাব অকাতরে নিজের জীবন বিলিয়ে দেয়। শুধু মানুষকে সহযোগিতাই নয়, দুঃসময়ে কৃষকের ধান কেটে মাথায় করে তা বাসায় পৌঁছে দিয়েছে আমাদের নেতাকর্মীরা। আমরা দেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম, প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৮ ভাগের ওপরে উঠেছিল। কিন্তু একটা অশুভ শক্তি করোনা শুধু আমাদেরই নয়, গোটা বিশ্বকেই থমকে দিয়েছে। যদিও ’৭৫-এর পর থেকে আমরা অশুভ শক্তির হাতেই বার বার নির্যাতিত হয়েছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের মানুষ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে মানুষ আস্থা ফিরে পেয়েছে। বাঁচার জন্য নতুন আশা পেয়েছে। সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও ফিরে এসেছে। মানুষ আবার সেই ইতিহাসকে খুঁজে পেয়েছে। যে জাতির পিতার নামকে মুছে ফেলতে চাওয়া হয়েছিল, আজকে আন্তর্জাতিকভাবে সেই নাম স্বীকৃত। যে ৭ মার্চের ভাষণ এ দেশে নিষিদ্ধ ছিল, তা আজ আন্তর্জাতিক প্রামাণ্য দলিলে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্থান পেয়েছে। মুজিববর্ষ পালনের কত আশা ছিল, করোনার কারণে পারিনি। কিন্তু মুজিববর্ষে পিতা তোমায় কথা দিলাম- দেশের একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। তোমার স্বপ্ন মানুষকে উন্নত জীবন দিতে যা যা করার তা করে যাব। দেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে- এটাই আজকের আমাদের শপথ।
×