ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সার্কাসের বানরেরা লেজ গুটিয়েছে

বিষাদের দিনে পিতাকে ফিরে পাওয়া, লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠ

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ১৬ আগস্ট ২০২০

বিষাদের দিনে পিতাকে ফিরে পাওয়া, লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠ

মোরসালিন মিজান ॥ কোথাকার কে এসে বাংলাদেশের মালিক বনে গেলো! তার পর সে কী সার্কাস। বানর নৃত্য। বেতার-টেলিভিশন দখল করে যার যা খুশি বলে যাওয়া। বয়ান। চুটপাট। মুজিব খতম। মুজিবকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ওই নাম আর নেয়া যাবে না। আহা! বাংলাদেশ যেন ওদের মামাবাড়ি। ভীতু-বর্ণচোরা রাজনীতিক, নপুংশক সেনাপতি, দুর্বল আমলা খুনীদের বুট চেটে আনুগত্যের পরীক্ষা দিল। ভাড়ায় খাটা বুদ্ধিজীবিরা দায়িত্ব নিল ইতিহাস লেখার। আরও কত কী! আর তার পর আজকের বাংলাদেশ। হা হা হা পায় যে হাসি...। হাসি আজ পাচ্ছে বৈকি। সার্কাসের বানরগুলো কোথাও আর নেই। বিদেশে পালিয়ে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। কানে ধরে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদের। ঝুলতে হয়েছে ফাঁসির দড়িতে। বলার অপেক্ষা রাখে না, নিকৃষ্টতম মৃত্যু। বাকি নেকড়েগুলো দুর দুর! ছিঃ ছিঃ নিয়েই বেঁচে আছে। আছে বটে, ফাঁসির দড়ি থেকে খুব বেশি দূরে নয়। যখনতখন গ্রেফতার ও রায় কার্যকর হতে পারে। ইতিহাস বিকৃতকারীরা বিকৃত মস্তিষ্কের ছিল, এখন তা প্রমাণিত। অন্যদিকে, যাকে শেষ করে দেয়ার এত ফন্দি, অপতৎপরতা সেই মুজিব আজ স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে ছড়িয়ে আছেন। কবির ভাষায়Ñ দীর্ঘ হ’তে-হ’তে/মানচিত্র ঢেকে দ্যায় সস্নেহে, আদরে...। আদরে ¯েœহে সোনার বাংলাকে জড়িয়ে রেখেছেন জাতির পিতা। ১৫ আগস্ট তারিখটিকে এখন মুজিবের মৃত্যুদিবস হিসেবে যতটা গণ্য করা হয়, তারও বেশি গণ্য করা হয় প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে। এবারও মৃত্যুদিনে জীবিতদের চেয়ে উজ্জ্বল মনে হয়েছে বাঙালীর নেতাকে। শনিবার হারানোর দিনে শনিবার বরং ফিরে এসেছিলেন তিনি। শতরূপে। সহ¯্র ব্যঞ্জনায়। শেখ মুজিবুর রহমান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী। শোষিত-বঞ্চিত বাঙালীকে একটি সার্বভৌম ভূখ- উপহার দিয়ে ইতিহাসের মহানায়ক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। বাঙালীর হয়ে স্বপ্ন দেখার সর্বোত্তম পুরুষকে স্বাধীনতা এনে দেয়ার মাত্র আড়াই বছরের মাথায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। হত্যাকা- থেকে পরিবারের সদস্যরাও রেহাই পায়নি। দেশী-বিদেশী শত্রুরা ভেবেছিল, শেকড়সুদ্ধ উচ্ছেদ করা গেছে মুজিবকে। অথচ ইতিহাস চলল তার নিয়মেই। গতকাল সারাদিন মৃত্যুঞ্জয়ি শেখ মুজিবকে দেখা গেল। বাংলাদেশ যার অপর নাম তাকে কী করে মুছবে? বাংলাদেশ আজ মুজিবের মানচিত্র। শোকের দিনে আত্মতৃপ্তির এ জায়গাটি আবিষ্কার করল বাঙালী। আমার বুকের গভীর ভালোবাসায়/উন্নতশির তোমার ছবি আঁকি...। প্রিয় পিতার ছবি বড় ভালবেসে বুকে এঁকে রেখেছে বাঙালী। মুজিব নামের ধ্রুবতারা একই রকম জ্বলজ্বল করছে। চিরবিদায়ের দিনে বাংলার প্রতিপ্রান্তে একটি নামই উচ্চারিত হয়েছে। নামটিÑ শেখ মুজিবুর রহমান। রাজধানী শহর ঢাকায়ও আর কেউ ছিল না। কাউকে দেখা যায়নি। ‘শেখ মুজিব’ ‘শেখ মুজিব’ ধ্বনিত হয়েছে শুধু। হ্যাঁ, করোনার কাল। সংক্রমণের ভয় এখনও দূর হয়নি। কিন্তু সব উপেক্ষা করেই পিতার প্রতি শ্রদ্ধাবনত হয়েছে মানুষ। দিনভর নানা আয়োজনের মাধ্যমে প্রিয় নেতাকে স্মরণ করেছে। শতরূপে প্রকাশিত হয়েছে ভালাবাস। সভা সমাবেশে, ব্যানারে ফ্যাস্টুনে নেতা ছিলেন। কথা কবিতায় গানে তাঁর আদর্শের কথা হয়েছে। দিনের শুরুতে কৃতজ্ঞ বাঙালী ছুটে গিয়েছিল ধানম-ি ৩২ নম্বরে। কী এক জাদুমন্ত্র টেনে নিয়ে যাচ্ছিল সবাইকে। এদিন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ির সমানে দাঁড়িয়ে দেখা যায় সাধারণ মানুষের সরব উপস্থিতি। অনেকেই শোকের কালো রঙে সেজে এসেছিলেন। হাতের মুঠোতে ধরা ছিল কাঁচা রজনীগন্ধা। গ্ল্যাডিওলাস। চন্দ্রমল্লিকা। ধীর পায়ে হেঁটে সামনের দিকে এগুচ্ছিলেন তারা। ছলছল চোখে তাকাচ্ছিলেন ঐতিহাসিক ভবনটির দিকে। শূন্য খোলা বারান্দাটি দেখা যায়। সবুজ পাতা আর সুগন্ধী ফুলেরা এখন এটিকে ঘিরে রেখেছে। ভালবাসায় জড়িয়ে নিয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকে। দেখতে দেখতে কখনও ভেতরটা গুমড়ে কেঁদে ওঠে। কখনও হেসে ওঠে মন। এই ভেবে হেসে ওঠে যে, মুজিবের নামে ঠিক ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশ। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ স্বরূপে ফিরেছে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালীর প্রতিকৃতির সামনে এখন দীর্ঘ লাইন। সেই লাইলে লম্বা সময় দাঁড়িয়ে ফুল দেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। এদিন শহরের প্রতি প্রান্ত থেকে উচ্চারিত হয় শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। ফিরে আসেন মুজিব।
×