ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শরত শুরু আজ

এসো শারদপ্রাতের পথিক, এসো শিউলি বিছানো পথে...

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ১৬ আগস্ট ২০২০

এসো শারদপ্রাতের পথিক, এসো শিউলি বিছানো পথে...

মোরসালিন মিজান ॥ এসো শারদপ্রাতের পথিক এসো শিউলি বিছানো পথে...। আবারও শিউলি ফুলে ভরে উঠছে বাগান। শুভ্র সুন্দর ফুলের ঘ্রাণে প্রিয় ঋতু শরতের আগমনী বার্তা। বাংলার প্রিয় প্রকৃতিকে নতুন করে রাঙাতে ‘অরুণ-কিরণ-রথে’ চড়ে এসেছে শরত। আজ ১ ভাদ্র রবিবার। প্রিয় ঋতু শরতের প্রথম দিন। চলবে পরের মাস আশ্বিনের শেষ দিন পর্যন্ত। পছন্দের ঋতুকে স্বাগত জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন- আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা-/নবীন ধানের মঞ্জুরী দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা।/এসো গো শারদলক্ষ্মী, তোমার শুভ্র মেঘের রথে,/এসো নির্মল নীলপথে...। যেন কবিগুরুর সেই আহ্বানে আবারও সাড়া দিয়েছে শরত। এসেছে বাংলায়। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে প্রতিটি ঋতু ভিন্ন ভিন্ন রূপ বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হয়। শরতেও নতুন করে সাজে প্রকৃতি। গ্রামে যেমন, শহরেও তা-ই। এখন গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে কাশফুলের দোলা। আর শহরের নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের ভেলা, একটু খেয়াল করুন, চোখে পড়বে। শরতের এ প্রকৃতির বর্ণনা দিতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন: আজি ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ায় লুকোচুরি খেলা রে ভাই, লুকোচুরি খেলা-/নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই- লুকোচুরি খেলা...। প্রেমের কবি নজরুলকেও আলোড়িত করেছিল শরতের প্রকৃতি। এ সময়ের সকালবেলাটির বর্ণনা দিয়ে তিনি লিখেছিলেন, শিউলিতলায় ভোরবেলায় কুসুম কুড়ায় পল্লী-বালা।/শেফালি ফুলকে ঝরে পড়ে মুখে খোঁপাতে চিবুকে আবেশ-উতলা...। শরতে শুধু প্রকৃতি নয়, মনও বদলে যায়। পরিবর্তিত হয়। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়: শরতে আজ কোন অতিথি এল প্রাণের দ্বারে।/আনন্দগান গা রে হৃদয়, আনন্দগান গা রে...। নজরুল শরতে হারানো প্রিয়াকে অনুভব করেছেন। লিখেছেন: শিউলি ফুলের মালা দোলে শারদ-রাতের বুকে ঐ/এমন রাতে একলা জাগি সাথে জাগার সাথী কই...। একইরকম বিরহ আক্রান্ত হয়ে কবি লিখেছেন: দূর প্রবাসে প্রাণ কাঁদে আজ শরতের ভোর হাওয়ায়।/শিশির-ভেজা শিউলি ফুলের গন্ধে কেন কান্না পায়...। প্রায় অভিন্ন অনুভূতির প্রকাশ ঘটিয়ে কবিগুরু লিখেছেন: আজি শরতাপনে প্রভাতস্বপনে কী জানি পরাণ কী যে চায়।/ওই শেফালির শাখে কী বলিয়া ডাকে বিহগ বিহগী কী যে গায় গো...। সব মিলিয়ে একটু ভিন্নতরই হয় শরত। প্রতি বছর নানা আয়োজনে এ ঋতুকে বরণ করে নেয় বাঙালী। রাজধানী শহরে একাধিক উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু এবার সময়টা বৈরী। করোনার কাল চলছে। ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অনেক কিছুই বন্ধ। একই কারণে আজ চারুকলার বকুল তলায় তেমন কোন আয়োজন থাকছে না। তবে অনলাইনে গানে কবিতায় শরতবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। চলবে বন্দনা। শরত উৎসবের অন্যতম আয়োজক মানজার চৌধুরী বলেন, ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো আমরা পেয়েছি রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে। কবিগুরুর চোখ দিয়ে যে শরত দেখা, তার কোন তুলনা হয় না। নতুন প্রজন্মকে আমরা সেই শরত দেখাতে চাই। বাংলার ঋতু বৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা দিতে চাই। এ চিন্তা থেকে উৎসব আয়োজন করা হয়। এটি বাঙালীর অসাম্প্রদায়িক চেতনার উৎসব। করোনাকাল শেষ হলে উৎসব আয়োজন করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
×