ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাকালের মিত্র

প্রকাশিত: ২০:২৭, ১৫ আগস্ট ২০২০

করোনাকালের মিত্র

ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাসের কারণে মানুষের মতো শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান প্রাণী মাসের পর মাস গৃহবন্দী হয়ে আছে, আর মান্ধাতা আমলের টেলিফোনের মাধ্যমে আত্মীস্বজনদের খোঁজখবর নিতে হচ্ছে- বিষয়টি যদি এমন হতো তাহলে আমাদের জীবন যে ভীষণ একঘেয়ে বিরক্তিকর ক্লান্তিকর হয়ে উঠত, এতে কোন সন্দেহ নেই। দেশে ইন্টারনেট যুগ বা ডিজিটাল যুগ শুরু হওয়ার আগের কথা ভাবলে বয়স্কদের অনেকেই বিস্মিত হন। আর এ প্রজন্মের মানুষ তো সেটি কল্পনাতেও আনতে পারবে না। পরিবারের বয়স্কদের কাছে সাবেক আমলের গল্প শুনলে আজকের বালক-বালিকারা হতবাক হয়ে যাবে। তাদের কিছুতেই বিশ্বাস হবে না যে, মুহূর্তেই সাত সাগর তেরো নদীর ওপাড়ে থাকা পরিবারের কোন সদস্যের মুখ দেখে ভিডিও কলে কথা বলার বাস্তবতা একদিন সত্যিই অনুপস্থিত ছিল। বিদেশে একটি চিঠি লিখে তার জবার পেতে সপ্তাহের পর সপ্তাহ কেটে যেত। আর এখন ইলেকট্রনিক মেইলের সুবাদে মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর অপর প্রান্তের নিকটজনের কাছে বার্তা পৌঁছে দেয়া যায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় স্মার্ট ফোন বর্তমানে মিনি কম্পিউটারের মতোই কাজ করছে। আর ইন্টারনেটের কল্যাণে ভিন্ন গোলার্ধে থাকা ব্যক্তিরা নিজের ঘরে বসেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সভা সম্পন্ন করতে সক্ষম হচ্ছেন। এমনকি করোনাকালে সেমিনারও করছেন অনলাইনে। এই ওয়েব সেমিনারের সংক্ষিপ্ত নাম হলো ওয়েবিনার। এখন কর্পোরেট হাউসগুলো, এমনকি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কাছে ওয়েবিনার হয়ে উঠেছে কর্মক্ষেত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক নিয়মিত কর্মকান্ড । এসবের জন্যই আমরা গৌরব বোধ করতে পারি। দেশ আর তথ্যপ্রযুক্তিতে পিছিয়ে নেই। ডিজিটাল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রয়েছে শক্তিশালী অবস্থান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব গুণে ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নতি ঘটে চলেছে। এখন ঘরে বসে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে একজন রোগীর পক্ষেও। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত করছেন অনলাইনে ক্লাস। যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখে পাঠগ্রহণ অসুবিধাজনক। তাছাড়াও রয়েছে ঘরের বাইরে যাওয়ার ফলে করোনাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি। তাই একটি ক্লাসের সব শিক্ষার্থী প্রযুক্তির কল্যাণে একই সময়ে একসঙ্গে শিক্ষকের ক্লাসে যোগদান করতে পারছে। আমরা কি ভেবেছিলাম ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে শত শত মামলার নিষ্পত্তি হবে? কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বৈশ্বিক পরিবর্তন ত্বরান্বিত করছে। করোনার মধ্যে আমরা জুম, গুগল মিট, মাইক্রোসফট টিম, গুগল ক্লাসরুম, সিসকোর ওয়েবেক্স, মেসেঞ্জার রুম, জিটসির মতো ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে দ্রুত পরিচিত হয়ে উঠেছি। এ বিষয়ে যথোচিত জ্ঞান ও ব্যবহারবিধি জানার আবশ্যকতা রয়েছে। এজন্য গণমাধ্যমেরও দায়িত্ব রয়েছে। প্রসঙ্গত, করোনাকালে জীবনধারাকে সচল করার অংশ হিসেবে দেশে একক প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন হিসেবে সবচেয়ে বেশি ওয়েবিনারের আয়োজন করেছে সরকারী দল আওয়ামী লীগ। প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়লে চাহিদা বাড়ে। আর সর্বকালেই মানুষের প্রয়োজনের বিষয়টিকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্ট উপকরণের দাম বাড়িয়ে দেয়। যেমন, ওয়েবক্যামের ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, সুযোগ বুঝে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে পণ্যের দাম যথেষ্ট বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রশাসন এ বষিয়ে নজর দিক এটিই প্রত্যাশা। প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর কাছে সমাজ আশা করে দায়িত্বশীলতা। যেহেতু কোন তথ্য মুহূর্তের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব, তাই তথ্য যাচাই বাছাই না করে শেয়ার দেয়া বিপজ্জনক। করোনাকালে প্রযুক্তির সুবিধা প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, পরবর্তীকালে তাতে পরিমিতি ও দায়িত্বশীলতাও যুক্ত হবে, এমনটাই প্রত্যাশা।
×