ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাদারীপুরের সততার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন কাঠমিস্ত্রি ও তার চার বছরের মেয়ে

প্রকাশিত: ১৫:২৬, ১৪ আগস্ট ২০২০

মাদারীপুরের সততার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন কাঠমিস্ত্রি ও তার চার বছরের মেয়ে

নিজস্ব সংবাদদতা, মাদারীপুর ॥ মাদারীপুরের শিবচরে সততার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন এক দরিদ্র কাঠমিস্ত্রি ও তার চার বছরের ছোট্র মেয়ে। এই দরিদ্র কাঠমিস্ত্রি বাবা ও তার ছোট্র মেয়ের সততায় হারানো টাকা ও দামী মোবাইল ফোন ফিরে পেলেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা। জানা যায়, শশুরবাড়িতে ঘর তোলার জন্য শ্যালকের দেওয়া ৫০ হাজার টাকা গোপালগঞ্জ নিজ বাড়িতে পৌছে দিতে বৃহস্পতিবার সন্ধা আনুমানিক ৬ টার দিক শিবচর থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা দেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম মাহতাফ উদ্দিন। এসময় তিনি টাকার বান্ডেল ও তার ২৬ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোবাইল ফোন ব্যাগে ভরে কাঁধে ঝুলিয়ে রাখেন। সন্ধা ৭ টার দিক তিনি ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌছে চা পানের জন্য মোটরসাইকেল থেকে নামতে গেলে ব্যাগের চেইন খোলা দেখতে পান। ব্যাগের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে দেখেন টাকা ও মোবাইল ফোন নেই। সাথে সাথে তিনি বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: রফিকুল ইসলাম, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির সাধারন সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী রবিউলসহ সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের জানান। পরে তার হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনের নম্বরে ফোন দিলে পৌরসভার নলগোড়া এলাকার এক দরিদ্র কাঠমিস্ত্রী ফারুক হাওলাদার ফোন রিসিভ করে টাকা ও মোবাইল ফোন রাস্তায় পড়ে থাকা অবস্থায় পাওয়ার কথা জানান। পরে রাতেই সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম মাহতাফ উদ্দিন, প্রাথমিক শিক্ষক কল্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী রবিউলসহ সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা কাঠমিস্ত্রী ফারুক হাওলাদারের বাড়ি পৌছে যথাযথ প্রমান দিয়ে ৫০ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোনটি ফেরত আনেন। টাকা ও মোবাইল ফোন ফেরত পেয়ে তারা দরিদ্র কাঠমিস্ত্রী ও তার ছোট্র মেয়েকে ৬ হাজার টাকা পুরস্কার হিসেবে প্রদান করেন। দরিদ্র কাঠমিস্ত্রী ফারুক হাওলাদার জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে তার মায়ের সাথে তার চার বছরের মেয়ে সাদিয়াসহ কয়েকজন পৌর কবরস্থানে নিকট আত্বীয়ের কবর জিয়ারত করতে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে ইকবল ক্লাবের মাঠ এলাকার রাস্তার পাশে টাকার বান্ডেল ও মোবাইল ফোন পরে থাকতে দেখে সাদিয়া আমার মাকে বলে। আমার মা টাকা ও মোবাইল বাড়িতে এনে আমাকে দিলে আমি মোবাইল হাতে নিয়ে বসে থাকি প্রকৃত মালিকের ফোনের অপেক্ষায়। পরে স্যার ফোন দিলে আমি বাড়িতে আসতে বলি। তারা আমার বাড়িতে এলে আমি টাকা ও মোবাইল ফোন ফেরত দেই। এসময় তারা খুশি হয়ে আমার মেয়েকে ছয় হাজার টাকা দিয়েছে। উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম মাহতাফ উদ্দিন বলেন, এই দরিদ্র কাঠমিস্ত্রি সততায় আমি সত্যি অবাক হয়ে গেছি। এমন ভাল মানুষ এখনো আছে বলেই সমাজ এখনো ভাল আছে। আমি টাকা ও মোবাইল হারিয়ে খুব দু:চিন্তায় ছিলাম। পরে ওই নম্বরে ফোন দিলে সাথে সাথেই ফারুক হাওলাদার ফোন রিসিভ করে টাকা ও মোবাইল পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। পরে তার বাড়িতে গেলে তিনি হাঁসিমুখে টাকা ও মোবাইল ফেরত দিয়েছেন।
×