ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কণ্ঠরোধ করার হাতিয়ার ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ১৪ আগস্ট ২০২০

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কণ্ঠরোধ করার হাতিয়ার ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জনগণের কণ্ঠরোধ করার হাতিয়ার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার দুপুরে উত্তরার বাসা থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। ফখরুল বলেন, টাকার বিনিময়ে করোনা সার্টিফিকেট বিক্রির কারণে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। ইতালিতে বাংলাদেশ থেকে কোন ব্যক্তিকে ঢুকতে দেয়া হয় না। নিউইয়র্ক টাইমসে নেতিবাচক প্রবন্ধ ছাপা হয় বাংলাদেশকে নিয়ে। এতে মানবাধিকার লংঘনের শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নামও উঠে আসে। সরকার কি এর দায় এড়াতে পারবেন? ফখরুল বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা হরণের সরকারি নীলনকশার চিত্র তুলে ধরছি। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই বাংলাদেশের সংবিধান আমাদের গর্বের ও অহংকারের বিষয়। বর্তমান সরকার প্রতিনিয়ত আমাদের সেই অর্জন, আমাদের স্বাধীনতার চেতনা এবং সংবিধানের পবিত্রতাকে লংঘন করছে। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ মানুষের চিন্তা-চেতনা, মত প্রকাশ ও বিবেকের স্বাধীনতাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়েছিল। কিন্তু সেই মৌলিক অধিকার, চিন্তা চেতনার অধিকার, মতপ্রকাশ ও বিবেকের স্বাধীনতাকে বৈষম্যমূলকভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অপমান করা হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, মানবাধিকার সংগঠন অধিকার এর তথ্যমতে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৫৩ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানি করা হয়েছে। প্রায় সবগুলো মামলার কমন অভিযোগ হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মত প্রকাশের জন্য সম্মানহানি বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপরাধ। এসব অভিযোগসমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সরকারি দলের লোকদের বিরুদ্ধে কথা বললে, রাজনৈতিক মত প্রকাশ করলে, সরকারের সমালোচনা করলে মামলা করা হয়েছে। যা সংবিধান লংঘনের শামিল। ফখরুল বলেন, মানবাধিকার সংস্থার তথ্য মতে, ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর রয়েছে। ২০২০ সালে ২২ জুন পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ১০৮ টি। এই সব মামলায় মোট আসামি ২০৪ জন। তাদের মধ্যে সাংবাদিক ৪৪ জন, আর অন্যান্য পেশায় কর্মরত ও সাধারণ মানুষ ১৬০ জন। ২০১৯ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে ৬৩টি। আর ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও আইসিটি অ্যাক্ট মিলিয়ে মামলা হয়েছে ৭১টি। মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে একটি মাত্র সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল আছে ঢাকায়। ডিজিটাল এবং তার আগের আইসিটি আইনের সব মামলার হিসাব আছে সেখানে। তাদের হিসাব অনুযায়ী, এ বছরের মার্চ পর্যন্ত ডিজিটাল আইনে মামলা হয়েছে মোট ৩২৭টি। তিনি বলেন, এই আইনের নগ্ন শিকার হয়েছেন সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীসহ অনেক নিরীহ মানুষ। ফখরুল বলেন, এই আইনে হয়রানির অন্যতম একটি দিক হলো, সারা দেশে একটি মাত্র সাইবার ট্রাইব্যুনাল যা ঢাকাতে অবস্থিত। এই আইনের অধীনে কোনও আপিল ট্রাইব্যুনাল এখন পর্যন্ত গঠিত হয়নি। ফলে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের কোনো ব্যক্তি বা সাংবাদিক ফেসবুকে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা করলে, তার বিরুদ্ধে মামলা সংশ্লিষ্ট থানা করলেও বিচার হয় ঢাকায় অবস্থিত একমাত্র সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে। ফখরুল বলেন, বিএনপি শুরু থেকেই থেকেই বলে এসেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটি কালো আইন। এই আইন সংবিধান বিরোধী । তাই আমরা অবিলম্বে সকল কালো আইন বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের জন্য সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারছেন না।
×