ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দ্বিতীয় ঠান্ডা লড়াই শুরু

প্রকাশিত: ২৩:৪৭, ১৪ আগস্ট ২০২০

দ্বিতীয় ঠান্ডা লড়াই শুরু

কোভিড ১৯-এর টিকা নিয়ে রাশিয়া-আমেরিকার মধ্যে দ্বিতীয় ঠান্ডা যুদ্ধ শুরু হয়েছে। উভয় বিশ্বমোড়ল এখন সবার আগে করোনা টিকা বাজারে আনার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, নবেম্বরের নির্বাচনের আগেই যুক্তরাষ্ট্র কার্যকরী করোনা টিকা তৈরি করে চমক সৃষ্টি করবে। টিকা আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার রাস্তা তৈরিতে মরিয়া। এরই মধ্য গত সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন করোনা টিকা আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে চমক তৈরি করেন। স্পুটনিক-ভি নামের এ টিকার অবশ্য তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শেষ হয়নি। পাশাপাশি কোন আন্তর্জাতিক সাময়িকীতে এ সংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশ হয়নি। তারপরও বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ স্পুটনিক-ভি নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছে। খবর রিয়া নভোস্তি, আলজাজিরা ও আনন্দবাজার অনলাইনের। ট্রাম্পের তড়িঘড়ি টিকা আবিষ্কার প্রস্তাবে মার্কিন বিজ্ঞানীরা সাফ জানিয়েছেন, এভাবে কার্যকর ও নিরাপদ টিকা আবিষ্কার অসম্ভব। নিরপেক্ষ কূটনীতিকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে রাশিয়ার টিকা আবিষ্কারের খবর পুতিন প্রশাসনের জন্য স্পুটনিক মুহূর্ত। অনেকটা বিজয়ীর মুকুট ছিনিয়ে নেয়ার মতো। রুশ কর্মকর্তারা বলছেন, ১৯৫৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দুনিয়াকে চমকে দিয়ে মহাশূন্যে প্রথম মানব পাঠিয়েছিল রাশিয়া। এই টিকা আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটন সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখল। ১৯৪৭ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত আমেরিকা ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে এই শীতল যুদ্ধ চলেছিল। এবারও পরিস্থিতি অনেকটা একই রকম। কে আগে করোনা প্রতিষেধক আনবে, তা নিয়ে এক অদৃশ্য লড়াই শুরু হয়ে গেল। এই মুহূর্তে রাশিয়া করোনা সংক্রমণ-তালিকায় চতুর্থ। আর যুক্তরাষ্ট্র প্রথম। করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশও এখন যুক্তরাষ্ট্র। রুশ টিকা নিয়ে ওয়াশিংটন বলেছে, স্পুটনিক-ভি টিকা তারা ব্যবহার করবে না। ব্রিটেনও একই কথা বলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুরু থেকে বলে আসছে, ভ্যাকসিন তৈরি নিয়ে তাড়াহুড়ো বিপজ্জনক হতে পারে। ব্রিটেনের ড্রাগ-স্পেশ্যালিস্ট আইফার আলি বলেছেন, এভাবে সুপারফাস্ট ছাড়পত্র দেয়া, এক রকম বিপদ ডেকে আনবে। জার্মান বিশেষজ্ঞ পিটার ক্রেমসনার বলেন, ‘রাশিয়ার পদক্ষেপ বেপরোয়া’। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের জেনেটিক্স বিভাগের বিশেষজ্ঞ ফ্রাঁসোয়া বালু বলেন, ‘ঠিকমতো পরীক্ষা না-করে গণ-ভ্যাকসিনেশন করা অনৈতিক।’ ইম্পিরিয়াল কলেজ লন্ডনের ইমিউনোলজির অধ্যাপক ড্যানি অল্টম্যান বলেছেন, টিকা নিয়ে ঠান্ডা লড়াই ক্ষতি ডেকে আনবে। অনেক বিশ্লেষক টিকা আবিষ্কারকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনার কৌশল হিসেবে দেখছেন। কারণ করোনা মহামারীতে রাশিয়ার অর্থনীতি অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছে। লোকজন বেকার হয়েছে। প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক টিমোথি ফ্রায়ে বলেন, সাবেক সোভিয়েত ব্লকের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়া নিরাপদ করোনা টিকা আবিষ্কারের দাবি করেছে। এ দাবি ক্রেমলিনের ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করবে। পশ্চিমা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানবদেহে পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ তথ্য ছাড়া টিকার কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না। রাশিয়ার সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের গবেষণার তথ্য হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরির অভিযোগ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যথাযথ ক্লিনিক্যাল না হওয়া সতর্ক বার্তাও ছিল। এরপরও ভøাদিমির পুতিন ভ্যাকসিনটিকে অনুমোদন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের চেষ্টায় এগিয়ে রয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। এসব দেশের ভ্যাকসিন কোথাও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে।
×