ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খুররম মমতাজ

সেই রাশিয়া

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ১৪ আগস্ট ২০২০

সেই রাশিয়া

পূর্ব প্রকাশের পর ড্রাইভিং সিটে উঠতে উঠতে বরিস বললো, ‘আন্দ্রুশা তোমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে।’ ‘কেমন আছে আন্দ্রুশা?’ আমিও ট্রাকের গা বেয়ে উঠতে উঠতে জিজ্ঞেস করলাম। ‘ভালো আছে, আজকেই তাকে দেখতে পাবে, লাঞ্চের সময়। নাতাশাও সঙ্গে আছে।’ ইঞ্জিন স্টার্ট নিয়েছে। ড্রাইভারের মাথার কাছে ছোট্ট একটা ফোকড়। তার ভিতর দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো বোরিস, বুড়ো আঙুল তুলে ইঞ্জিনের শব্দ ছাপিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘রেডি?’ আমার এক হাতে কাঠের কোদাল। অন্য হাতের আঙুল তুলে আমি জানালাম রেডি। মেশিন চলতে শুরু করলো। সামান্য সময় পরেই চিমনি দিয়ে শাওয়ারের মতো হঠাৎ গমের ধারা ঝরতে লাগলো। এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছিলাম, প্রথম ধারাটা পড়লো আমার ঠিক মাথার উপরে। রেডি থাকা সত্ত্বেও মনে হলো যেন আচমকাই ঝরতে শুরু করেছে গমের ধারা। আর এত অবিরল এই ধারা যে সরে যেতে যেতেও গোসল হয়ে গেলাম সোনালী ফসলে। ফোকড় দিয়ে আমার অবস্থা দেখে হোহো করে হাসতে লাগলো বরিস। মাথায়, গায়ে, কাপড়ে গমের দানা লেগে গেল, ঝেড়ে ফেলারও সময় পেলাম না। অতি দ্রুত উঁচু ঢিপির মতো হয়ে যাচ্ছে জায়গাটা। দ্রুত হাতে কাঠের কোদাল দিয়ে স্তূপটা সমান করতে লাগলাম। হার্ভেস্টার যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। জমিতে কোনো আল নেই, তাই থামাথামিরও নাম নাই। একটানা অনেকক্ষণ চলার পর ট্রাকের পিছনটা যখন গমের দানায় ভরে গেল, ইঞ্জিন থামালো বরিস। এতক্ষণ এদিক ওদিক তাকানোর ফুরসৎ পাইনি। এবার সোজা হয়ে চারদিকে তাকিয়ে দেখি অনেক দূরে চলে এসেছি আমরা। সামনে অন্য একটা হার্ভেস্টার ফসল কাটছে। ওটার উপরে অস্কার। দূর থেকে ও হাত নাড়লো, আমিও নাড়লাম। বেচারা কালকে অনেক রাত পর্যন্ত নাচের আসরে ছিল। কাজটা সহজ হলেও পরিশ্রম আছে প্রচুর। চলন্ত ট্রাকের উপরে দাঁড়িয়ে ব্যালেন্স ঠিক রেখে কাজ করতে হয়। এতক্ষণ টের পাইনি, এখন দেখছি অনেকক্ষণ নিচের দিকে একনাগাড়ে তাকিয়ে থাকার ফলে মাথাটা সামান্য ঘুরছে। গমের স্তূপের উপর বসলাম বিশ্রামের জন্য। ফোকড় দিয়ে পিছে তাকালো বোরিস। আমার কাজের নমুনা দেখে খুশি হয়ে বললো, ‘মালাজেশ পারিন (শাবাশ যুবক)!’ কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম আমরা। বরিস সিগারেট ধরালো, আমাকেও সাধলো। এই সিগারেটগুলো আকারে ছোট, কিছুটা পুরু। সিগারেটের অর্ধেকটায় টোবাকো ভরা, বাকি অর্ধেকটা ফাঁপা, কোনো ফিল্টার নাই, ভীষণ কড়া। আমি সিগারেট পুরোপুরি ধরিনি এখনো, শখ করে একটা দুটো খাই। বাকুতে আজিমের সঙ্গে আমার চুক্তি ছিল- ওকে মাঝে মাঝে আমি প্যাকেট কিনে দেবো, বিনিময়ে ওর প্যাকেট থেকে একটা দুটো খাবো। এখানে আজিম অন্য গ্রুপে কাজ করছে, সারাদিন দেখাই হয় না। অস্কারের সঙ্গে একই গ্রুপে কাজ করছি আমি। এই মেক্সিকানের সঙ্গে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। ওর সঙ্গে এখন আমার প্যাকেট চুক্তি চলছে, অস্কার এতে সানন্দে রাজি। বরিসের সিগারেটের অফার সবিনয়ে না করে দিয়ে আমি বললাম, ‘এত কড়া সিগারেট আমি খেতে পারি না। আপনি খান কী করে?’ গলা খুলে হাসলো বরিস। ‘শোনো যুবক। আমরা হচ্ছি রাশান মুঝিক (মরদ)।’ বললো সে, ‘কড়া জিনিসই আমাদের পছন্দ। কড়া সিগারেট, কড়া মদ, কড়া মেয়েমানুষ...!’ বলে হোহো করে হাসতে থাকে বরিস। রাশিয়ার রৌদ্র ভরা খোলা প্রান্তরে প্রতিধ্বনি তুলে ঘুরতে থাকে বরিসের হাসি। একটু পরে আবার আমরা কাজ শুরু করি। গমে ভরা কাঠের বডিটা ইঞ্জিন থেকে খুলে নেওয়া হয়। নতুন একটা ফাঁকা বডি জুড়ে দিয়ে বরিস জিজ্ঞেস করেন রেডি? আমি বলি হ্যাঁ। হার্ভেস্টার চলতে থাকে, এবারে আমি সাবধান থাকি, গম আর মাথায় পড়ে না। দুপুর পর্যন্ত চললো কাজ। তারপর লাঞ্চ ব্রেক। এখন ফসল কাটার জরুরি মৌসুম। মাঠেই চলে এলো ক্যাফেটেরিয়া। বড়সড়ো একটা বাসের ভেতরে দুপাশে বেঞ্চ পাতা। এক কোণায় রান্না করা খাবার রাখা। পালা করে কৃষকরা যাচ্ছে ভেতরে। একটা বাটিতে স্যূপ বেড়ে দিচ্ছে পরিবেশনকারিনী। স্যূপ শেষ হলে নুডুলস, সাথে দু’টুকরো মাংস। ড্রিংকস হচ্ছে ফলের রস। ঘন জুস না, পানিতে জ্বাল দেওয়া পাতলা ফলের রস। রাশান ভাষায় বলে কমপোত। খেতে খুব ভালো। আমার তেষ্টা পেয়েছিল বেজায়। খাওয়ার পর ঢকঢক করে পরপর তিন গ্লাস খেলাম। যে বয়স্কা মহিলা কমপোত ঢেলে দিচ্ছিলেন, তিনি স্নেহের গলায় বললেন, ‘তোর বুকে তো সাহারার তৃষ্ণা রে বেটা, আরেকটু নে...।’ অস্কার এলো। খাওয়ার পরে আমরা সিগারেট টানছিলাম। আন্দ্রুশা আর নাতাশা ভেতরে খাচ্ছে। ওরা ওদের কুকুরছানা বুবকার দায়িত্ব দিয়ে গেছে আমার উপর। মাংসের টুকরো দুটো আমি টিস্যুতে পেঁচিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। বুবকাকে দিলাম, ও চেটেপুটে খেলো। আন্দ্রুশা আর নাতাশা তাদের মাংসের ভাগ নিয়ে এলো- এতেই বুবকার লাঞ্চ বেশ ভালোভাবে হয়ে গেল। এই ক’দিনে বুবকার সঙ্গে আমার খুব ভাব হয়ে গেছে। ডাক দিলেই ছুটে এসে দুই পা তুলে দেয় গায়ের উপর, কোলে উঠে আসে, আবার টুপ করে নেমে ছুটতে থাকে এদিক-ওদিক। লাঞ্চ শেষে বোরিস তার ছেলে-মেয়ে দু’জনকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো। ওরা দু’জন খাবারের বাসে বুবকাকে নিয়ে চলে গেল। জানালার ধারে নাতাশার কোলে বুবকা। আমাদের সামনে দিয়ে যাচ্ছে বাস। নাতাশা বুবকার হাতটা নাড়তে নাড়তে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো- কাকাদের টাটা করে দে বুবকা, টাটা...টাটা...! কুকুরছানার মুখটা সারাক্ষণ খোলা থাকে, জিভ বের করে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেয়, দেখে মনে হয় যেন হাসছে বুবকা সারাক্ষণ। আমি খোলা জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বুবকার হাতটা ছুঁয়ে দিলাম। চোখ পিটপিটিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে আমাকে দেখতে দেখতে চলে গেল হাসিমুখের বুবকা। আবার ট্রাকের পিছনে, আবার গমের স্তূপ সমান করা। এভাবে চললো সন্ধ্যা পর্যন্ত। কাজ শেষে গোসল সেরে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। সারা গায়ে ব্যথা। দেখি অস্কারও ঘুমানোর আয়োজন করছে। বললাম, ‘কিরে আজকে নাচতে যাবি না?’ ‘না রে ভাই। আজকে আর শখ নাই।’ গমের ক্ষেতের পর আপেল বাগান, তারপর সূর্যমুখির ফুল...এভাবে একেক সপ্তাহে একেক জায়গায় কাজ। আপেল বাগানে কাজটা ছিল বেশ মজার। আপেল পাড়ো আর ইচ্ছামতো খাও। খেতে খেতে ভিওস্কি গ্রামের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে পরিচয় হলো। তাদের কয়েকজনকে অস্কার আগে থেকেই চেনে, নাচের আসরে গিয়ে তাদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে অস্কারের। ছড়িয়ে ছিটিয়ে গাছ থেকে আপেল পাড়ছি আমরা, একটা গাছে দু’জন করে। আমার সঙ্গী একটা মেয়ে। ওর নাম ইলিয়েনা। খুব সুন্দর মেয়েটা। সে হাঁটে দ্রুত, কথা বলে আরও দ্রুত, তার সব কিছুই ভীষণ দ্রুত লয়ের। প্রথম প্রথম ওর কথা বুঝতে পারি না আমি, বলি, ‘একটু ধীরে বলো ইলিয়েনা- কী যেন বলছিলে?’ ‘ও হ্যাঁ, সরি সরি! বলছি ওপাশটাতে অনেক পাকা আপেল। ওপাশে যাই চলো।’ ‘চলো।’ আমি মইটা নিই, ইলিয়েনার হাতে ঝুড়ি। ওপাশে গিয়ে তরতরিয়ে মই বেয়ে উঠে যায় ইলিয়েনা। আপেল পেড়ে আমাকে দেয় আমি ঝুড়িতে রাখি। দেখতে দেখতে ঝুড়ি ভরে যায়। তখন আমি আপেল পাড়ি, ও ঝুড়িতে রাখে। এভাবে কাজ এগোয়, কথাও এগোয়। ইলিয়েনার ভাই-বোন নেই, বাবাও নেই, শুধু মা আছেন। মা স্কুলে পড়াতেন, এখন অসুস্থ। ইলিয়েনা সেই স্কুলেই পড়ে। ও পড়ে ইলেভেন ক্লাসে। আর এক বছর লাগবে ওর শেষ করতে। ইলিয়েনার কাছেই আমি জানলাম রুশ ছেলেমেয়েরা স্কুলে এগারো বছর লেখাপড়া করে। তারপর স্কুল শেষে সরাসরি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। মাঝখানে কলেজ বলে ওদের কিছু নেই। আমাদের দু’বছর কলেজে পড়তে হয় শুনে ও একটু অবাক হয়। ওর কথা হলো আলাদা পড়ার দরকার কী? স্কুলের সঙ্গে পড়ে নিলেই তো হয়। আমার দেশের আরও অনেক কিছু শুনে অবাক হয় ইলিয়েনা। অবাক হওয়ার একটা সহজাত গুণ আছে ওর। অবাক হলে খুব সুন্দর দেখায় ওকে- সবুজ চোখ দু’টো গোল গোল হয়ে যায় মার্বেলের মতো। কাজের ফাঁকে আপেল গাছের নিচে বসেছি আমরা জিরিয়ে নেওয়ার জন্য। ইলিয়েনার সোনালী চুলগুলো একটা লাল স্কার্ফে ঢাকা। স্কার্ফটা চিবুকের নিচে গিঁট দিয়ে বাঁধা। এভাবে স্কার্ফে ঢাকা থাকায় ওর মুখটা দেখায় মাত্রুশকা পুতুলের মতো। রাশিয়ান ঐ পুতুলের ভিতরে থাকে অনেকগুলো পুতুল- মায়ের পেটে মেয়ে, মেয়ের পেটে নাতনি...এভাবে অনেকগুলো। সেই কথাটা বললাম আমি ইলিয়েনাকে- তোমাকে মাত্রুশকা পুতুলের মতো দেখাচ্ছে। ওমা! তাই নাকি? হ্যাঁ। কেন? স্কার্ফ দিয়ে মাথাটা ঢাকা আছে বলে। ও তাই বুঝি! তোমার দেশে মেয়েরা স্কার্ফ দিয়ে মাথা ঢাকে? না। ওরা ঘোমটা দেয়। ঘোমটা! সেটা কেমন? আমি মেয়েদের শাড়ি পরা নিয়ে ছোট একটা লেকচার দিলাম। সেটা কীভাবে শরীরে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে পরা হয় বললাম। কিছুটা অভিনয় করেও দেখাতে হলো। আমার অভিনয় ঘোমটা পর্যন্ত পৌঁছাতে পৌঁছাতে ইলিয়েনার হাসিও ঝর্ণার মতো হয়ে গেলো। উচ্ছ্বসিত হাসির ছোঁয়া লাগলো ওর গোলাপী গালে আর চোখের তারায়। সেদিকে তাকিয়ে আমার মনে হলো ইলিয়েনার শরীরের সব রঙ আশেপাশের প্রকৃতিতে খুঁজে পাওয়া যাবে। ওর চুলের রঙ সোনালী গমের মতো, দুই গালে পাকা আপেলের রঙ। কিন্তু চোখ দুটো কীসের মতো? ঐ অতল সবুজ রঙ গাছের পাতায় নেই, ঘাসের সবুজেও নেই, কোত্থাও নেই। আবার কাজে লেগে গেলাম আমরা। কাজ করতে করতে ইলিয়েনা বললো ওদের ‘কিনো থিয়েটারে’ (সিনেমা হলে) একবার একটা ইন্ডিয়ান সিনেমা দেখিয়েছিল। সেখানে অবশ্য শাড়ি পরা মেয়ে ছিল না। অন্যরকম পোশাক পরা মেয়েরা ছিল। বর্ণনা শুনে আমার মনে হলো হয়তো ঘাঘরা হবে। ইলিয়েনা বললো সামনের সপ্তাহে ভালো একটা মুভি দেখাতে পারে। আসবে তুমি? অবশ্যই আসবো। তবে লুকিয়ে আসতে হবে। লুকিয়ে কেন? রবিবার ছাড়া কোথাও যাওয়ার অনুমতি নাই আমাদের। ও, তাই বুঝি! ইস্ খুব খারাপ নিয়ম। খুবই খারাপ। অস্কারের লুকিয়ে নাচের আসরে যাওয়ার গল্পটা বললাম আমি ইলিয়েনাকে। মাতালের কান্ড আর বিগ জো-র ভয় পেয়ে ভূত ভূত বলে চেঁচিয়ে ওঠার কথা শুনে ও খুব হাসলো। আপেল গাছের নিচু ডাল থেকে তখন আপেল পাড়ছিল ইলিয়েনা। মইয়ের নিচের দিকে ছিল সে। আমি মইটা ধরে ছিলাম, কাছাকাছি পাশাপাশি হওয়ায় ওর শরীরের গন্ধটা পেলাম আমি- ইলিয়েনার শরীরে আপেল বনের মন মাতানো গন্ধ। দু’দিন পরে আমি আর অস্কার লুকিয়ে গেলাম সিনেমা দেখতে। অস্কার ওর গিটারটা সঙ্গে নিয়েছে। ওর বান্ধবীর নাম নাদিয়া। নাদিয়াকে পাওয়া গেল নাচের চত্বরে। অস্কারকে ওখানে রেখে আমি গেলাম সিনেমা হলের দিকে। ইলিয়েনা ওখানে থাকবে বলেছে। হলের সামনেই ওকে পেয়ে গেলাম। নামেই সিনেমা হল, আসলে খোলা আকাশের নিচে সাদা পর্দায় প্রজেক্টর দিয়ে মুভি দেখানোর ব্যবস্থা। সাদা-কালো মুভি। টিকিট লাগে না, ফ্রি। শুরু হতে তখনো কিছুটা সময় বাকি আছে। চত্বরে একটা লোক অ্যাকর্ডিয়ান বাজাচ্ছে। কাঁধে গিটার নিয়ে তার পাশে জুটে গেল অস্কার। বেশ দ্রুত তালে বাজছে বাজনা, অস্কারের গিটারও তালে তালে ঝঙ্কার তুলতে লাগলো। বাজনার তালে নাচছে কয়েকজন রাশান ছেলেমেয়ে। মেয়েদের পরনে রঙবেরঙের স্কার্ট, অনেক কুঁচি তাতে। কারো কারো মাথায় রঙিন স্কার্ফ। আলতো আঙুলে ধরা স্কার্টের প্রান্ত দ’ন্ডদিকে ছড়িয়ে পেখম তোলা ময়ূরের মতো নাচছে মেয়েরা, পার্টনারের হাত ধরে ঘুরছে, নৃত্যরত শরীর ঘিরে রঙিন স্কার্ট উড়ছে হাওয়ায় ঘূর্ণি হাওয়ার মতো- ‘হেলিয়া দুলিয়া নাচে নাগকেশরের ফুল...!’ পরের নাচটা শুরু হওয়ার আগেই অস্কার আর নাদিয়া সহ আমরা চারজন সিনেমা হলে ঢুকে গেলাম। মুভিটা খুব সিরিয়াস টাইপ। রাশিয়ান নামটা অনুবাদ করলে বাংলায় এরকম হয়- ‘বৃষ্টি পড়ে সান্তিয়াগো শহরে।’ চিলির প্রেসিডেন্ট সালভাদর আলেন্দেকে উৎখাত করেছিল সিআইএ। আলেন্দে ছিলেন সমাজতন্ত্রের অনুসারী। সিআইএর হয়ে কাজটা করেছিলো জেনারেল পিনোশে, সেনাবাহিনীর ক্যু ঘটিয়ে। সেই ঘটনা দেখানো হয়েছে সিনেমায়, একজন বিদেশি সাংবাদিকের চোখ দিয়ে। প্রেসিডেন্টের ভবন ঘিরে ফেলেছে পিনোশের সৈন্যরা। চারপাশে ট্যাংকের বহর। আলেন্দের অনুসারীরা লড়াই করছে, কিন্তু তাদের কাছে ট্যাংকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অস্ত্র নাই। হেরে গেল তারা। মারা গেলেন আলেন্দে। যারা ধরা পড়লো, তাদের অনেককে তক্ষুণি দেয়ালের পাশে দাঁড় করিয়ে গুলি করলো পিনোশের সৈন্যরা। শেষ দৃশ্যে দেখা যায় শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন সাংবাদিক। গাড়িতে রেডিও বাজছে। সামরিক জান্তার ঘোষণা শোনা গেল- প্রেসিডেন্ট নিহত হয়েছেন। সংবাদ শেষ হলে আবহাওয়ার খবরে বলা হলো সান্তিয়াগো শহরে বৃষ্টি পড়ছে- সেই থেকেই সিনেমার নাম ‘বৃষ্টি পড়ে সান্তিয়াগো শহরে’। (চলবে)
×