ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আলমগীর সাত্তার

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শেষ সাক্ষাত

প্রকাশিত: ২২:২৯, ১৪ আগস্ট ২০২০

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শেষ সাক্ষাত

প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু চ্যানেল আই টেলিভিশনে এ বছর আগস্ট মাসে প্রতিদিন প্রচারের জন্য বঙ্গবন্ধুর অতিশয় ঘনিষ্ঠজনদের ধারাবাহিকভাবে সাক্ষাতকার গ্রহণ করছেন। জুলাই ২০২০ এর একুশ তারিখ তিনি ক্যাপ্টেন শাহাবউদ্দিন বীরউত্তম এবং আমার একই সঙ্গে সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন। দু’জনার সাক্ষাতকার একই সঙ্গে করার কারণ, আমাদের অভিজ্ঞতা এবং বক্তব্য ছিল প্রায় অভিন্ন। প্রতিদিন বিশ মিনিট করে এসব সাক্ষাতকার প্রচার করা হবে। সাক্ষাতকারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিভিন্ন সময় আমাদের দেখা-সাক্ষাতের ঘটনার মধ্য থেকে যেগুলোকে আমাদের বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, সে সবের কথাই বলেছি। আমাদের সাক্ষাতকার দু’দফায় দু’দিন প্রচার করা হবে। আজ আমি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করব। তবে কেন আমরা তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলাম, তার কারণ আগে বলে নিতে হচ্ছে। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে আব্দুর রহমান মার্চেন্ট নামের ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর বয়সের এক পাকিস্তানী যুবকের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। সে দাবি করত তার বাবা-মা ছিলেন ভারতের গোয়া রাজ্যের অধিবাসী। পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রটি সৃষ্টি হওয়ার পর তারা পাকিস্তানে চলে আসে। আব্দুর রহমানের জন্ম কিন্তু গোয়া রাজ্যে। আশ্চর্যের ব্যাপার, সারাটা জীবন পাকিস্তানের করাচী শহরে বসবাস করলেও সে আমাদের মতোই সাবলীলভাবে বাংলায় কথা বলত। বিষয়টা ছিল রহস্যময়। পরিচয় হওয়ার পর জানতে পারলাম সে বাংলাদেশে এসেছে কোন ব্যবসা-বাণিজ্য করা যায় কিনা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে। তখন পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভাল ছিল না। তারপরও সে বাংলাদেশে ব্যবসা করবে কেন? এ বিষয়টাও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ! তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর থেকে আমরা তখন ফ্লাইট পরিচালনা করতাম। ফ্লাইট থাকুক বা না থাকুক পুরনো বিমানবন্দরের ক্রুরুমে আমরা নিয়মিত আড্ডা দিতাম। আড্ডা দেয়ার নামে ওখানে সকাল দশটা-এগারোটা থেকে রাত দশটা এগারোটা পর্যন্ত তাসের খেলাও চলত। ক্রুরুম সংলগ্ন ছিল বিমানবন্দরের রেস্তরাঁ। ওই রেস্তরাঁয় অর্ডার দিয়ে আড্ডার সঙ্গে খানাপিনাও চলত। একদিন তাসের আসরে উপস্থিত হয়ে দেখলাম, একজন অপরিচিত যুবক খেলায় অংশগ্রহণ করছে। পরিচিত হয়ে জানলাম, তার নাম আব্দুর রহমান মার্চেন্ট। তাসের আসরে আব্দুর রহমান কার মাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছিল, সে কথা এখন আর আমার মনে নেই। তাসের বা জুয়ার আসরে সে ছিল খুব জনপ্রিয়। সে পকেটে দশ হাজার টাকার বান্ডিল নিয়ে বসত এবং প্রায় সব টাকা লোকসান দিয়ে উঠে যেত। এতে করে খেলার অন্য অংশীদারদের বেশ লাভ হতো। ঢাকায় আব্দুর রহমান অবস্থান করত ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে। একদিন সন্ধ্যার পর ক্যাপ্টেন শাহাব এবং আমি ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আব্দুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। আমাদের ওখানে যাওয়াটা বোধহয় তাঁর কাছে অনভিপ্রেত ছিল। কিন্তু সেটা সে প্রকাশ করল না। বরং কৃত্রিম উচ্ছ্বাস দেখিয়ে আমাদের আড্ডার আসরে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানাল। আব্দুর রহমান বাংলাদেশে এসেছে ব্যবসা-বাণিজ্য করা যায় কিনা সে বিষয়ে খোঁজ নিতে। কিন্তু তার রুমে গিয়ে দেখলাম, তিনজন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন এবং মেজর পদবির অফিসার। আমার মনে প্রশ্ন দেখা দিল, সেনাবাহিনীর অফিসারদের সঙ্গে আব্দুর রহমান পরিচিত হলো কিভাবে? এবং তারাই বা এখানে কি কারণে উপস্থিত হয়েছে? আব্দুর রহমানই কেন ফাইভস্টার হোটেলে অবস্থান করে প্রতিদিন মদ-খানাপিনা ইত্যাদির জন্য এত অর্থ ব্যয় করছে? আমার মনে হচ্ছিল, আমাদের উপস্থিতির কারণে সেনাবাহিনীর অফিসার এবং আব্দুর রহমানের মধ্যকার কথাবার্তা ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় পনেরো দিন পর রাত আটটার দিকে আমি আবার আকস্মিকভাবে আব্দুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। দেখতে পেলাম, পনেরো দিন আগে যে তিনজন সেনাবাহিনীর অফিসার আব্দুর রহমানের রুমে উপস্থিত ছিলেন, ওই দিনও তারা উপস্থিত আছেন। রাত তখন নয়টা বাজে। মদ্যপানের মাত্রা পুরোদমে চলছে। সবার সামনে প্লেটে বিভিন্ন ধরনের খাবারও আছে। আব্দুর রহমান প্রশ্ন করলেন, ক্যাপ্টেন শাহাব আসেননি? মিথ্যা করে বললাম, শাহাব এবং আমাকে যতটা ঘনিষ্ঠ ভাবেন, আসলে আমরা ততটা ঘনিষ্ঠ নয়। তিনি হলেন শেখ মুজিবের অন্ধ ভক্ত। কিন্তু আমি ক্ষমতার পরিবর্তন দেখতে চাই। দেশের এমন অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। উপস্থিত তিনজন সেনা কর্মকর্তার একজন উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, খুব শীঘ্রই ক্ষমতার পরিবর্তন দেখতে পাবেন। আমি বুঝতে পারলাম, আব্দুর রহমানের ইন্টারকন হোটেলে আসর জমানোর উদ্দেশ্য। সে নিজে আমার কথা বিশ্বাস করেনি। সে জানত আমিও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠতমদের একজন শাহাব এবং আমার মধ্যে মতভেদ আছে এ কথাও সে বিশ্বাস করেনি। তাই সেনা কর্মকর্তার বেফাস কথায় সে খুব অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেল। আমি যে উত্তর খুঁজছিলাম তা পেয়ে যাওয়ায় আর ওখানে বেশি সময় ছিলাম না। বিষয়টা আমি ক্যাপ্টেন শাহাবকে বললাম। আব্দুর রহমানের সঙ্গে দেখা করার মাধ্যমে যা জানলাম তাকে আমি বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের সারকামাসট্যানশ্যল এভিডেন্স (CIRCUMSTANTIAL EVIDENCE) হিসেবে অভিহিত করতে চাই। আমাদের কাছে এমন সারকামান্টিসিয়াল এভিডেন্স আরও ছিল। তবে আমাদের কাছে কিন্তু কোন নির্দিষ্ট বা ঝচঊঈওঋওঈ ঊঠওউঊঘঈঊ ছিল না। তখন জুন মাসের মাঝামাঝি সময়। আমি এবং ক্যাপ্টেন শাহাব স্থির করলাম, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের যে সব সারকামাসট্যানশ্যল দেখা এভিডেন্স আছে তা তাঁকে বলব। সব শোনার পর তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন, কি করতে হবে। জুন মাসের পর আমরা চার/পাঁচবার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বত্রিশ নম্বরের বাড়িতে অথবা গণভবনে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলাম। প্রতিবার বঙ্গবন্ধুকে বলেছি, আপনাকে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার আছে। এ জন্য আমাদের বেশ খানিকটা সময় দিতে হবে। তিনি বলতেন, বল, কি বলবি? আমরা বলতাম আপনাকে যা বলব তা খুব একান্তে বলতে চাই। কারও উপস্থিতিতে বলব না। তিনি বলতেন, তবে দ্যাখ, আজ বড় ব্যস্ত আছি, বাসায় আসিস। বাসায় বসে শুনব। তার বাসায় গিয়ে প্রায়ই বসে থাকতাম। বঙ্গবন্ধু বাসায় ফিরতেন রাত এগারোটার দিকে। তিনি আমাদের দেখে বলতেন, দ্যাখ আজ অনেক পরিশ্রম করেছি, খুব ক্লান্ত। অফিসে আসিস। বঙ্গবন্ধুর বাসা এবং অফিসে যেতে যেতে প্রায় এক মাস কেটে গেল? কিন্তু কথা বলার সুযোগ পেলাম না। আমরা কিন্তু হাল ছাড়লাম না। বিষয়টা বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা বিষয়ক। তাকে কথাগুলো বলতেই হবে। ’৭৫ সালের ২৩ জুলাই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হলো। ওইদিন রাত দশটা থেকে বত্রিশ নম্বরের বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর বাসায় ফিরে আসার জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম। বঙ্গবন্ধু যথারীতি রাত পৌনে এগারোটা বা এগারোটায় বাসায় এলেন। আমাদের দেখে তিনি বললেন, চল ওপরে। তোরা কি বলবি তা আজ শুনতে চাই। সিঁড়ি দিয়ে আমরা বাসার তিন তলার একটি প্রশস্ত ঘরে পৌঁছলাম। ঘরটিকে একটি বৈঠকখানা আবার লাইব্রেরি ঘরও বলা যায়। ওই ঘরে চার/পাঁচজন লোকের বসার ব্যবস্থা ছিল। আমরা এবং বঙ্গবন্ধু এখানে বসলাম। শেখ শহীদও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে আমাদের জন্য একটু চায়ের ব্যবস্থা করতে বললেন। শেখ শহীদ চায়ের ব্যবস্থা করতে বেরিয়ে গেলেন। বঙ্গবন্ধুকে আমরা একান্তে পেয়ে গেলাম। কথা বঙ্গবন্ধুই শুরু করলেন। বললেন, তোরা কি বলতে চাস্ এবার বল। ক্যাপ্টেন শাহাব অকস্মাতই বললেন, বঙ্গবন্ধু আপনি কিন্তু খুন হয়ে যাবেন। কথাগুলো ও কিন্তু ইংরেজীতেই বলেছিলেন, ইউ উইল বি সøটারড্। আমিও ওই একই কথা বলতাম, হয়ত একটু নমনীয় ভাষায় এবং কিছুটা ভূমিকা রেখে। শাহাব কোন ভূমিকা না রেখেই অমনভাবে বললেন, হয়ত ভেবেছিলেন, শেখ শহীদ এসে যাবেন। বঙ্গবন্ধু শাহাবের কথায় তেমন প্রতিক্রিয়া দেখালেন না। বরং স্মিত হেসে বললেন, আমাকে আবার মারবে কে? আমাকে কেউ মারবে না। আমি এবার বললাম, বঙ্গবন্ধু বিষয়টাকে একটু গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করুন। আপনার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর একটি দল আছে। সামাদ নামের দলটি আছে, গণবাহিনী, সর্বহারা পার্টি, কট্টর চীনপন্থী দলগুলোর লোকেরা আছে। দেশটির মধ্যে অরাজকতা এবং মূল্যস্ফীতির কারণে আপনার জনপ্রিয়তা কমে গেছে। বঙ্গবন্ধু আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলেন না। সারকামাসট্যানশ্যল এভিডেন্স নিয়ে একটি কথাও আমরা বলতে পারলাম না। এরই মধ্যে চা এসে গেল। চা পান শেষে বঙ্গবন্ধু বললেন, তোরা এবার যা। তিনি বললেন, দেখিস সবকিছু সামাল দিতে পারব। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমরা শুধু বললাম, আপনার নিরাপত্তার ব্যবস্থা বৃদ্ধি করুন। তিনি বললেন, ঠিক আছে, তোরা এখন যা, রাত যথেষ্ট হয়ে গেছে। মতিঝিলে তখন বাংলাদেশ বিমানের হেড অফিস। বিমানের পাইলট এ্যাসেসিয়েশনের অফিসও তখন মতিঝিলের বিমান অফিসে। কাজ বা ফ্লাইট না থাকলে পাইলট্ এ্যাসোসিয়েশনের অফিসে যেতাম। দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার অফিসও ছিল বিমানের হেড অফিসের কাছে। ওই পত্রিকার সম্পাদক তখন শেখ ফজলুল হক মণি। মুক্তিযুদ্ধের সময় আগরতলা থেকে তাঁর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সে সম্পর্ক অনেক ঘনিষ্ঠ হয়। শেখ ফজলুল হক মণি ছিলেন খুবই মেধাবী মানুষ। তেমনি ছিলেন প্রভাবশালী। তাই মনে করলাম, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের যে বিশাল ব্যাপকতা তা বঙ্গবন্ধুকে বলতে না পারলেও সম্ভবত ফজলুল মণিকে বোঝাতে পারব। তাই বাংলার বাণী পত্রিকা অফিসে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে সব কথা বললাম। আব্দুর রহমান মার্চেন্টের কথাও বললাম। ধৈর্য নিয়ে তিনি সব কথা শুনলেন। বঙ্গবন্ধুর মতোই তিনি বললেন, চিন্তা করবেন না। সামলে নেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, তা তিনিও বললেন না। আমি চিন্তা করলাম, পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেবেন এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ফজলুল হক মণির নিশ্চয়ই আলাপ হয়েছে। তাই তাঁরা একই ধরনের কথা বললেন। মাদারীপুর জেলার তখনকার আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন আবদুর রেজা খান। তিনি সম্পর্কে আমার দুলা ভাই অর্থাৎ, চাচাত বোনের স্বামী ছিলেন। চাচাত বোনের স্বামীর সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে যতটুকু ঘনিষ্ঠতা থাকে, তাঁর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা এর চেয়ে বেশি ছিল। আমার রাজনৈতিক বুদ্ধিশুদ্ধির ব্যাপারে তাঁর আস্থা ছিল যথেষ্ট। তাই রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে তিনি প্রায়ই আমার সঙ্গে আলোচনা করতেন। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ব্যাপক ষড়যন্ত্রের কথা তাঁকেও বললাম। তাঁকে আবার মাদারীপুর জেলার গবর্নর নিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনিও বললেন, তাঁর বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু সব সামলে নিতে পারবেন। তখন নবনিযুক্ত গবর্নরদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছিল। আবদুর রেজা খান কারও কাছে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, গবর্নরদের প্রতিটি জেলায় পাঠানোর আগে পাঁচ শ’ করে সেনা সদস্য প্রতিটি জেলায় মোতায়েন করা হবে। ওসব সেনা সদস্যের থাকার ব্যবস্থার কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি জেলায় পাঁচ শ’ করে সেনা সদস্য পাঠালে ঢাকায় অবস্থানকারী সেনাবাহিনীর শক্তি খর্ব হবে। প্রত্যেক জেলায় পাঠানো সেনা সদস্যরা সরাসরি জেলা গবর্নরদের অধীনস্থ হবেন। বঙ্গবন্ধু, শেখ ফজলুল হক মণি, আবিদুর রেজা খানের সঙ্গে কথা বলে কিছুটা আশ্বস্ত বোধ করলাম। আমিও মনে করলাম, বঙ্গবন্ধু সব কিছু সামলে নিতে পারবেন। জীবনভর তিনি যথাসময়ে সঠিক সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এবার তিনি ব্যর্থ হলেন। পনেরোই আগস্ট যে ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতার ঘটনা ঘটেছিল সে কথা মনে পড়লে আমি ওই দিনকার মতোই এখনও ব্যথিত হই। ক্যাপ্টেন শাহাব এবং আমার ধারণা ছিল ষড়যন্ত্রকারীরা হয়ত বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করবে। কিন্তু বাড়ির নারী, শিশুদের সবাইকে ইতিহাসের জঘন্যতম নিষ্ঠুরতার সঙ্গে হত্যা করবে তা ভাবতে পারিনি। ১৯৭৫ সালে ষড়যন্ত্রকারী এবং অন্যদের অপপ্রচার এবং গুজব ছড়ানোর কারণে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা কিছুটা কমে গিয়েছিল, এ কথা সত্য। কিন্তু বর্তমানে মানুষ অনেক কিছু জানতে পারায় বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা ১৯৭০-৭১ সালের চেয়ে অনেক বেশি ছাড়া কম নয়। লেখক : সাবেক বৈমানিক ও মুক্তিযোদ্ধা
×