ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২২:০৭, ১৪ আগস্ট ২০২০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

আবারও এসেছে সেই বেদনার দিন। আগামীকাল শনিবার চির বেদনার, চির ক্রন্দনের ১৫ আগস্ট। এরই মাঝে শোকের ছায়া ঘনীভূত হয়েছে সারাদেশে। রাজধানী ঢাকা আরও বেশি বিষণ্ণ । কেন হবে না? এ শহরই যে নিষ্ঠুরতার রাজসাক্ষী। ১৯৭৫ সালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে নারকীয় হত্যাকা- চালানো হয়েছিল। আজ সে বাড়ি, বাড়ির সামনে দিয়ে বয়ে চলা লেক, শান্ত জলরাশি যেন শোক করছে। নেতা ছাড়াও বাড়ি ভর্তি মানুষ ছিল। একেক জনের একেক স্বপ্ন। আলাদা আলাদা চিন্তা। সব নিয়ে ঘুমাতে গিয়েছিলেন তারা। আর জেগে ওঠা সম্ভব হয়নি। এ দেশীয় বর্বরেরা সকলকে হত্যা করেছে। ঢাকার বুকে কত ঘটনাই তো ঘটেছে, এমন বিয়োগান্তক স্মৃতি জীবিত কারও আছে বলে জানা যায় না। যার বুকটাই ছিল বাংলাদেশ, সেই নেতাকে খুব কাছ থেকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করা হলো। আহা বেদনা! নেতা খুন হলেন। বাদ গেল না এমনকি নারী। এমনকি শিশু। মহাপাপে বলা চলে ঢাকা পড়েছিল ঢাকা। আজ এতকাল পর যেন প্রায়শ্চিত্ত করার প্রয়াস। সে তো আর হয় না। তবুও মনকে বোঝানোর নানা উপলক্ষ মানুষ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। বাচিক শিল্পীরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা প্রিয় কবিতাগুলো খুঁজে বের করছেন আবার। পাঠ করছেন। ফেসবুকে লাইভ চলছে অনেকদিন ধরেই। গানে গানেও মুজিব বন্দনা। শিল্পীরা প্রিয় পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে গান করছেন। হ্যাঁ, কোভিডের কাল। তাই ফেসবুকেই বেশি নিবেদন। ব্যবহারকারীরা ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচার বা কাভার ছবি পরিবর্তন করে মুজিবের ছবি যুক্ত করেছেন। স্ক্রল করলেই মহান নেতার প্রতিকৃতি। পুরনো ফটোগ্রাফে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে দেশ বরেণ্য শিল্পী শাহাবুদ্দিনের অনেক আগে আঁকা ছবিতে। সদ্য আঁকা ছবিতেও ফুটে উঠছেন বঙ্গবন্ধু। শিল্পীরা নানা চিন্তা থেকে তাঁর অবয়ব গড়ছেন। কেউ শোকটাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। কেউ আবার ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাকে বিষয় হিসেবে নিয়ে আঁকছেন চেনা শেখ মুজিবকে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালীকে নানা ব্যঞ্জনায় তুলে ধরার চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিল্পী কিরিটি রঞ্জনের বিশ্বাসের ফেসবুক প্রোফাইলে যুক্ত হয়েছে তেমনটি নতুন একখানা চিত্রকর্ম। তাতে পুরনো ফর্মে নৌকা নদী এঁকেছেন শিল্পী। আর এঁকেছেন শেখ মুজিবুর রহমানকে। এভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোগে অনলাইনে বিশেষ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। আজ শুক্রবার সেখানে থাকছে একটি তাৎপর্যপূর্ণ বক্তৃতা। জাদুঘরের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব জেনোসাইড এ্যান্ড জাস্টিস বিকেলে এ বক্তৃতার আয়োজন করবে। বিষয় : বঙ্গবন্ধু এ্যান্ড হিজ স্ট্রাগল টু এস্টাবলিশ জাস্টিস ফর জেনোসাইড ভিক্টিমস। সেন্টারের পরিচালক বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক বুদ্ধিজীবী মফিদুল হক বিষয়ের ওপর বক্তৃতা রাখবেন। এসবের বাইরে শোকের নানা প্রতীকে ভরে উঠেছে রাজধানীর অলিগলি। রাজপথ। যে শেখ মুজিব নামটি মুছে ফেলতে হবে। সে কী তোড়জোড়! রাষ্ট্রীয়ভাবে অপপ্রচার। ইতিহাস বিকৃতি। সব আজ ইতিহাসের নিকৃষ্টতম অধ্যায়ের নিচে চাপা পড়েছে। যেদিকে চোখ যায়, বঙ্গবন্ধু। মহান নেতার প্রতিকৃতি, শোকের কবিতা। মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। তেমনই গর্বে ভরে ওঠে বুক। নেতা, না, হারিয়ে যাননি। শনিবার গোটা দেশের মানুষ পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। ভালবাসা প্রকাশ করবে। ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ঢাকা। করোনা প্রসঙ্গে একটু বলা চাই। সংক্রমণ ব্যাধির ভীতি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ঢাকার কিছু ছবি দেখে তো রোগটি আছে বলেই মনে হয় না! তবে প্রভুত অগ্রগতির আভাস দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার তিনি জানান, করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমায় এ মাসের শেষ দিকে অনেক কোভিড-১৯ হাসপাতাল বন্ধ করে নন-কোভিড ঘোষণা করা হবে। একটু আশ্চর্য হওয়ার মতো ঘোষণা বটে। তবে যুক্তিও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, আমরা কিছুটা পিছিয়ে গেছি করোনার কারণে। গত ৬ থেকে ৭ মাস আমরা কাজ করতে পারিনি। এখন নন-কমিউনিকেবল ডিজিস যেগুলো আছে সেগুলোর ওপর জোর দিয়েছি। কাজকর্মও শুরু করে দিয়েছি। তার মানে, নতুন করে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ হবে এখন। এ জন্য অসংখ্য রোগী অপেক্ষা করে আছেন। অপেক্ষা শেষ হবে। তাই যেন হয়।
×