ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এক দশকে তিন হাজার মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ১৪:৩০, ১৩ আগস্ট ২০২০

এক দশকে তিন হাজার মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক দশকে তিন হাজার মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার দুপুরে উত্তারার নিজ বাসা থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। ফখরুল বলেন, সেনাবাহিনীর কক্সবাজারে অবসর প্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহাসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে সকল বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করতে হবে। তিনি বলেন, বিগত ১০ বছরে দেশের জেল কাস্টডিতে মারা গেছে ৭৯৫ জন মানুষ, গুম হয়েছে ৬০১ জন, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭ হাজার ৮০৬ জন নারী, নির্যাতিত হয়েছে ১ হাজার ৯৩৪ জন শিশু, হত্যার শিকার হয়েছে ১৮ জন শিশু । আর ২০২০ সালে ২৫ জুন পর্যন্ত ১৩৪ জন মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। এর অধিকাংশই বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী। তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে এক লাখের উপর রাজনৈতিক মামলা হয়েছে। এই চিত্র বলে দেয় লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে, লাখো মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেষ আমাদের প্রিয় জন্মভূমি আজ মৃত্যু উপত্যকা। বিএনপি মহাসচিব বলেন, অতি সম্প্রতি মেজর (অব) সিনহাকে পুলিশ হত্যা করেছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। অনেক পরিবারের সদস্যরা মামলা করতে সাহস পায় না। গর্বিত সেনাবাহিনীর একজন মেজরের এ ধরনের হত্যাকা-ের জন্য অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা, সমগ্র জাতি যেভাবে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে তাতে মেজর সিনহার পরিবার মামলা করতে সাহস পেয়েছে, বিচারপ্রার্থী হতে পারছে। আমরাও মেজর সিনহা হত্যার বিচার চাই, সকল বিনা বিচারে হত্যাকা-ের বিচার একদিন এ দেশের মাটিতে হবে সে আস্থা এবং বিশ^াস রাখি। বিচারবহির্ভূত হত্যা আমাদের জাতিকে ব্যথিত করেছে। ফখরুল বলেন, মেজর সিনহা হত্যাকা-ের পর আইএসপিআর থেকে জানানো হয়েছে যে, পুলিশের পক্ষ থেকে আশ^স্ত করা হয়েছে ভবিষ্যতে আর এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না। যদি তাই হয়, তাহলে আমরা বলতে চাই, ক্রসফায়ারে হত্যাকান্ড ঘটানো বা না ঘটানো পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ঠান্ডা মাথার সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত? এতদিন বিএনপির পক্ষ থেকে এটাই বলে আসা হয়েছে। আমরা বারবার বলেছি, ক্রসফায়ারে সাজানো গল্প সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার নীল নকশার অংশ। মেজর সিনহা হত্যাকা-ের মাধ্যমে, এই হত্যাকা-ের প্রেক্ষিত আমাদের এতদিনের দাবী- অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হল। মির্জা ফখরুল বলেন, বিনাবিচারে মানুষ খুন-গুম কখনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায় না, আমাদের সংবিধান এটাকে সমর্থন করে না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য, ভিন্নমতকে দমন করার জন্য এ ধরনের খুন-গুম-অত্যাচার- নিপীড়ন করা হয়, যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবেও গণ্য হতে পারে। তাই আমরা বারবার বলতে চেয়েছি, আজকের আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, গণতন্ত্রের বিপক্ষে গিয়ে স্বৈরাচারী পথে হেঁটে মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। তাই, দেশ আজ ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমরা এই অবস্থার অবসান চাই, বিনাবিচারে হত্যাকা- বন্ধ চাই, সাংবিধানিক শাসন চাই, খুন-গুমের রাজনীতি বন্ধ চাই, সকল বিনাবিচারে হত্যা-গুম-খুনের বিচার চাই। ফখরুল বলেন, এ সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড নিয়ে বাংলাদেশের ওপর অসংখ্য প্রতিবেদন তৈরি করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে অসংখ্য প্রতিবেদন। কিন্তু এ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সবকিছুকেই উপেক্ষা করছে।
×