ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম হওয়া নয়, দরকার কার্যকর টিকা ॥ যুক্তরাষ্ট্র

রুশ টিকা নিয়েই প্রশ্ন

প্রকাশিত: ০০:০৮, ১৩ আগস্ট ২০২০

রুশ টিকা নিয়েই প্রশ্ন

ভøাদিমির পুতিনের দেশ রাশিয়া ১৯৫৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দুনিয়াকে চমকে দিয়ে মহাশূন্যে প্রথম মানব পাঠিয়েছিল। এবারও ঠিক তাই হলো। করোনা মহামারী রুখতে প্রথম কার্যকরী টিকা আনার দাবি করেছে রাশিয়া। জাতিসংঘ, জার্মানি, ভারত ও রাশিয়ার প্রধান প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশ স্পুটনিক-ভি নামের এ টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। রাশিয়ার পাশাপাশি বহু দেশ করোনা টিকা তৈরির প্রতিযোগিতায় রয়েছে। আবার অনেক বিশ্লেষক টিকা আবিষ্কারকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনার কৌশল হিসেবে দেখছেন। কারণ করোনা মহামারীতে রাশিয়ার অর্থনীতি অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছে। লোকজন বেকার হয়েছে। প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে। কলম্বিয়া বিশ^বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক টিমোথি ফ্রায়ে বলেন, সাবেক সোভিয়েত ব্লকের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়া নিরাপদ করোনা টিকা আবিষ্কারের দাবি করেছে। এ দাবি ক্রেমলিনের ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করবে। পশ্চিমা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানবদেহে পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ তথ্য ছাড়া টিকার কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না। রাশিয়ার সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের গবেষণার তথ্য হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরির অভিযোগ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যথাযথ ক্লিনিক্যাল না হওয়া সতর্কবার্তাও ছিল। এরপরও মঙ্গলবার ভøালাদিমির পুতিন ভ্যাকসিনটিকে অনুমোদন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল না করেই ভ্যাকসিন অনুমোদন দেয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের চেষ্টায় এগিয়ে রয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। এসব দেশের ভ্যাকসিন কোথাও ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে। তবে বুধবার থেকে রুশ টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরুর কথা। যুক্তরাষ্ট্রের হেল্থ এ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসের প্রধান এ্যালেক্স এ্যাজার বলেন, ভ্যাকসিন তৈরিতে প্রথম হওয়া নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের মানুষের কাছে সেই টিকা কতটা নিরাপদ এবং কার্যকর। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এ্যান্টনি ফাউসি রাশিয়ার টিকা কতটা নিরাপদ ও কার্যকর হতে পারে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। ফাউসি বলেছেন, ‘আশা করি রুশরা টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা প্রমাণ করতে পেরেছে। তবে আমার সন্দেহ, তারা যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে তা করতে পেরেছে কি না।’ মার্কিন সংক্রামক রোগবিষয়ক জাতীয় ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফাউসি বলেন, টিকা থাকা আর টিকা নিরাপদ ও কার্যকর হওয়া আলাদা দুটি জিনিস। তিনি বলেন, ‘আমাদের এক ডজনের অর্ধেক বা তারও বেশি টিকা আছে। আমরা যদি মানুষকে অকার্যকর কিছু দিতে চাই, তাহলে সে সুযোগ রয়েছে। চাইলে এমনভাবে আমরা আগামী সপ্তাহেই টিকা আনতে পারি। তবে কাজটা এভাবে করা ঠিক হবে না।’ মার্কিন ফুড এ্যান্ড ড্রাগ এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সাবেক কর্মকর্তা গডলিয়েব রাশিয়ার তৈরি ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরাও দাবি করেছেন, রুশ ভ্যাকসিনের উপযুক্ত পরীক্ষা হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত সপ্তাহে ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে পরীক্ষার সব প্রক্রিয়া পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালনের জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল। অনুমোদন দেয়ার পর সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা ‘স্পুটনিক-ভি’ সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করতে রুশ প্রশাসনের আলোচনা করছে। রাশিয়ার তৈরি ওই টিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে ভারতের চিকিৎসকরাও। দেশটির সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ দেবকিশোর গুপ্ত বলছেন, ‘টিকা প্রয়োগ করার আগে কোন মেডিক্যাল জার্নালে সেই সংক্রান্ত গবেষণাপত্র প্রকাশ করাই রীতি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। কিন্তু টিকা প্রয়োগের আগে ফেজ থ্রি ট্রায়াল দেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু স্পুটনিক-ভি’র ক্ষেত্রে ফেজ থ্রি ট্রায়ালও অসম্পূর্ণ।’ মস্কোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে গ্যামালিয়া গবেষণা প্রতিষ্ঠান উদ্ভাবিত রুশ ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। এ বিষয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি জানি এটি সম্পূর্ণ কার্যকর একটি ভ্যাকসিন। এটির টেকসই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র টারিক জেসারাভিক বুধবার বলেন, তাদের রাশিয়ার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ’ রয়েছে। রাশিয়া আশা করছে চূড়ান্ত ধাপের পরীক্ষা শেষ করে আগামী সেপ্টেম্বর মাসেই তারা এর উৎপাদন শুরু করতে পারবে এবং এর পরপরই দেশটি তাদের দেশের হাসপাতাল স্টাফদের এ টিকা দেয়া শুরু হবে। ২০ দেশ ইতোমধ্যে এ টিকা পেতে রাশিয়ার কাছে আবেদন জানিয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্বব্যাপী সংক্রমণের সংখ্যা ২ কোটি ছাড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রধান টেড্রোস আধানম বলেন, ‘এই পরিসংখ্যান খুবই দুঃখ ও বেদনাদায়ক। তবে আমি আশার সবুজ সংকেতের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চাই।-ওয়েবসাইট
×