ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

শাকিব সমাচার

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ১৩ আগস্ট ২০২০

শাকিব সমাচার

তাকে বলা হয় বর্তমান সময়ের ঢালিউডের রাজা। ঢাকাই সিনেমার কিং খান। অভিনয়গুণে দুই বাংলার দর্শকহৃদয় মাত করেছেন। তাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দরকার পরে না। তার নামই সর্বসাধারণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তার নামে হলে ছবি উঠে, প্রযোজক লগ্নি করতে সাহস পায়। ঢাকাই সিনেমায় যে কয়জন নায়ক রয়েছেন তার মধ্যে তাকে নিয়ে সব থেকে আলোচনা চলে। কেউ কেউ মনে করেন শাকিব মানেই আলোচনা-সমলোচনা। এবার শাকিব প্রসঙ্গে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঢাকাই চলচ্চিত্রের সোনালি দিন এখন অতীত। যতই দিন গড়াচ্ছে ততই রুগ্ন হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান। তবে, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ পুরো চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি রুগ্ন হলেও তারকাদের অনেকেই ফুলে ফেঁপে উঠছেন। তারকাদের চলচ্চিত্রের শিডিউল ফাঁসানো, দেরিতে শূটিং সেটে আসা, এসবের মধ্যে চলচ্চিত্রের তারকাদের রাতারাতি সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগ তুলেছেন চলচ্চিত্রের পেছনের কারিগররা। এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ঢাকাই ছবির কিং শাকিব খানের বিরুদ্ধে। নতুনরাও তাকে অনুসরণ করে একই পথে হাঁটছে বলে অভিযোগ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের। ঢাকাই চলচ্চিত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী শাকিব খানের গেল এক যুগ ধরেই চলছে একচেটিয়া শাসন। তার অভিনয়ে মুগ্ধ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সবাই। তবে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। শিডিউল ফাঁসানোর কারণে তার অনেক ছবির মুক্তি আটকে গেছে যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চলচ্চিত্রের পরিচালক ও প্রযোজকরা। দিন কয়েক আগে বেসরকারী টেলিভিশন একাত্তর টিভির প্রতিবেদনে শাকিবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে শিডিউল ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজর নিজেই নায়কের অনিয়মের শিকার হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু“ বলেন, শাকিব খানের কাজ মানে ২০০-২৫০ জনের একটা বিশাল ইউনিট। সেই ইউনিট বসে থেকে যদি কাজ করতে না পারে তাহলে তো একজন প্রযোজকের বিশাল ক্ষতি! সেটা যদি দুই তিন দিন হয় আর না জানিয়ে হয়, তাহলে তো বিশাল লস। মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, আমরা শাকিবের দু’চারটা বিষয় যখন দেখেছি তখনই আমাদের উচিত ছিল কঠোরভাবে তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। বড় বড় প্রযোজককেই দেখেছি শাকিবের চামচামি করতে। সরি আমার এই ভাষাটা ব্যবহার করার জন্য। কিন্তু তারা করেছে। শাকিবের এই অনিয়মগুলোকে তারাই প্রশ্রয় দিয়েছে। অনেকেই ভোগান্তিতে পড়েছে। আমিও এই ভোগান্তিতে পড়েছি। আমার ‘আই লাভ ইউ’ ছবিটা ৭ বছর ধরে নির্মাণ করেছি। গুলজার মনে করেন, যদি চলচ্চিত্রের পেছনের কারিগররা শাকিবের চামচামি না করত তাহলে হয়ত সে এমনটা করার সাহস পেত না। এদিকে সম্প্রতি শাকিব খানের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন নব্বই দশকের দর্শকপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী দিলরুবা খান, গীতিকার আহমেদ কায়সার ও সুরকার আশরাফ উদাস। গত বছর ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিতে গানটির চুম্বক অংশ ‘পাগল মন মন রে, মন কেন এত কথা বলে’ চরণ দুটি ব্যবহার করেছেন ছবির প্রযোজক ও অভিনেতা শাকিব খান। এর মাধ্যমে তিনভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে মেধাস্বত্ব আইন। অনুমতিবিহীন গান ব্যবহার করায় তারা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। যদিও রফাদফা করার চেষ্টা করা হলেও তখন কোন ফলপ্রসূ হয়নি। মালেক আফসারী পরিচালিত ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটি শুরু থেকেই বিতর্কিত। রয়েছে বিদেশী ছবির নকলের অভিযোগ। দিলরুবা খানের আইনজীবী ওলোরা আফরিন সে সময় আনন্দকণ্ঠকে বলেন, ‘গণমাধ্যম সূত্রে জেনেছি নকলে অভিযুক্ত হয়ে ‘সতর্ক নোটিশপ্রাপ্ত’ হয়েছিল ‘পাসওয়ার্ড’ চলচ্চিত্রটি। ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ক্যাটাগরিতে জমা পড়েছে। কোন বিতর্কিত ছবি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ক্যাটাগরিতে বিবেচিত হতে পারে বলে আমার মনে হয় না। এ নিয়ে শীঘ্রই সেন্সরবোর্ড ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে গানের মেধাস্বত্ব বিষয়ে মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত ছবিটিকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ক্যাটাগরি থেকে নাম স্থগিতের জন্য আবেদন করব।’ এদিকে ‘অনুমতি ছাড়া একটি শব্দও ব্যবহার করলে সেটি কপিরাইট আইন লঙ্ঘন’- এমনটাই আনন্দকণ্ঠকে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার অফ কপিরাইট অফিসের (যুগ্মসচিব) জাফর রাজা চৌধুরী। তবে নতুন খবর হচ্ছে দুইপক্ষের মধ্যে এরইমধ্যে সমঝোতা হয়েছে। শাকিবের বিরুদ্ধে এখন আর কোন অভিযোগ নেই তাদের। এদিকে, করোনার দুর্দিনে কেমন আছেন শাকিবপুত্র জয় একবারও জানতে চায়নি জয়ের পিতা শাকিব খান। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে দেন না কোন ভরণপোষণ, অভিযোগ সাবেক স্ত্রী অপুর। চলচ্চিত্রপাড়ায় কান পাতলে শোনা যায় শাকিবের বর্তমানের সঙ্গে একটি নাম জড়িয়ে আছে সেটি হলো ‘বুবলী’। প্রাক্তন স্ত্রী অপু বিশ্বাসের অভিযোগ ছিল তার সংসার ভাঙনের একমাত্র কারণ ছিল বুবলী। যদিও শাকিব বুবলী প্রসঙ্গে বরাবরই বলেছেন, শুধুই সহশিল্পী। তবে অপুর বেলাতেও এমনটা বলেছিলেন। পরবর্তীতে সেই সহশিল্পীই শাকিবের বউ হয়ে ঘরে ওঠে। যদিও সেই ঘর আলোকিত হওয়ার আগেই ভেঙে যায়। এরপর একের পর এক শাকিব-বুবলী জুটি হতে দেখা যায়। তবে কি বুবলীর বেলাতেও এমনটা অপেক্ষা করছে! সম্প্রতি এমনও প্রশ্ন উঠেছে তাদের নিয়ে। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে শাহীন সুমন পরিচালিত শাকিব-বুবলীর জুটির এগারোতম ছবি ‘বিদ্রোহী’। রোজার ঈদে ছবিটি মুক্তি পাবার কথা থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে থমকে যায়। কবে নাগাত মুক্তি পাবে তাও অনিশ্চিত। বর্তমানে চলচ্চিত্রের দুটি ফ্লোর ভাঙ্গা হচ্ছে এবং এফডিসির ভেতরেই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বানানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, অথচ বিশ্বের কোথাও এমন নজির নেই! নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল শাকিবও একদিন অস্তমিত হবেন। হয়ত তার বেলাও গড়িয়েছে তাহলে ঢাকাই সিনেমার ভবিষ্যত কি?
×