ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরের ভৈরব নদে ফের দখলদারের থাবা

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ১৩ আগস্ট ২০২০

যশোরের ভৈরব নদে ফের দখলদারের থাবা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ দেশের বৃহত্তম সারের মোকাম যশোরের শিল্প, বাণিজ্য ও বন্দরনগর নওয়াপাড়ার প্রাণ ভৈরব নদ ধ্বংস করতে আবারও থাবা বসিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী নদী খেকোরা। কোনভাবেই এদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। নদীটির গলা চেপে ধরেছে এ সকল স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ী। এবার নদীর মাঝ বরাবর পর্যন্ত দখলে নিয়েছে তারা। ফলে নাব্য হ্রাস পেয়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আর যা সামাল দিতে সরকারকে শত শত কোটি টাকা গচ্ছা দিয়ে নদী ড্রেজিং অব্যাহত রাখতে হচ্ছে। নদীখেকোরা নদীর বুকে এমনভাবে থাবা বিস্তার করেছে যে সরকারের ড্রেজিং ব্যবস্থার সুফলও সম্পূর্ণরূপে ভেস্তে যাচ্ছে। আর এসব দেখেও কোন মাথা ব্যথা নেই নদীবন্দর কর্তৃপক্ষের। সরেজমিনে দেখা যায়, ইতোপূর্বে যেসব ঘাটে বাঁশের জেটি বানিয়ে মাল ওঠানামা করা হতো সেখানে বিভিন্ন ধরনে গাছের গুঁড়ি ফেলে পাইলিং করে নদীর প্রায় ২৫ থেকে ৩০ ফুট দখল করে ইট-পাথরের খোয়া দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। ভরাটকৃত জেটির ওপর লং-বুম নামক স্ক্যাভেটর স্থাপন করে কার্গো থেকে বিশেষ করে কয়লা, পাথর ও সিমেন্ট, বালি নামানো হচ্ছে। লং-বুম বসানোর জন্য প্রতিটি ঘাটে নদীর মধ্যে এ ধরনের জেটি নির্মাণ করার ফলে ভৈরব নদীর জোয়ার-ভাটা মারাত্মকভাবে বিঘœ ঘটছে। যার জন্য পলিমাটি জমে নদী পুনরায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। প্রায় দুই বছর যাবৎ কয়েক শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম শ্রেণীর নৌবন্দর হিসেবে নওয়াপাড়া বন্দরের ভৈরব নদীর মজুতখালি থেকে বসুন্দিয়রার অফরা ঘাট পর্যন্ত নদী ড্রেজিংয়ের কার্যক্রম চলছে। স্বাধীনতার পর বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি নদীবন্দর এলাকাকে আধুনিক বন্দর ও নদীর নাব্য সর্বক্ষণিক প্রবহমান রাখতে ব্যাপক কার্যক্রম চলছে। তারই আওতায় খুলনা থেকে নড়াইলের তুলারামপুর পর্যন্ত ভৈরব নদীর জোয়ার-ভাটার ¯্রােতধারা এবং যশোর শহর থেকে বুড়ি ভৈরবকে খনন করে মূল ভৈরব নদীর সঙ্গে সংযোগ করে ভৈরব নদীর ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার জন্যই ড্রেজিং ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত সচল রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিএ’র এক কর্মকর্তা জানান, নওয়াপাড়া নদীবন্দর এলাকায় পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করার পরও নদী দ্রুত পুনঃভরাট হয়ে যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নওয়াপাড়া নদীবন্দরের চেঙ্গুটিয়া লবণ মিল ঘাট, মহাকালের দ্বিপু স্টোন ঘাট, নূর সিমেন্ট ঘাট, মাস্টার ঘাট (বেগ ঘাট), মালোপাড়া ঘাট, মশরহাটির পরশ আটা-সুজি-ময়দা মিলের মালিক আনিসুর রহমান ওরফে ছোট আনিসের ঘাট, সিডল টেক্সটাইল মিলস্ ঘাটের ওপর নির্মিত ডলার ঘাট ও নওয়াপাড়ার বোয়ালমারী পোলের নিকটস্থ এলাকায় স্থাপিত জয়েন্ট ট্রেডিংয়ের নিজস্ব ঘাটে অবৈধভাবে নদীর মধ্যভাগের দিকে ২৫ থেকে ৩০ ফুট প্যালাসাইডিং করে বালুর বস্তা, ইটের টুকরা, পাথরসহ অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে জেটি নির্মাণ করে নদীর ¯্রােতকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করে রেখেছে। যে কারণে নদীর স্বাভাবিক ¯্রােত বিঘœ হয়ে সাগর থেকে আসা পলি দ্রুত ভৈরব নদীর তলদেশকে ভরাট করে ফেলছে। এভাবে চলতে থাকলে বছরের পর বছর ড্রেজিং করেও ভৈরব নদীকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি আরও জানান, বিআইডব্লিউটিএ নদীবন্দর এলাকায় বিশেষ করে ভৈরব সেতুর পাশে আনিছুর রহমান ওরফে ছোট আনিস নামের এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নদীর প্রায় মাঝ বরাবর অবৈধ দখল করে ৬ টি জেটি নির্মাণ করেছে। ফলে ভৈরব নদীর বাঁক পরিবর্তন করে নদীর স্বাভাবিক গতিকে বাধাগ্রস্ত করে নাব্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এসকল জেটির ব্যাপারে নওয়াপাড়া হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফাল্গুন ম-লের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি বলেন, নদীর ঘাটগুলোতে অটোমেটিক ক্রেন বসালে তাতে নদীর কোন ক্ষতি হবে না। অবৈধভাবে নদী দখল করে প্যালাসাইডিং জেটি নির্মাণ করার কারণে ভৈরব নদীর নাব্য দিনে দিনে ধ্বংস হয়ে যাবে। এ নদী না বাঁচলে এ বন্দরে খেটেখাওয়া প্রায় বিশ হাজার শ্রমিকের সঙ্গে জড়িত এক লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়বে। যে কারণে দ্রুত এসকল জেটি নদী থেকে অপসারণ করে নদীকে বাঁচানোর জন্য বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান তিনি।
×