ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টিকতে হবে অস্তিত্বের লড়াইয়ে

বগুড়ায় দাবদাহে হাঁসফাঁস-আমন আবাদ বাঁচাতে মাঠে কৃষক

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ১৩ আগস্ট ২০২০

বগুড়ায় দাবদাহে হাঁসফাঁস-আমন আবাদ বাঁচাতে মাঠে কৃষক

সমুদ্র হক,বগুড়া অফিস ॥ বন্যার পানি নেমে গেছে। রেখে গেছে ধ্বংসের চিহ্ন। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা; অস্বাভাবিক দাবদাহ। তাপমাত্রা কমছে না। আকাশে ছাইরঙা মেঘ জমে বিচ্ছিন্নভাবে। দুই/এক পসলা বৃষ্টি নয়। কিছুক্ষণের ছিটেফোঁটা। তারপর ভূগর্ভ থেকে উঠে আসা তাপ ও বাতাসের তাপ যোগ হয়ে নাভিশ^াস। মানবদেহে ঘাম ঝরে দরদর করে। পাখিরা ডানা ঝাপটায়। মহিষ পুকুরে নামে। কুকুর জিব বের করে লকলক করে তাকিয়ে থাকে। এরই মধ্যে আমন আবাদ বাঁচাতে কৃষককে নামতে হচ্ছে মাঠে। বগুড়ার পূর্ব-পশ্চিম দুই অঞ্চলের দুই চিত্র। যমুনা ও বাঙালীর তীরে এবং চরগ্রামে বন্যা ফসল বরবাদ করে দিয়েছে। নদী ভাঙ্গনে যাদের বসতবাড়ি গেছে তারা এখন অন্যের ভূমে বাস করছে। কেউ কেউ বাঁধে ঝুপরি বানিয়ে স্থায়ী বসত গড়েছে। কবে যমুনা চর জাগিয়ে ঠিকানা ফেরত দেবে, কেউ জানে না। বহু বছর পর চর জাগিয়ে দিলেও তা যাবে জোতদার-প্রভাবশালীর দখলে। যাদের বসতভিটা বন্যায় ডুবে গিয়েছিল তারা ফিরতে শুরু করেছে। অবকাঠামো ঠিক আছে। কঙ্কালের মতো। বাঁশ দিয়ে মেরামত না করলেই নয়। সংস্কার করতে হবে। অর্থের দরকার। হাত খালি। পকেট খালি। যাও ছিল তাও শ্যাম রাখি না কুল রাখি আর কোভিডের ধাক্কায় শেষ। এদিকে আমন আবাদ না হলে ঘরের চালে পেটের ভাত হবে না। পূর্বাংশে দ্রুত বীজতলা তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে। আউশ কিছু আছে। পাটও কিছু আছে। এই কিছু থাকলেও চলবে না। তারপর আমনের কী হবে। কৃষি বিভাগ বলেছে, তারাও বীজতলা তৈরি করেছে। কৃষকের মধ্যে দ্রুত সরবরাহ করা হবে। এই দ্রুত সময় কতদিনে! কৃষকের তর সইছে না। সইবার কথাও নয়। সরকারী কর্মকর্তারা তো আবাদ করে দেয় না। কৃষককেই নামতে হয়। ওদের দরকার সামান্য সহযোগিতা। সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনটের কৃষি কর্মকর্তাগণ জানালেন, চারা বিতরণ শুরু হয়েছে। ভাল খবর। কতদিনে সকল কৃষকের কাছে পৌঁছবে! জানালেন কোন অসুবিধা হবে না। আমন আবাদ ঘরে তুলতে পারবে কৃষক। এবার বগুড়ায় আমন লাগানোর টার্গেট করা হয়েছে একলাখ ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে। শরত দুয়ারে। শরতের সেই মেঘের দেখা এখনও মেলেনি। ভ্যাপসা গরম, তাপপ্রবাহ কোনটিই ঠাহর করা যাচ্ছে না। আবহাওয়া বিভাগের তাপমাত্রা জানানোর নতুন এক পন্থা। বলা হয়, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে অনুভূত হবে ৩৯ বা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গরমে যখন হাঁসফাঁস অবস্থা তখন ওই সেলসিয়াসের সংখ্যা দেখে কোন লাভ হয় না। কাহিল হয়ে পড়ে দেহ। কখনও নিস্তেজ। খাবার রুচি আসে না। রাতে ঘুমানোর সময় বৈদ্যুতিক পাখার বাতাস টেরই পাওয়া যায় না। মনে হবে বাতাস না আগুনের হল্কা। যাদের ঘরে এয়ারকন্ডিশনার আছে তারা ভয়ে সুইচ অন করেন না। এই অবস্থায় কারও জ¦রজারি, কাশি শুরু হলে তবেই হয়েছে। সকলের সন্দেহ কোভিড-১৯। যারা ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকেন তাদের কানে খবর গেলে এককান থেকে চার কান হয়ে তিলকে তাল করতে বেশি সময় নেয় না। চিকিৎসকের কাছে টেলি মেডিসিনে পরামর্শ নিলে তিনি সিম্পটম বুঝে ওষুধ দেন। সাবধানে থাকতে বলেন। গ্রামের মানুষের এদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তাদের কথা পরিষ্কার- খাবার উৎপাদন করতে হবে। ধান উৎপাদন না হলে কি হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বগুড়ার পশ্চিমাংশে কাহালু, নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়ায় দেখা গেল কৃষক আমন বাঁচাতে শ্যালো ইঞ্জিন মাঠে নামিয়েছে। কাহালুর কৃষক সোহেল বললেন ‘বেছন ফ্যালাইছি চারা গারতিছি পানির জন্য শ্যালো চালান লাগতিছে। আল্লায় দিলে ফসল ভালোই হবি।’ কৃষি বিভাগের কথা, বগুড়ার পশ্চিমাংশ আবাদ উদ্বৃত্ত। এখন তিন ফসল ফলে। আগে ফলত না। যমুনা, বাঙালী তীরের উর্বর মাটিতেও ফলন ভাল। এবার পলি পড়ে জৈবসার বেশি হয়েছে। দ্রুত ফসল ফলে অন্তত চারটি ফসল ফলবে। বগুড়ার লড়াকু কৃষক এখন ফসল রক্ষায় এই দাবদাহে মাঠে নেমেছে। এই লড়াই অস্তিত্ব রক্ষার।
×