ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভিনদেশী অভিনব জাত এখন বাংলাদেশে

আমের রং বেগুনি, কাঁঠাল কি না লাল !

প্রকাশিত: ২৩:০১, ১৩ আগস্ট ২০২০

আমের রং বেগুনি, কাঁঠাল কি না লাল !

মোরসালিন মিজান ॥ আমের রং বেগুনি! সত্যি বেগুনি। অনেকে এ কথা শুনে চোখ কপালে তুলবেন। বেগুনি রঙের কত কিছু হয়। হতেই পারে। তাই বলে আম? মানতে চাইবেন না। একইভাবে মানতে চাইবেন না যে, কাঁঠালের রং লাল হয়। আসলেই হয়। ওপরের ছবিগুলো লক্ষ্য করুন, না, আম কাঁঠালের গায়ে হাত দিয়ে কেউ রং মাখিয়ে দেয়নি। প্রকৃতই এমন রং। আর জাম? সাদা দেখতে! অভিনব এসব জাত অতি সম্প্রতি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। বেগুনি আম, লাল কাঁঠাল ও সাদা জাম নিয়ে দেখা দিয়েছে দারুণ কৌতূহল। চারা সংগ্রহে ব্যস্ত হয়েছেন বৃক্ষপ্রেমীরা। জানা যাচ্ছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে দেশে ঢুকেছে বেগুনি আম ও সাদা জাম। এর প্রায় তিন বছর আগে আসে লাল কাঁঠাল। এগুলো মূলত ভিয়েতনাম-থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার জাত। অন্যান্য চারার মতোই যশোরের বেনাপোল হয়ে প্রথমে বগুড়ায় আসে। সেখানে এখন বড় সংগ্রহ। মাদার গাছ তৈরি করে আম কাঁঠাল ও জামের চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। তারপর এসব চারা চলে আসছে ঢাকায়। রাজধানী শহর থেকে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের অন্যান্য প্রান্তে। বেগুনি আম রঙের দিক থেকে আরেক চেনা ফল জামের মতো। আর আকার আকৃতি ব্যানানা ম্যাংগোর সঙ্গে কিছুটা মেলে। মনে পড়ছে, জাতীয় ফল প্রদর্শনীতে ব্যানানা ম্যাংগো দেখেই ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। আম অথচ দেখতে অনেকটা সাগর কলার মতো! কৃষি কর্মকর্তা তখন জানিয়েছিলেন এটি নতুন জাত। আর এই জাতটি নতুনেরও নতুন। ব্যানানা ম্যাংগোর মতো নিচের দিকটা অত বাঁকা নয়, তবে বাঁকা। লম্বাটে। আঁটি চোখা পাতলা। খোসাও খুব পুরো নয়। খেতে বেশ মিষ্টি বলেই জানা গেছে। অবশ্য আপাতত স্বাদ নয়, গায়ের রং নিয়েই মেতেছেন সবাই। যারপরনাই কৌতূহলী। সাধারণত আমের রং হয় সবুজ হলুদ কিংবা সিঁদুরে রঙের। আর নতুন জাতের আম দেখতে জামের মতো! বিস্মিত না হয়ে উপায় কী? এদিকে, কাঁঠালের রং অনেকটা লিচুর গায়ের রঙের মতো। হাল্কা লাল। কোষও হলদেটে নয়। লালচে। জানা যাচ্ছে, কিছুকাল আগে কাঁঠালের কয়েকটি উন্নত জাত অবমুক্ত করে ভিয়েতনাম-থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া। সেগুলোর অন্যতম একটি লাল কাঁঠাল। আকারে দেশীয় কাঁঠালের চেয়ে ছোট। তবে রঙের কারণে এত আকর্ষণীয় যে, চোখ সেদিকে যাবেই। এ কাঁঠালের ভেতরের অংশ আঠালো নয়। ছোবড়া থাকে না। যা থাকে সবই কোষ। বর্তমানে দেশে এ জাতের কাঁঠাল অল্পস্বল্প পাওয়া যাচ্ছে। অভিনব ফলগুলো সম্পর্কে জানতে কথা হয় ঢাকার লিভিং আর্ট নার্সারির কর্ণধার কেএম সবুজের সঙ্গে। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, এখন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ অনেক সহজ হয়েছে। দেশীয় ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে নতুন নতুন জাতের গাছ ও চারা সংগ্রহ করছেন। এগুলো দেশে আনার পর চাষসহ নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। এর অংশ হিসেবেই এ বছর বেগুনি আম ও সাদা জাম দেশে ঢুকে বলে জানান তিনি। আর কাঁঠাল থেকে ফলও পাওয়া হয়ে গেছে। রঙিন কাঁঠাল কি নিজে খেয়েছেন? স্বাদ কেমন? জানতে চাইলে সবুজ বলেন, আমি এই কাঁঠাল খেয়েছিলাম মালয়েশিয়ায়। চমৎকার স্বাদ। আমাদের দেশের কাঁঠালের মতো রসালো নয়। তবে মিষ্টি। তখনই আমি জাতটা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলাম। আমার তিন বছর বয়সী গাছে কাঁঠালও হয়েছে। তবে গাছ আরও বড় হলে কোষ ভাল হবে। লাল কাঁঠাল গাছের চাহিদা বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, একটি গাছ এরই মাঝে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি আমি। পর্যাপ্ত পরিমাণ চারাও আছে আমাদের কাছে। এদিকে, বেগুনি আমের চারা লাল কাঁঠালের চারার তুলনায় দুর্লভ। নামকরা কিছু নার্সারিতে খোঁজ করলে পাওয়া যায়। আছে লিভিং আর্টেও। সবুজ জানান, বেগুনি আমের চারা লাগানোর তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ফলন আসবে। মাটি ভেদে রংয়ের কিছুটা তারতম্য ঘটতে পারে। গাঢ় বা হাল্কা বেগুনি হতে পারে রংটা। তা, স্বাদ কেমন? দেশে এ বিষয়ে কথা বলে তেমন কিছু জানা গেল না। তবে ভারতেও আমটি হচ্ছে এখন। সেখানকার শৌখিন চাষীরা জানিয়েছেন, স্বাদ খুব ভাল। মিষ্টি। শুধু দেখতে আকর্ষণীয় তা নয়, এটি খেতে সুস্বাদু। আশহীন। মহেশ ভাট নামের এক রিসার্চার টুইট করে জানিয়েছেন, বেগুনি রঙের আম ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য কাজে আসবে। সদ্য আসা সাদা জামের স্বাদও দেশীয় জামের মতো বলে জানা গেছে। অপেক্ষাকৃত ছোট। আকর্ষণীয় এসব গাছের চারা নিয়ে এখন চলছে সরব আলোচনা। সংগ্রহেও বিশেষ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। শৌখিন সংগ্রাহকরা কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেই এসব চারা সংগ্রহ ও রোপণ করছেন। কারণ এখনই গাছ লাগানোর মৌসুম। দেরি করলে অভিনব গাছ ও ফল পেতেও দেরি হবে !
×