ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওসি প্রদীপসহ মূল তিন আসামির জিজ্ঞাসাবাদ শুরুই হয়নি

প্রকাশিত: ২২:৫২, ১৩ আগস্ট ২০২০

ওসি প্রদীপসহ মূল তিন আসামির জিজ্ঞাসাবাদ শুরুই হয়নি

চট্টগ্রাম অফিস, স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার মোটিভ কি ছিল তা এখনও পরিষ্কার হয়নি। ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন কিলার, হুকুমদাতা, পুলিশ ফাঁড়িতে দায়িত্ব পালনকারী সংশ্লিষ্ট সদস্যরা, প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে চারজন। যাদের মধ্যে একজন জামিনে মুক্তি পেয়েছে। তার নাম সাহেদুল ইসলাম শিফাত। ঘটনার আদ্যোপান্ত এরই মাঝে স্পষ্ট হয়েছে। জেলায় পুলিশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা এসপি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনা অবহিত হয়েছেন। এ ঘটনা নিয়ে আদালতে আবেদনের পর টেকনাফ থানায় মামলা হয়েছে গত ৪ আগস্ট। এরই মাঝে অতিবাহিত হয়েছে ৮ দিন। গ্রেফতারকৃত সাত পুলিশের মধ্যে চারজনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। কিলার ও হুকুমদাতা ওসিসহ তিনজনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। তদন্ত সংস্থা র‌্যাবের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এ ঘটনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেকের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এখনও অবসরপ্রাপ্ত এ সেনা কর্মকর্তাকে কি কারণে পুলিশের চেকপোস্টে আটকিয়ে ফাঁড়ির একজন ইনচার্জ গুলিতে হত্যা করলেন- এর নেপথ্যের মোটিভ এখনও পরিষ্কার হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সিনহা হত্যাকা-ের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে ইতোমধ্যে বিভিন্ন তথ্য এসেছে। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে কোন গণমাধ্যমে এখনও পরিষ্কার হয়নি কেন এই হত্যাকা-। সিনহা হত্যাকা-ের পর দেশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য। জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্নের। প্রতিনিয়ত উঠে আসছে টেকনাফ থানায় প্রায় দুই বছর দায়িত্ব পালনকারী প্রদীপ কুমার দাশের কুকর্মের নানা কাহিনী। পুলিশ ছাড়াও ওসি প্রদীপের প্রাইভেট সোর্স ও বাহিনী ছিল। এ বাহিনীর সদস্যরা টার্গেট করে অনেককে হয়রানিতে ফেলেছে। জিম্মি করে আদায় করেছে বিপুল অঙ্কের অর্থ। চাহিদা মোতাবেক অর্থ যোগান দিতে না পারায় ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে মার্কেট-বাড়িঘর, জ¦ালিয়ে দেয়া হয়েছে মুরগির ফার্ম, ফিশিং ট্রলার। আর ওসি প্রদীপের নির্দেশে ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেছে ১৪৪টি। প্রাণ গেছে ২০৪ জনের। সিনহা হত্যাকা-ের পর মারাত্মক বেকায়দায় পড়েছেন ওসি প্রদীপসহ টেকনাফের পুরো পুলিশ প্রশাসন। শুধু তারা নন, জেলা পুলিশ সুপার, এমনকি রেঞ্জ ডিআইজিও রয়েছেন বিপদে। এছাড়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বিভিন্ন সরকারী সংস্থা। এর মধ্যে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম নিয়েও নানা আলোচনা চলছে। ৪ পুুলিশসহ ৭ জনের রিমান্ড মঞ্জুর ॥ বুধবার কক্সবাজার জেলার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ’র আদালত ৪ পুলিশসহ ৭ জনের ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন নিহত সিনহার বোনের দায়ের করা মামলার ৯ আসামির মধ্যে ৪ জন। তারা হলেন বাহারছড়ার পুলিশ ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহৃত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন ও এএসআই লিটন মিয়া। অপর ৩ জন হলেন ঘটনার পর পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী। এ তিন সাক্ষীকে এখন সিনহার বোনের দায়েরকৃত মামলায় তদন্ত সংস্থা র‌্যাব গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়ার পর তা মঞ্জুর হয়েছে। গত মঙ্গলবার টেকনাফের বাহারছড়ার মারিসবুনিয়ার এ তিন অধিবাসিকে র‌্যাব গ্রেফতার করে ওইদিনই আদালতে প্রেরণ করে। সরকারী ছুটির দিন থাকায় আদালত তাদের জেলে প্রেরণ করেন। সে সঙ্গে র‌্যাবের পক্ষে রিমান্ডের যে আবেদন ছিল তা শুনানির জন্য বুধবার দিন ধার্য করেন। একইসঙ্গে ধার্য ছিল গ্রেফতারকৃত ৪ পুলিশকে পুনরায় ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদনটিও। সেটির শুনানিও বুধবার হয়েছে। আদালত এ ৭ জনকে ৭ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন। তবে এদের কাউকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত র‌্যাব হেফাজতে নেয়া হয়নি। ওসি প্রদীপসহ মূল ৩ আসামিকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি ॥ সিনহা হত্যা মামলার প্রধান তিন আসামি কিলার এসআই লিয়াকত আলী, হুকুমদাতা তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পুলিশী মামলার বাদী এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত। এ তিনজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন আগেই মঞ্জুর করেছেন আদালত। অপর চার আসামিকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয়া হয়। র‌্যাব সে ৪ জনকে পৃথক দুদিনে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেয়েছে বলে দাবি করে পুনরায় ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়ার পর বুধবার এ ব্যাপারে ৭ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। ওসি প্রদীপসহ ৩ প্রধান আসামিকে এখনও কেন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব হেফাজতে নেয়া হচ্ছে না তা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। তবে ঢাকায় র‌্যাব সদর দফতরের মিডিয়া উইংয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কিছু জটিলতার কারণে এ তিনজনকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হয়নি। তবে সহসাই তাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তদন্ত সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, জটিলতা বলতে আইনী কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। এই মূল তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের আগে মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন, তদন্ত, সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ, ভিডিও ও অডিও রেকর্ড হাতে নেয়া এবং নিহত সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাত এবং অপর সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন নুরের বক্তব্য রেকর্ডে আনা। এসব রেকর্ড নিয়ে ওসি প্রদীপসহ অপর ৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের বক্তব্য নেয়া হবে। যাদে করে আসামিরা ঘটনাকে কোনভাবে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে না পারে। জেল অভ্যন্তরে আসামিদের নিয়ে কড়াকড়ি ॥ কক্সবাজার জেল সুপার মোকাম্মেল হোসেন জানিয়েছেন, সিনহা হত্যাকা-ের পর হত্যার সঙ্গে জড়িত ১০ জন আসামি জেল অভ্যন্তরে রয়েছে। এদের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। প্রত্যেককে রাখা হয়েছে আলাদা আলাদা সেলে। এরা যাতে কোনভাবেই একত্রিত হয়ে শলাপরামর্শ করতে না পারে সে ব্যবস্থাও বলবৎ করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি গণমাধ্যমে আসামিরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে বলে যে অভিযোগ- তিনি তা ডাহা মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, কক্সবাজার জেলা কারাগারকে ঘিরে মোবাইল নেটওযার্ক বন্ধ করা হয়েছে বহু আগে। প্রদীপসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ ॥ টেকনাফের আগে মহেশখালীতে থাকাকালীন ওসি প্রদীসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলার অভিযোগের শুনানি হয়েছে বুধবার। মহেশখালীর বহুল আলোচিত আবদুস সাত্তার হত্যার ঘটনায় আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন নিহত আবদুস সাত্তারের স্ত্রী হামিদা আক্তার। দুপুরে অভিযোগের ওপর শুনানি হয়। বিকেলে আদালত অভিযোগ আমলে নেননি। কেননা ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আবদুস সাত্তারকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে ওই সময়ে মহেশখালী থানা পুলিশ মামলা না নেয়ায় বাদী উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন। ওই সময়ে এ আবেদনকে মামলা হিসাবে গ্রহণ করার জন্য উচ্চ আদালত নির্দেশনা প্রদান করেন। উচ্চ আদালতের এ নির্দেশ নিয়ে ওই বছরের ১৭ জুলাই কক্সবাজারের এসপিকে লিখিত আবেদন দেয়া হয়। কিন্তু পুলিশ আবেদনটি আমলে নেয়নি। ফলে নিহত আবদুস সাত্তারের স্ত্রী হামিদা আক্তার বুধবার একই বিষয়ে জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুনঃআবেদন জানান। কিন্তু শুনানি শেষে আদালত তা আমলে না নিয়ে নথিভুক্ত করেন। আদালতের বিচার আব্বাস উদ্দিন এ সংক্রান্ত আদেশে বলেছেন, এ ঘটনা নিয়ে উচ্চ আদালতে দায়েরকৃত রিট রয়েছে। ুপুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় মামলা ॥ স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার থেকে জানান, পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সদরের খরুলিয়ার মাদক কারবারি নবী হোসেন মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে ১২ জনকে। মঙ্গলবার রাতে নিহত নবী হোসেনের ভাই আলী হোসেন বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এজাহারভুক্ত আসামিরা হচ্ছে-এরশাদ উল্লাহ, মোঃ শরীফ উদ্দীন মেম্বার, আনোয়ার হোসেন, ও হামিদ উল্লাহ প্রকাশ কালুসহ ১২ জন। সোমবার দুপুরে খরুলিয়া বাজায় খুচরা ইয়াবা বিক্রির সময় স্থানীয় লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে নবী হোসেনকে আটক করার চেষ্টা করলে সে ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ছুরি, নগদ ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা ও ১৩ পিস ইয়াবাসহ পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয়রা। পুলিশ আহত ওই ইয়াবা ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে থানায় নিয়ে যায়। মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে অসুস্থবোধ করলে তাকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সকাল ৯টার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
×