ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জীবন বাঁচাতে যে কোন উৎস থেকে করোনার টিকা আনতে হবে

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ১৩ আগস্ট ২০২০

জীবন বাঁচাতে যে কোন উৎস থেকে করোনার টিকা আনতে হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জীবন বাঁচাতে বিশ্বের যে কোন উৎস থেকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের টিকা বা ভ্যাকসিন আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যারাই টিকা তৈরি করবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই টিকা আগে নিয়ে আসা হবে। শুধু তাই নয়, টিকার জন্য একটি সোর্সের ওপর নির্ভর না করে একাধিক সোর্স থেকে টিকা সংগ্রহের পরামর্শ দিলেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায় করবে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন বা কেইসি। দেশের ৩০ পৌরসভায় পানি সরবরাহে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হবে। বুধবার অনলাইন জুমে সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও অর্থনৈতিক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, করোনার টিকা যেকোন সোর্স থেকে সংগ্রহ করতে সরকারের বরাদ্দ রাখা আছে। আমরা যদি সরাসরি অক্সফোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি তাহলে ভারতের সহযোগিতা নিয়ে যৌথভাবে টিকা আনার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এক সোর্সের ওপর নির্ভর না করে একাধিক সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বলেছি। ইতোমধ্যে রাশিয়ার টিকা পাওয়ার জন্য সে দেশের সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। করোনার টিকা বিষয়ে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী জানান, টিকার বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিবেন। ইতোমধ্যেই দেখেছি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে অগ্রিম টাকা পয়সাও দিয়েছে। আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সে কথাই বলেছি আমাদেরও সে ধরনের ব্যবস্থায় যেতে হবে। মুস্তফা কামাল আরও বলেন, করোনার টিকা আমাদের লাগবে। এই টিকা যেকোন সোর্স থেকে আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এখনই নেয়া প্রয়োজন। পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায় করবে কোরিয়ার কেইসি ॥ স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ করে আনা হয়েছে। পৃথিবীর দীর্ঘতম সেতুর একটি হচ্ছে পদ্মা সেতু। এই সেতু খুলে দেয়ার পর কিভাবে এর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায় হবে সে বিষয়ে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণ কাজ শেষে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশনকে (কেইসি) নিয়োগ দিচ্ছে সরকার। অটোমেশন পদ্ধতিতে এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টোল আদায়ে একটি মাইলফলক সৃষ্টি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই রাষ্ট্রীয় জরুরী প্রয়োজনে এবং জনস্বার্থে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে কেইসকে নিয়োগের নিমিত্ত পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ এর ৭৬(২) বিধিতে উল্লিখিত মূল্যসীমার উর্ধে ক্রয়ের প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী জুম প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্রিফিং এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, পৃথিবীর সব দেশে ঘর থেকে বের হলে কোন না কোনভাবে সরকারকে টোল দিতে হয়। ব্রিজ, রাস্তাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও টোল দিতে হয়, যাতে করে এগুলো মেনটেইন করা যায়। আমাদের দেশের এ ব্যবস্থাটি এখনও চালু করতে পারিনি। যেসব ক্ষেত্রে চালু রয়েছে সেগুলো ম্যানুয়ালি। তাই মানুষজন অনেক কষ্ট পায়। সেগুলো এখনও আমরা অটোমেশন করতে পারিনি। তিনি বলেন, এটি যদি আমরা পদ্মা সেতু দিয়ে শুরু করতে পারি সে চেষ্টা করা হচ্ছে। এ কাজের কেইসিকে কন্ট্রাক দেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কেইসি কোরিয়ার অলমোস্ট সমস্ত টোল ম্যানেজ করে। আমরা টোল ব্যবস্থাপনায় পিছিয়ে রয়েছি, যদি এদের আমরা পাই তাহলে টোল ব্যবস্থাপনায় একটা মাইলফলক সৃষ্টি হবে। সেজন্য জাতীয় স্বার্থে আমরা এ প্রস্তাবটি অনুমোদন দিয়েছি। দেশের ৩০ পৌরসভায় পানি সরবরাহে পরামর্শক নিয়োগ ॥ দেশের ৩০টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন প্রকল্প বাস্তবায়নে যৌথভাবে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠান তিনটি হচ্ছে ডেভ কনসালটস, বিইটিএস কনসালটিং সার্ভিস এবং ম্যাস বাংলা কনসালটিং লিমিটেড। এদের নিকট থেকে পরামর্শক সেবা নিতে সরকারের খরচ হবে ৩৮ কোটি ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। অর্থমন্ত্রী বলেন, ৩০টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন প্রকল্পে পরামর্শক সেবার জন্য ডেভ কনসালটস, বিইটিএস কনসালটিং সার্ভিস এবং ম্যাস বাংলা কনসালটিং লিমিটেডকে যৌথভাবে নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে সরকারে ব্যয় হবে ৩৮ কোটি ২ লাখ ৬০ হাজর টাকা। তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্পের সঙ্গে আমাদের ডেভেলমেন্ট পার্টনাররা জড়িত রয়েছে। তারাও এসব পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিষয়ে মত দিয়েছে। ৩০ হাজার টন সার আমদানি ॥ চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশের কাছ থেকে চুক্তিবদ্ধ সাড়ে ৫ লাখ টনের মধ্যে ২য় লটে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতি টন ইউরিয়া সার ব্যাগিং চার্জসহ এফওটি মার্কিন ডলার ২২৬ হিসেবে মোট ৬৭ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার এর সমপরিমাণ বাংলাদেশী মুদ্রায় ৫৭ কোটি ৫৯ লাখ ৬১ হাজার টাকা ব্যয়ে আমদানি করা হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনায় ২০২০-২১ অর্থবছরের চাহিদা অনুযায়ী মিনি পিক সিজন, মিনি পিক সিজন, পরবর্তী অফ পিক সিজন এবং পিক সিজনে নিরবচ্ছিন্নভাবে সার সরবরাহের লক্ষ্যে অনুমোদিত সংগ্রহ পরিকল্পনা মোতাবেক কাফকো-বাংলাদেশ হতে সার আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ২য় লটের ভেলিডিটির মেয়াদ আছে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত। এছাড়া সভায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায় আড়িয়াল খাঁ নদীতীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং শীর্ষক প্রকল্পের কাজসমূহ রাষ্ট্রীয় জরুরী প্রয়োজনে পিপিএ-২০০৬ এর ধারা ৬৮(১) ও পিপিআর-২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) অনুসারে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) অনুসরণে বাস্তবায়নের প্রস্তাব শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ প্রস্তাবটি আমরা সরাসরি অনুমোদন দিতে পারিনি। তবে শর্ত সাপেক্ষে তাদের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রথম শর্ত হচ্ছে একনেকে যে প্রাইস নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে তা বাড়ানো যাবে না।
×